মহানবী (স.) যেভাবে ঈদ উদযাপন করতেন
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। বছরে আসে দুবার। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এবং সাহাবারা তাঁদের জীবনে দেখিয়েছেন এ উৎসবের তাৎপর্য। কীভাবে তাঁরা ঈদ পালন করতেন এবং কীভাবে ঈদের দিন সময় কাটাতেন, সেদিকে তাকালেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
নবীজি (স.) দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারি : ৯৮৯]
ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করাকেও নবীজি (স.) গুরুত্ব দিতেন। ইবনে উমর (র.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, ‘তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।’ [সুনান বায়হাকী : ৫৯২০]
আলী (র.) থেকে বর্ণিত : ‘সুন্নাত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৩৩] উভয় পথের লোকদের সালাম দেওয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা।
হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।’ [সহিহ বুখারি : ৯৮৬]
ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা উত্তম। বুরাইদা (র.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না।’
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (র.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘আল্লাহ রাববুল আলামিন তাঁর বান্দার ওপর তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।’ [সহীহ আলজামে : ১৮৮৭] ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন : ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন।’ [যাদুল মায়াদ]
আবদল্লাহ বিন সায়েব (র.) থেকে বর্ণিত : ‘আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, বললেন : আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে, আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে।’ [সুনান আবু দাউদ : ১১৫৭]
ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহু (স.) বলেছেন, ‘যে আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ [সহিহ বুখারি : ৬১৩৮]
জীবন চলার পথে বিভিন্ন পর্যায়ে কারো কারো সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। ঈদের সময় পারস্পরিক মনোমালিন্য দূর করা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উত্তম সময়। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে তার ভাইকে তিনদিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে। তাদের অবস্থা এমন যে দেখা সাক্ষাৎ হলে একজন অন্য জনকে এড়িয়ে চলে। এ দুজনের মাঝে ওই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে প্রথম সালাম দেয়।’ [সহিহ মুসলিম : ৬৬৯৭]
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (র.) বর্ণনা করেন : ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন, তখন আমার নিকট দুটি ছোট মেয়ে গান গাইতেছিল, বুয়াস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না।
ইতোমধ্যে আবু বকর (র.) ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন যে, নবীজির ঘরে শয়তানের বাঁশি? রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন।’ [সহিহ বুখারি : ৯৫২]