সিগমুন্ড ফ্রয়েড
মন নিয়েই যার কারবার
মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তাঁর গবেষণা, তত্ত্ব এবং লেখালেখি মনোবিজ্ঞানে অনেক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। এখনো তাঁর দেওয়া তত্ত্ব নিয়ে তর্ক হয়, গবেষণা হয়। মানুষের মনের অদ্ভূত সব অনুভূতির চমৎকার ব্যখ্যা দিয়েছেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। ১৮৫৬ সালের আজকের দিনে ৬ মে অস্ট্রিয়ায় জন্মেছিলেন তিনি। চলো জেনে নেই তাঁর সম্পর্কে এমন কিছু কথা যা অনেকেরই অজানা। আর এসব তথ্য দিয়ে চমকে দিতে পারো তোমার বন্ধুদের।
১. ছদ্মনামী রোগী
ফ্রয়েডের কাছে নানান রকমের রোগী আসত, নানা রকমের মানসিক সমস্যা নিয়ে। ফ্রয়েড তাঁর বিভিন্ন গবেষণায় ‘আন্না ও’ নামের একজনের নাম লিখেছেন। ফ্রয়েডের রোগী সেই নারীর আসল নাম ছিল পাপেনহেইম। ফ্রয়েডের বিখ্যাত দশা যা পরিচিত ‘টকিং কিউর’ বা ‘নিরাময় কথা’ নামে পরিচিত।
২. অনুপ্রেরণা
লুডবিগ বর্ণের লেখা ‘দ্য আর্ট অব বিকামিং অ্যান অরিজিনাল রাইটার ইন থ্রি ডেস’বইটি পড়ে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ফ্রয়েড। ধারণা করা হয় তাঁর ‘ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন’ ধারণাটি এসেছিল ওই বই থেকেই।
৩. ভুল ধারণা
১৯২৩ সালে জর্জ গ্রোডেক নামের এক চিকিৎসক ‘দাস এস’ (das es) ধারণার কথা প্রথম ব্যক্ত করেন তাঁর বইয়ে। পরবর্তীকালে ফ্রয়েড ধারণাটি ব্যবহার করেন তাঁর বিখ্যাত ‘ডাস ইক আন্ড ডাস এস’ (Das Ich und das Es) বইতে। সেখানে জর্জ গ্রোডেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে অনেকেরই ধারণা দাস এস ধারণার প্রবক্তা ফ্রয়েড। আসলে এর প্রবক্তা ছিলেন জর্জ গ্রোডেক।
৪. বিখ্যাত রোগীরা
বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ গুস্তাভ মালের ছিলেন ফ্রয়েডের একজন রোগী। অনেকেই জানেন না, তাঁর পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করেছিলেন ফ্রয়েড।
৫. বহুভাষিক
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ছিলেন বহু ভাষাবিদ। জার্মান, গ্রিক, হিব্রু, ল্যাটিন, ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি এবং ইতালিয়ান ভাষা বুঝতেন এবং অনর্গল কথা বলতে পারতেন।
৬. মিথ্যে ঘোর
মাঝে মাঝে আমাদের বিশ্বাস আমাদের দিয়ে এমন অনেক কাজ করিয়ে নেয় যা আমরা সাধারণত নিজেদের বুদ্ধিতে করি না। আমাদের অনেকের মতো সিগমুন্ড ফ্রয়েডও এ রকম অদ্ভূত বিশ্বাসে ভুগতেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন ৫১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হবে। ৫১ বছর পার হওয়ার পর তার মনে আরেকটি দৃঢ় ভাবনা গেড়ে বসল যে তিনি ৬২ বছর বয়সে মারা যাবেন। কিন্তু তার সব বিশ্বাসই মিথ্যা হয়ে গেল যখন ১৯৩৯ সালে তিনি ৮৩ বছর বয়সে মারা গেলেন।
৭. নারীবাদী ছিলেন না
অনেকেই মনে করতেন ফ্রয়েড ছিলেন নারীবিদ্বেষী।
৮. মাদকাসক্ত
ফ্রয়েড কোকেনে আসক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ১২ বছর তিনি এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে ১৮৯৬ সাল থেকে পরের বছরগুলোতে তিনি ধীরে ধীরে এই আসক্তি কাটিয়ে উঠেছিলেন।
৯. সোজা কথার মানুষ
সিগমুন্ড ফ্রয়েড সোজা কথার মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্যক্তিগত হোক বা কর্মজীবনে হোক, তিনি সব সময় সোজাসাপ্টা কথা বলেছেন সবার সাথে। তাঁর গবেষণা বা তত্ত্বের সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করলে তিনি সরাসরি এর বিরোধিতা করতেন।
১০. মৃত্যু
জীবনের একটা সময়ে কোকেন আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পারলেও কোকেনই ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ। চোয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড।