দুবাই সম্পর্কে ৩০টি অবিশ্বাস্য তথ্য আপনি জানেন?
আপামর বিশ্বের কাছে স্বপ্নপুরীসম। বিলাসে ও আভিজাত্যে অতুলনীয়। সব বিশেষণকে একত্রিত করলে যে নামটা আপনার মাথায় প্রথমে আসে তার কথাই বলছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই। অফুরন্ত তেলের খনি, প্রাচুর্য ও বৈভবের সংমিশ্রণে তৈরি এই দেশ যেন পৃথিবীর বুকে স্বপ্নপুরী। আজ আপনাদের জন্য রইল আরব আমিরাতের দুবাই শহরের কিছু অজানা ও আজব তথ্য, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও আপনি খুঁজে পাবেন না।
১. সোনার ভেন্ডিং মেশিন
পৃথিবীতে নানা সময়ে বহু অদ্ভুত আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দুবাই। অন্য শহরে টাকা তোলার বুথ থাকলেও দুবাইয়ে আছে সোনা তোলার বুথ। আর এটিকে তারা নাম দিয়েছে গোল্ড ভেন্ডিং মেশিন। নগদ টাকার বিনিময়ে আপনি ওই মেশিন থেকে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা সহজেই কিনে নিতে পারবেন। বিশ্ব বাজারে সোনার দাম উঠা-নামার কারণে প্রতি ১০ মিনিট পর পর মেশিনে মূল্য আপডেট করার সফটওয়্যার বসানো থাকে।
২. ফ্যাশনের কেন্দ্রবিন্দু
দুবাই শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক এখানকার মানুষের ফ্যাশন বৈচিত্র্য। দুবাইয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিকদের বৈচিত্র্যময় ফ্যাশন শহরটিকে অন্যসব শহর থেকে আলাদা করেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধীরে ধীরে দুবাই বিশ্বের ফ্যাশন রাজধানীতে পরিণত হচ্ছে।
৩. রোবট নিয়ন্ত্রিত উটের দৌড়
উটের দৌড় প্রতিযোগিতা আরব বিশ্বের একটি প্রাচীন খেলা। তবে ২০০৪ সাল থেকে খেলাটিকে আধুনিক রূপ দিয়েছে দুবাই। মানুষের পরিবর্তে উটের পিঠে রিমোট নিয়ন্ত্রিত রোবট দিয়ে দৌড়ানো হয়।
৪. ৮৩ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশি
দুবাই শহরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ সংখ্যা এতটাই বেশি যে, তা শতকরা ৮৩ শতাংশ। আর অবাক হলেও সত্য দুবাইয়ে মাত্র ১৭ ভাগ আমিরাতি নাগরিক বাস করে। ৮৩ ভাগ বিদেশি নাগরিকের বেশির ভাগ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের।
৫. প্রায় ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা
দুবাই মরুভূমির শহর। এখানে মাঝেমধ্যে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। তার সঙ্গে বালুর ঝড় দুবাইয়ের একটা স্বাভাবিক ঘটনা।
৬. ঋণের ব্যাপারে অনমনীয়
দুবাই পৃথিবীর অল্প কয়েকটি শহরের একটি যেখানে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। আপনি কারো কাছ থেকে ঋণ নিলে কিংবা দোকান থেকে বাকি নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে আপনার জেল জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।
৭. অনেক ক্রেনের ব্যবহার
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উঁচু দালান তৈরি করা হয় দুবাইয়ে। প্রচুর পরিমাণ তেলের কূপও খনন করা হয় সেখানে। এজন্য সেখানে অনেক ক্রেন ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার বড় বড় ক্রেন আছে। এরমধ্যে শুধু দুবাইয়েই আছে ৩০ হাজারটি।
৮. প্রায় শূন্য অপরাধ
আপনি অবাক হলেও এটা সত্য, দুবাই শহরে অপরাধের হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তার মানে দুবাইয়ে নিরপরাধ শহর। এখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ বাস করলেও একটা বিষয় সবাই জানে এখানে অপরাধ করলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।
৯. সবচেরে উঁচু টেনিস কোর্ট
টেনিসে দুবাই বিশ্বসেরা না হলেও দেশটিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেরে উঁচু টেনিস কোর্ট। দুবাইয়ের বুরজ আল আরব হোটেলের ছাঁদে এটি বানানো হয়েছে।
১০. রাস্তাঘাটও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত
অন্য দেশে যা অকল্পনীয়, সেটাই দুবাই শহরে স্বাভাবিক। এখানে অতিরিক্ত গরম থাকে সবসময়। তাই আপনি বাসের জন্য কোনো বাসস্টপেজে দাঁড়ালে সেখানে দেখবেন এসি করা ছোট ঘর।
১১. পরিত্যক্ত বিলাসবহুল গাড়ি
অন্যকোনো শহরে আপনি বিলাসবহুল গাড়ি হয়তো কদাচিৎ দেখতে পাবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দুবাইয়ে। এখানে অনেক বিলাসবহুল গাড়ি যেমন- ফেরারি ও বিএমডব্লিউ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
১২. বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ
পৃথিবীর অনেক দেশে বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক বৈধ হলেও দুবাইয়ে এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি দুবাইয়ে নিজের স্ত্রীর হাতও যেখানে সেখানে আপনি ধরতে পারবেন না।
১৩. বনের পশুদের দেখা যায় শহরে
দুবাইয়ের ধনী শেখরা বনের পশুদের পোষ মানাতে ভালোবাসেন। সিংহ এবং চিতাবাঘকে তাঁরা নিজেদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। জঙ্গল থেকে ধরে এনে অনলাইনে এসব পশুদের বিক্রি করা হয় ধনীদের কাছে।
১৪. সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ
আপনি দুবাই ভ্রমণে গেলে সেখানে সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ দেখতে পাবেন। সেখানে আমিরাতি মুসলিম নারীরা আবায়া (বোরখা) পরে। কিন্তু তারই পাশে অন্য নারীকে দেখবেন বিকিনি পরে আছে।
১৫. মুসলিমদের মদ্যপান নিষিদ্ধ
আরব আমিরাতের দুবাই শহরে মুসলিমদের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ। তবে দুবাইয়ে অমুসলিমদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য নয়।
১৬. পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুরজ খলিফা
এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং হলো বুরজ খলিফা। দুবাই শহরকে বিশ্বের সামনে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে এই বুরজ খলিফা।
১৭. তারকাদের মিলনমেলা
আপনি দুবাই শহরে হরহামেশাই হলিউড কিংবা বলিউড তারকাদের দেখা পাবেন। তারকারা অবকাশ যাপনের জন্য প্রায়ই দুবাইকে বেছে নেন। কিছুদিন আগে মার্কিন মডেল ও অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানকে দুবাই বেড়াতে যেতে দেখা গেছে।
১৮. বড় স্বর্ণের বাজার
দুবাইয়ে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বর্ণের বাজার। এখানে আপনি যা বলবেন কারিগররা সোনা দিয়ে তাই বানিয়ে দেবে। তবে এর জন্য আপনাকে অনেক অর্থও গুনে দিতে হবে।
১৯. নারী পুলিশ
লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে দুবাই। পুরুষের পাশাপাশি দুবাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল নারী পুলিশ বাহিনী। সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এই বাহিনী।
২০. সোনার পেয়ালায় কেক
ইতালির কোকো গাছের বীজ ও উগান্ডার ভ্যানিলা দিয়ে তৈরি বিশেষ এক ধরনের কেক পাওয়া যায় দুবাইয়ে। আর এই কেক পরিবেশন করা ২৩ ক্যারেটের খাটি সোনার পাত্রে। খেতে সাধারণ হলেও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কেক।
২১. পাম আইল্যান্ড
রাজারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাঁদের আছে অঢেল সম্পদ ও আজ্ঞাবহ কর্মচারী। রাজারা বড়ই খেয়ালি। ইচ্ছে হলো সাগর বুকে দ্বীপ বানাবেন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কাজ। রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও ঘটনাটি বাস্তব। দুবাইয়ের শান্ত সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ। তাও আবার তিনটি। কৃত্রিম হিসেবে দ্বীপগুলো বিশ্বে যত বিস্ময় জন্ম দিয়েছে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ করছে এগুলোর আকৃতি। দ্বীপ তিনটি হুবহু পাম গাছ আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম দ্বীপগুলোর নাম পাম জুমায়রা, পাম জাবেলে আলি, পাম দেইরা। পাম জুমায়রা ও পাম জাবেলে আলি যথাক্রমে জুন ২০০১ ও অক্টোবর ২০০২ সালে শুরু হয়ে নভেম্বর ২০১৪ সালে পাম জুমায়রার কাজ শেষ হয়।
২২. গাড়ির শহর
১৯৬৮ সালে দুবাই শহরে মাত্র ১৩টি গাড়ি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আজ দুবাই গাড়ির শহরে পরিণত হয়েছে। রাস্তা কিংবা উড়াল সড়কেও কখনো কখনো আপনি জ্যামে পড়তে পারেন এই শহরে।
২৩. দুবাইল্যান্ড পার্ক
দুবাই সবসময় চায় নির্মাণের দিক দিয়ে শহরটিকে যেন পৃথিবীর সবাই সমীহ করে। সে কারণে দুবাইয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় দুবাইল্যান্ড নামের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ থিম পার্কের। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার পর্যটক পার্কটিতে বেড়াতে যেতে পারবে।
২৪. পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অ্যাকোরিয়াম
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অ্যাকোরিয়ামটি অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ দুবাই শপিং মলে। অ্যাকোরিয়ামটিতে ৩৩ হাজার প্রজাতির প্রাণী রাখা আছে।
২৫. মুক্তার চাষ
১৯ শতকে যখন দুবাইয়ে শিল্প বিপ্লব ঘটেনি, তখন সেখানকার মূলত প্রধান কাজ ছিল মুক্তা চাষ। কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর দুবাইয়ের এই শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২৬. চলমান অবকাঠামো নির্মাণ
দুবাই শহরের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য এর অবকাঠামোগত নির্মাণ শৈলী। উঁচু দালান, আকর্ষণীয় সব স্থাপনা দুবাইকে দিয়েছে ধনী ও বিলাসবহুল শহরের খ্যাতি।
২৭. দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাবার
দুবাই ধনী শেখদের শহর। তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে অভ্যস্ত। কিন্তু তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করলেও খেয়াল রাখেন ছিন্নমূল মানুষের দিকে। তাঁরা দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করাকে খুব আনন্দের কাজ মনে করেন।
২৮. বিলাসী গাড়ির ট্রাফিক জ্যাম
দুবাইয়ে দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিলাসী গাড়ির সংখ্যা। দুবাইয়েই সাধারণত চোখে পড়ে বেশি দামি গাড়ি। আর যখন এই দামি গাড়িগুলো জ্যামে আটকে থাকে তখন দেখতে বেশ দারুণ লাগে। আর এটা দুবাইয়েই সম্ভব।
২৯. বিলাসিতার শহর দুবাই
অকারণে বিলাসিতা করা দুবাইয়ে বসবাসকারী ধনীদের জীবনের একটি অংশ। সেখানকার শেখ ও তাঁদের সন্তানরা অন্যকে দেখানোর জন্য কোটি দিরহাম খরচ করেন। এমনকি তাঁরা সবার থেকে আলাদা হতে স্বর্ণ মোড়ানো ‘গোল্ড প্লেটেড কার’ কিনতে শত শত কোটি দিরহাম খরচ করতেও পিছপা হন না।
৩০. বিলাসবহুল পাবলিক টয়লেট
সাধারণত পাবলিক টয়লেটগুলো খুব বেশি মানসম্মত থাকে না। তবে দুবাই গেলে আপনার এই ধারণা পাল্টে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল পাবলিক টয়লেট দেখা যায় দুবাইয়ের রাস্তায়। কোটি টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে বিলাসবহুল এসব টয়লেট। এসব টয়লেটে স্থাপন করা থাকে অত্যাধুনিক শাওয়ার ও জাকুজি।