জাবিতে অনশনের তৃতীয় দিন, ১২ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ
চারতলাবিশিষ্ট কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের তৃতীয় তলা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দুটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি আজ সোমবার তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। এরই মধ্যে আন্দোলনরত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অনশনরত ১২ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন সিএসই বিভাগের এক শিক্ষক ও ছয় শিক্ষার্থী এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচজন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে সিএসইর শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান ও শিখা মণিকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অসুস্থ হয়ে পড়া অন্যরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাত্তাহুন নাহার চেরী, মাহবুবা খাতুন, ফারহানা কবির, কে এম রিয়াদ ও আফরোজা হীরা এবং সিএসই বিভাগের প্রভাষক তানজিলা রাহমান, শিক্ষার্থী অদিতি সরকার, আহসিন আবিদ, শয়ন দাস ও সাব্বির আহমেদ।
এ বিষয়ে সিএসই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যেখানে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে তাদের আমরণ অনশনের মতো কঠোর কর্মসূচিতে সময় পার করতে হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’
ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাজেদা ইসলাম বলেন, ‘উদ্ভূত সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল আচরণ না করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই বিভাগের ২৫ শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করায় বর্তমানে শিক্ষা ও গবেষণা হুমকির মুখে পড়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই সুখকর নয়।’
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সোমবার এ ব্যাপারে তিন বিভাগীয় সভাপতিকে নিয়ে বসা হবে।
গত ৫ এপ্রিল রেজিস্ট্রার প্রেরিত একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ওই ভবনে উঠতে গেলে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। পরে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলা বরাদ্দ দেয়।
এর পরই প্রতিবাদে নামেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যমান বিভাগ দুটোরই কার্যক্রম চালানোর মতো পর্যাপ্ত স্থান নেই অভিযোগ তুলে সেখানে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বরাদ্দ ঠেকাতে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন সিএসই বিভাগের ১৫ জন এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ১০ শিক্ষক। সে সঙ্গে আমরণ অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা।