নারী-শিশু ট্রাইব্যুনালে মানব পাচারের বিচার!
মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র ও তাদের গডফাদারদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে দেশে বিদ্যমান আইনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রয়েছে। তারপরও এসব অপরাধের বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালকে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। যে পরিমাণ মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে, সেই পরিমাণে মামলা হচ্ছে না জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মনে করছেন এ জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে ‘মানব পাচার ও দমন আইন’ প্রণয়নের পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মামলা হলেও এর মধ্যে একটি মামলাও এখনো বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মানব পাচার প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করতে সম্প্রতি একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এসব সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২০১২ সালে প্রণীত মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে বেশির ভাগই পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচারের পক্ষে মত দেন।
মামলা হলেই না বিচারের প্রশ্ন আসবে!
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানব প্রাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারে বিদ্যমান আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগ পর্যন্ত এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দায়িত্ব আইনেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমার জানা মতে, এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে তা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালই যথেষ্ট। এ জন্য পৃথক কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন নেই। মামলা সংখ্যা যদি বেশি হয়, তখন পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা হবে। তা ছাড়া যে পরিমাণ মানব পাচারের খবর আসছে, সে অনুযায়ী মামলা তো হচ্ছে না। মামলা হলেই না বিচারের প্রশ্ন আসবে।’
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হলেই আমরা বুঝতে পারব, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার সম্ভব কি না। যদি দেখা যায় যে, এ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হচ্ছে, তাহলে আমরা অবশ্যই মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেব।’
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বিদেশগামীদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিবর্গের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে ‘মানব পাচার ও দমন আইন, ২০১২’ প্রণয়ন করা হয়। মানব পাচার সংক্রান্ত সংঘবদ্ধভাবে সংঘটিত আন্তদেশীয় অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন করতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে এ বিধান করা হয়।
আইনের ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোনো জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে।’
একই আইনের একই ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, ‘ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যান্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ বা ক্ষমতায়িত করিতে পারিবে।’
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে যে, এই আইন প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ মামলা হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। এখন পর্যন্ত একটি মামলাও বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়নি। এমনকি এ মামলাগুলো পরিচালনার জন্য কোনো আইনজীবী বা পিপি ও জিপি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।