বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকে পাবে ২০ টাকা!
জেলা প্রশাসনের হিসাবে বান্দরবানে পাহাড়ধস ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার মানুষ। আর সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে মাথাপিছু ২০ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আরো লম্বা হবে। সে হিসেবে মাথাপিছু বরাদ্দ আরো কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা ও ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার টাকা ও ৫০ টন চাল এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমে বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ধসে বান্দরবান সদর, রুমা, থানছি, লামাসহ বিভিন্ন এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বন্যাদুর্গতরা। তবে ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। সরকারের পক্ষে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো তা পাননি স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ রোববার প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরছে মানুষ। তবে ঘরে কাদামাটি জমে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া টিউবওয়েলগুলো বন্যার ময়লা পানিতে তলিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের অনেক জায়গায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে। অনেক জায়গা থেকে পানি নেমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ কিন্তু কমেনি।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, লামায় বন্যায় ২০ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামা শহরের বন্যার পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থানের মানুষ ঘরে ফিরতে পারেনি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো অবস্থান করছে কয়েক হাজার মানুষ।
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বন্যাদুর্গত সেলিনা খাতুন, মোহাম্মদ সিরাজসহ অনেকে জানান, আশ্রয়কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত খাবার-পানি মিলছে না। সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া খাবারগুলো খাওয়ার উপযুক্ত নয়। এ ছাড়া অনেকেই খাবার পায়নি। এখনো সরকারের ঘোষিত ত্রাণ-সহায়তা বন্যাদুর্গতদের হাতে পৌঁছেনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম শাহেদুল ইসলাম জানান, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাইশারী ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম, ঘুমধুম ইউনিয়নের দুটি গ্রাম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও দৌছড়ি এলাকা। বন্যায় নাইক্ষ্যংছড়ির প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। কিন্তু ঘরে কাদামাটি ও ময়লা জমে যাওয়ায় দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে।
বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বরদুয়ারা এলাকায় প্রধান সড়কের ওপর থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু পাহাড়ধসে সড়কে মাটি জমে যাওয়ায় বান্দরবান-রাঙামাটি, রুমা, থানছি এবং লামা-সুয়াল অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে।