খুলনা এখন উৎসবের নগরী
খুলনা এখন উৎসবের নগরী। রেলগেট এলাকা থেকে প্রধান সড়ক ধরে দৌলতপুর, নতুন রাস্তা মোড়, স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকা, শিববাড়ী মোড় থেকে ডাকবাংলো মোড়, কেডিএ এভিনিউসহ প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে করা হয়েছে ঝলমলে আলোকসজ্জা। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে রাজনীতিবিদরাও নগরে তোরণ-ব্যানার দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ক্রিকেট-উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবনের কোলঘেঁষা এই বিভাগীয় শহরে। রাজধানী ঢাকায় নিয়মিত বিরতিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়। নিয়মিত হয় ঘরোয়া ক্রিকেট। চট্টগ্রামেও প্রায়ই আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু খুলনায় মাঠে বসে প্রিয় তারকাদের ব্যাট-বলের লড়াই দেখার সুযোগ কালেভদ্রে পাওয়া যায়। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, শোনার পরই দিন গুনতে থাকেন খুলনার ক্রিকেটপ্রেমীরা।
জাতীয় দলে ক্রিকেটাররা এখন সবারই স্বপ্নের নায়ক। একেবারে কাছ থেকে সেই তারকাদের দেখার সৌভাগ্য খুব কমজনেরই হয়। সেই স্বপ্নের নায়কদের চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যাবে, এমন কথা শুনলে পড়িমরি করে ছুটে আসার মতো মানুষেরও অভাব নেই। সেটা সহজেই টের পাওয়া যায় খুলনা শহরের বর্তমান চিত্র দেখলে।
ভোগান্তি, তবু আনন্দ
তবে স্বপ্নের নায়কদের দেখতে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে খুলনাবাসীকে। টিকেট কিনতে দাঁড়াতে হয়েছে দীর্ঘ লাইনে। খেতে হয়েছে পুলিশের লাঠির বাড়ি। অভিযোগ উঠেছে কালোবাজারে টিকেট বিক্রির বিষয়েও। তার পরও টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে বলে যখন ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে প্রতিদিনই বর্ণিল সাজে সেজে মাঠে আসছেন দর্শক। প্রায় পুরোটা সময়ই প্রচণ্ড রোদের তাপ উপেক্ষা করে মাতিয়ে রাখছেন গ্যালারি। টিকেট না পাওয়ায় স্টেডিয়ামের উঁচু প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া টপকে স্টেডিয়াম চত্বরে ঢুকে পড়তে দেখা গেছে অনেক উৎসাহী কিশোরকে। শহীদ-সাকিব-সৌম্য-রুবেলরা যখন বাউন্ডারি লাইনে আসছেন ফিল্ডিংয়ের জন্য, তখন গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে চিৎকার, ‘ও সৌম্য ভাই, ও রুবেল ভাই একটু তাকান ভাই।’ জবাবে তারকারা দৃষ্টি দিলে বা হাত নাড়লে তীব্র আনন্দ নিয়ে উল্লাস করে উঠছেন দর্শক। প্রিয় তারকাদের এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ যে চাঁদ হাতে পাওয়ার শামিল।
প্রতিদিনের খেলা শেষে শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র রয়্যালের মোড়ে ‘মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের’ আয়োজন করা হচ্ছে বিসিবির পরিচালক শেখ সোহেলের পক্ষ থেকে। ‘বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেট উপলক্ষে’ আয়োজিত এই কনসার্টে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর থাকে তরুণদের ভিড়। এই আয়োজন খুলনার ক্রিকেটীয় উৎসবে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশের ‘লাকি গ্রাউন্ড’
নিজেদের খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম নিয়ে খুলনাবাসী গর্ব করতে পারে। যে কয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ এ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার বেশির ভাগ ম্যাচেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল খুলনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিযান। এর পর এখানে অনুষ্ঠিত মোট চারটি ওয়ানডের সব কটিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও জয়মাল্য উঠেছে বাংলাদেশের গলায়। হারের মুখ দেখেছে শুধু টেস্টেই, ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। এই টেস্টেই সাকিব গড়েন এক টেস্টে শতরান ও ১০ উইকেট নেওয়ার বিরল কীর্তি। নাম লেখান ইয়াম বোথাম, ইমরান খানের মতো কিংবদন্তির পাশে।
স্টেডিয়ামটি বানানো হয়েছিল ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সামনে রেখে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের মর্যাদা পায় আবু নাসের স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আনুষ্ঠানিক অভিষেকও হয়ে যায় সে বছরের মার্চে, কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে এবং এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
এর পর আবার অপেক্ষা দীর্ঘ ছয়টি বছর। খুলনায় আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরে ২০১২ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে এসে খেলে একটি টেস্ট ও দুটি ওয়ানডে। দুই বছর পর, ২০১৪ সালের শেষে আরেকটি টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী হয় খুলনা।