বালু বেশি, সিমেন্ট কম, হলে ফাটল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবনির্মিত মতিহার হল নির্মাণের সময় বালু বেশি ও সিমেন্ট কম দেওয়ায় একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির দুই সদস্য আজ বুধবার এ কথা জানিয়েছেন।
গত শনি ও রোববারের ভূমিকম্পে মতিহার হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন এবং প্রশাসনিক ভবন-১-এ ফাটল দেখা যায়। ওই ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
তবে ফাটলগুলো তেমন গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউনুস আহমদ খান এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. সিরাজুম মুনীর।
সিরাজুম মুনীর বলেন, ‘আমরা হল ঘুরে দেখেছি। কিছু জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। কিছু স্থানে বালুর পরিমাণ একটু বেশি ছিল, যার কারণে সেখানে পলেস্তারা উঠে গেছে। কিন্তু সেগুলো গুরুতর নয়। শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছে দেব। পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ইউনুস আহমদ খান বলেন, ‘ফাটল ভবনগুলোর মধ্যে মতিহার হলে একটু বেশি জায়গায় ফাটল ধরেছে। তবে সেগুলো শুধু উপরের পলেস্তারা। ভেতরেও ফেটেছে বলে মনে হচ্ছে না। এ হলের ১০২ নম্বর কক্ষসহ দোতলা ও তিনতলার কিছু কিছু কক্ষে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সাতটি পিলারের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শুধু ইট দিয়ে এগুলো তৈরি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় সিমেন্ট কম পড়েছে বলেও মনে হচ্ছে।’
হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে কি না—জানতে চাইলে ইউনুস আহমদ খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হোক, আমরা তা চাই না। হলটি পরিত্যক্ত করার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। যে ফাটলগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো মেরামত করা সম্ভব।’
নির্মাণাধীন হলে ফাটলের ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার বিষয়টি তো এত সহজ নয়। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পর ১৯৫৫ সালে মতিহার হল নির্মিত হয়। শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালে নতুন হল নির্মাণের জন্য এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিন বছরের মধ্যে চারতলা হল নির্মাণ করার কথা থাকলেও ২০১১ সালে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ করা হয়। এর পর অসমাপ্ত ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২০১১ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সাইদুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানি’ বাকি কাজের দরপত্র নেয়। তারা তৃতীয় তলার কাজ শেষ করলেও চতুর্থ তলার কাজ শেষ করেনি। বর্তমানে নিচতলা ও দোতলার ৩৬টি কক্ষে ১৪৪ শিক্ষার্থী থাকেন।