স্বৈরাচারের পতনের পর সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা বাতিল করা হয় : তথ্যমন্ত্রী
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার যে দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, সেই বিধান সামরিক সরকার এরশাদের ক্ষমতার পতনের পর পরই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি আরো বলেন, এর পর থেকে সেনাবাহিনী শুধু নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে, তাদের কোনো বিচারিক ক্ষমতা ছিল না।
কুষ্টিয়ায় সার্কিট হাউসে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোল পাল্টালেও, বেশভুষা পরিবর্তন করলেও আলমের পচা সাবান দিয়ে ধুলেও তাঁর শরীর থেকে পোড়া মানুষের গন্ধ দূর হবে না। কোনো আগুন-সন্ত্রাসীকে কোনো ভোটই রেহাই দেবে না।’
‘৭১-এর খুনি, ৭৫-এর খুনি ও ২১ আগস্টের খুনির মতোই আগুন-সন্ত্রাসীদের এবং আগুন-সন্ত্রাসের নেতা, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন যে খালেদা জিয়া; তাঁকে কোনো দায়মুক্তি দেওয়া হবে না। যদি দেশের মঙ্গল চান, আমি জনগণের উদ্দেশে বলব, কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে আর আগুন-সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদীদের ক্ষমতা দেওয়া যায় না।’
‘মনে রাখবেন এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই খালেদা জিয়ার প্রার্থীরা করপোরেশন নির্বাচন করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন।’ বলেন হাসানুল হক ইনু।
সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার যে দাবি খালেদা জিয়া করেছেন, এ প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতনের পর খালেদা জিয়ার দলসহ আমরা সবাই মিলে সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচারিক ক্ষমতার যে বিধান সামরিক সরকাররা তৈরি করেছিল, সেই বিধানটা আমরা বাতিল করে দিই। সেটার শরিক খালেদা জিয়ার দল এবং আমরা সবাই।’
‘তার পর থেকে সেনাবাহিনী কোনো বিচারিক ক্ষমতা গ্রহণ করে না, বরং নির্বাচনে প্রয়োজনবোধে কমিশনের অনুরোধে যখন যেখানে যেভাবে দরকার, সেভাবেই সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনে সহযোগিতা করে থাকে। সুতরাং সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে বসে আছে, নাকি বিডিআর গেটের সামনে বসে আছে, নাকি নিউমার্কেটের গেটে বসে আছে- এটা নিয়ে কমিশনই ভাববেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে কোনো বাধা-বিপত্তি হচ্ছে কি না। মনে রাখবেন, এখন পর্যন্ত যাঁরা প্রার্থী তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে-নিরাপদে-নির্বিঘ্নে প্রত্যেকে প্রচার চালাচ্ছেন। সমস্যা দেখা দিয়েছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে, যিনি প্রার্থী নন, যিনি সদ্য আগুন-যুদ্ধ থেকে উনি দম ফেলার জন্য নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন এবং উত্তেজনা তৈরি করছেন আর কি, সেটা প্রশাসন দেখছে। মনে রাখবেন, খালেদা জিয়া কিন্তু আগুন-যুদ্ধের জঙ্গিনেত্রী। খালেদা জিয়াকে জবাবদিহি করতে হবে এবং সেই জবাবদিহি আদালতের বারান্দায় করতে হবে।’
নারী লাঞ্ছনাকারীদের জানোয়ার হিসেবে উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, তেমনি নারী নির্যাতনকারীদেরও একচুল ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেককে শনাক্ত করে কঠোর সাজা দেওয়া হবে।’
এ সময় তথ্যমন্ত্রীর সাথে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিব-উল ফেরদৌস, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।