নিয়ন্ত্রণহীন রুশ মহাকাশযান ধেয়ে আসছে পৃথিবীতে
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি চালকবিহীন রাশিয়ান পরিবহন মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। রুশ মহাকাশ সংস্থার কর্মকর্তা সের্গেই স্তাবলিনের বরাতে গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এএফপির খবরে রুশ মহাকাশ সংস্থার ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এটি পৃথিবীতে ভূপাতিত হবে নাকি বায়ুমণ্ডলে জ্বলে ছাই হয়ে যাবে তা বলা মুশকিল। তবে রাশিয়া মহাকাশযানটি উদ্ধারে শেষ চেষ্টা করবে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের রসদসহ গত মঙ্গলবার প্রোগ্রেস এম-২৭ এম নামের এ মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু পৃথিবী থেকে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পর যানটির সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মহাকাশযানটির গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল আজ।
গত মঙ্গলবারই নাসার বিবৃতির উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বলে, চালকবিহীন রুশ মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এটি যে কোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে।
প্রথমে অবশ্য এ ঘটনা একেবারেই স্বীকার করতে চায়নি রুশ মহাকাশ সংস্থা। তারা বলেছিল, মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থার চাপে পড়ে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় সংস্থাটি।
রুশ মহাকাশ সংস্থার ওই বিবৃতিতে সহকারী প্রধান কর্মকর্তা আলেকজান্ডার লাভানভ বলেছেন, ‘একটি সোয়ুজ রকেট করে মহাকাশচারীদের জন্য রসদ পাঠানো হয়েছিল প্রোগ্রেস এম-২৭ এম নামের এই মহাকাশযানে করে। রাশিয়ার এই মহাকাশযানটির জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন ছয়জন মহাকাশচারী।’
তবে তিনি জানাতে পারেননি, কখন কোথায় ভেঙে পড়তে পারে এই মহাকাশযানটি। এই ব্যাপারে আলেকজান্ডার লাভানভ আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলা একবারেই অসম্ভব। এটি এখনো কক্ষপথে আছে। একটি নিয়ন্ত্রণহীন যান কক্ষপথে কতটা সময় অবস্থান করবে এটা বলা কঠিন।’
তবে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার আরেক কর্মকর্তা সের্গেই স্তাবলিন এএফপিকে বলেছেন, ‘ওটা (মহাকাশযান) এখন আর ঘুরছে না। নামতে শুরু করে দিয়েছে এরই মধ্যে। ওর আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।’
তবে মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার এই ব্যর্থতা নতুন নয়। যদিও ১৯৬১ সালে স্পুটনিক নামের নভোযানে করে মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠিয়ে বিশ্বের নজর কেড়েছিল রাশিয়া, কিন্তু বর্তমানে সেই রাশিয়াই মহাকাশ গবেষণায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ২০১১ সালে ঠিক এই রকমই একটি প্রোগ্রেস মহাকাশযান উড়বার সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ওই ঘটনায় একজন মারা গিয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ নগরীতে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার প্রথম মহাকাশ কেন্দ্র স্কাইল্যাব। সে দুর্ঘটনাটির আগেও নাসা সঠিকভাবে জানাতে পারেনি কোথায় পড়তে যাচ্ছে মহাকাশযানটি।