শোকে মুহ্যমান আমখোলা গ্রামের মানুষ
বরগুনার তালতলী উপজেলার আমখোলা গ্রামের পাড়া-মহল্লা-উঠানে-বারান্দায় সর্বত্রই এখন একটাই আলোচনা। কী এমন অপরাধ করেছিল রবিউল? গতকাল বুধবার বিকেলে আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয় শিশু রবিউলকে। শত শত গ্রামবাসী জড়ো হয় রবিউলের জানাজায়। পরে ঘরে ফিরে রবিউলের নাম বলে বারবার মূর্ছা যান রবিউলের মা মোর্শেদা বেগম ও বাবা দুলাল মৃধা।
রবিউল হত্যার প্রধান আসামি মিরাজকে (২৫) বুধবার সকালে গ্রেপ্তার করে তালতলী থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তালতলী থানায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে অসম্মতি জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার মিরাজকে আদালতে নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে মাছ চুরির অভিযোগ এনে নির্মম নির্যাতনের পর শিশু রবিউলকে হত্যা করে প্রতিবেশী মিরাজ ও তাঁর সহযোগীরা—এমন অভিযোগ রবিউলের বাবা-মা ও স্বজনদের। মাথায় ও চোখে নির্মম আঘাতের পর লোহার শাবল দিয়ে রবিউলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। শিশু রবিউলের মৃতদেহের সুরতহাল করেছেন তালতলী থানার এসআই আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, সুরতহালের সময় রবিউলের বাঁ চোখ, কপালের বাঁ পাশ ও থুতনিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোরশেদুল ইসলাম সজীব জানান, তিনি শিশু রবিউলের ময়নাতদন্ত করেছেন। যথাযথ রিপোর্ট না পেয়ে এ বিষয়ে তেমন কিছু বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বাঁ চোখ, কপাল ও মুখমণ্ডলে অঘাতের চিহ্ন ছিল।
এদিকে, খবর পেয়েই বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, এ ঘটনায় শিশু রবিউলের বাবা বাদী হয়ে তালতলী থানায় অভিযুক্ত মিরাজকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রধান আসামি মিরাজকে বুধবার সকালেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় তালতলী থানার পুলিশ। তিনি আরো বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ। তিনি নিজেই বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করছেন বলেও জানান।
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রবিউল আউয়াল। স্থানীয় ফরাজীবাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে। তালতলী বাজারে রবিউলের পিতা দুলাল মৃধার খুচরা যন্ত্রাংশের একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়েই চলে রবিউলদের সংসার।