প্রেমের সম্পর্ককে দীর্ঘায়িত করে ফেসবুক
ফেসবুকে কোনো যুগলের একসঙ্গে ছবি কিংবা তাঁদের প্রেম-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ পোস্ট দেখে আপনি বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু সত্য ঘটনা হচ্ছে, আপনার বিরক্তি ঘটলেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দৃঢ় হচ্ছে তাঁদের ভালোবাসা। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তা-ই মনে করেন।
গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যেসব কপোত-কপোতী নিজেদের প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বেশ সক্রিয় থাকে, তাঁদের ভালোবাসাও টেকসই হয় বেশিদিন। গবেষণাটির ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ।
সাইবার সাইকোলজি নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা যায়। গবেষণাটি করা হয়েছিল ১৮০ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর ওপর, যাঁদের প্রেমিক বা প্রেমিকা রয়েছে। প্রথমে গবেষকরা তাঁদের বয়স, লিঙ্গ, সম্পর্কের সময়কাল এবং ভালোবাসার প্রতি তাঁদের প্রতিশ্রুতি টুকে নেন।
এর পর সেসব ভালোবাসার মানুষকে বলা হয় তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে। লগ ইন করার পর গবেষকরা কিছু তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করেন। যেমন—সে যুগলের কতগুলো ছবি ফেসবুকে আপলোড হয়েছে, একে অপরজনের টাইমলাইনে কতবার লিখেছে গত মাসে, তাঁদের নিজেদের মধ্যে মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের সংখ্যা কিংবা তাঁদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে কী দেওয়া আছে ইত্যাদি।
মোটকথা, ফেসবুকে তাঁদের ভালোবাসাবাসির একটি চিত্র তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। ছয় মাস পর সেসব প্রেমিক-প্রেমিকাকে ই-মেইল করে জানতে চাওয়া হয়, তাঁদের সম্পর্ক এখনো রয়েছে কি না।
বয়স, লিঙ্গ এবং ভালোবাসার সময়কাল বিবেচনায় রেখে গবেষকরা লক্ষ করেন, যেসব যুগল ফেসবুকে নিজেদের ছবি বেশি আপলোড করেছিলেন এবং সম্পর্কের ব্যাপারে যাঁদের মধ্যে লুকাছাপা কম ছিল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পর্কই টিকে আছে এবং এখনো তাঁরা সমানভাবে ভালোবেসে যাচ্ছেন।
গবেষণার দুজন লেখক ক্যাটেলিনা টমা ও মিনা চই লেখেন, ‘এ ধরনের পাবলিক পোস্টগুলো যুগলদের নিজেদের একটি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ভাবতে শেখায় এবং এ ধরনের বিশ্বাস তাঁদের প্রেমকে আরো ঘনীভূত করে।’
তবে এর পেছনে একটি যুক্তি হতে পারে, জনসমক্ষে প্রেম-ভালোবাসা প্রকাশের পর সেটি খুব দ্রুত ভেঙে ফেলাটা কঠিন। তা ছাড়া মানুষের এটি একটি সহজাত ব্যাপার, সামাজিকভাবে তাঁরা তাঁদের অবস্থান সব সময়ই অক্ষুণ্ণ রাখতে চান। কিন্তু বেশি মিউচুয়াল ফ্রেন্ড কিংবা একজনের টাইমলাইনে পোস্টের সংখ্যা বিচার করে কখনই ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না।
তবে টমা ও চই মনে করেন, এই দীর্ঘ ভালোবাসার পেছনে ফেসবুকের কোনো কৃতিত্ব না-ও থাকতে পারে। কারণ, সাধারণত একে অপরের ওপর বিশ্বাসী এবং প্রতিজ্ঞ যুগলরাই বেশির ভাগ সময় ফেসবুকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে। তাই ফেসবুকে আমরা শুধু সেই মধুর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ব্যাপারটি এমন নয় যে, ফেসবুকই সেই দৃঢ়তা কিংবা বিশ্বাসের জোগান দিচ্ছে।