ঈদ আনন্দে বান্দরবানে পর্যটকের ঢল
ঈদের আনন্দে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ঢল নেমেছে পর্যটকের। জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা, স্বর্ণমন্দিরসহ দর্শনীয় সব স্থানে এখন পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখর শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসগুলো। কোথাও কোনো সিট খালি না থাকায় ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এখন দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়িদের মাচাংঘরগুলো থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। অনেকে আবার ভ্রমণে এসেও কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রতিবছর ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে বান্দরবানে আগমন ঘটে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রতিদিনই ছুটে আসছে এখন পর্যটকরা। মেঘলা লেকের ওপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতু, স্বর্ণমন্দির এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাচ্ছে হাজার হাজার পর্যটক। নীলাচল ও নীলগিরি পর্যটন স্পটে মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পর্যটককে। পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি খেলা এবং মেঘ উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটক। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলাচল ও নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্রগুলো যেন মেঘে ভাসছে। সদ্য বিবাহিত পর্যটক দম্পতি রোমেল খান ও সুজানা হক বলেন, ‘বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বৃষ্টি যেন নীলাচলের সৌন্দর্য আরো অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যিই অসাধারণ। ইচ্ছা বান্দরবানের পাহাড়েই থেকে যায়। ঢাকায় বাড়ি ফিরে যেতে মন চাইছে না।’
প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরেছে পর্যটন নগরী বান্দরবানে। শুধু বর্ষা ও শীত মৌসুম নয়, সারা বছরই বৈচিত্র্যময় রূপের রানী বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়েছে এরই মধ্যে দেশের বাইরেও। পর্যটকরা এখানকার সৌন্দর্য উপভোগে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ি জনপদে। কী নেই এখানে—প্রাকৃতিক লেক, ঝর্ণা, বাদুরগুহা, আলীর সুড়ঙ্গপথ, ঝুলন্ত সেতু, স্বর্ণমন্দির, পর্বতচূড়া এবং ভিন্ন ভাষার ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এ জেলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে আরো বহুগুণে। তবে অপার সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও যোগাযোগব্যবস্থা, আবাসন, নিরাপত্তা ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোর আরো উন্নয়নের দাবি পর্যটকদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকার এবং স্থানীয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাবে পাহাড়ে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটছে না।
বান্দরবান হোটেল রেসিডেন্সিয়াল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে বান্দরবানে ভিড় জমিয়েছে পর্যটকরা। শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসগুলোর কোথাও কোনো আসন খালি নেই। আরো কদিন আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত পর্যটকের বাড়তি চাপ থাকবে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পর্যটকরা হচ্ছে বান্দরবানের জন্য অতিথি। অতিথিদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের পর্যটক হয়রানির খবর পাওয়া গেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।