করমজলে কুমিরের ৩৬ বাচ্চা
দেশের একমাত্র বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রের কুমির জুলিয়েটের ফোটানো ডিম থেকে ৩৬টি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। বাচ্চাগুলোকে ৩৬ ঘণ্টা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার পর কেন্দ্রের লালন-পালন প্যানে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কুমির জুলিয়েট গত ১২ মে প্রজননকেন্দ্রের পুকুরে ৫১টি ডিম দেয়। ডিমগুলো টানা ৮৬ দিন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে সঠিক তাপমাত্রার অক্সিজেন ও আলোর ব্যবস্থায় রাখার পর ওই ডিম থেকে ৩৬টি বাচ্চা হয়।
বিলুপ্তপ্রায় লবণপানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০৫ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গার ওপর বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র।
শুরুতে জেলেদের জালে আটক ছোট ও বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রের পুকুরে লবণপানির দুটি নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে।
প্রজননকেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জুলিয়েট ডিম দেওয়ার পর সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। এ ছাড়া বাচ্চা ফোটানোর জন্যে প্রতিবছরই নতুন যন্ত্রপাতি লাগে। নতুন করে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে শতভাগ বাচ্চা ফুটানো সম্ভব।
সুন্দরবনের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকতা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনে একসময় প্রচুর লোনা পানির কুমির ছিল। এখন মাত্র ১৭০-১৮০টি কুমির আছে। কুমিরের সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য এ কেন্দ্রে ২০০৫ থেকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৭৯টি বাচ্চা কুমির সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুমির লালন-পালনে ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের সহকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, লবণাক্ত পানির কুমিরকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এ প্রজননকেন্দ্রটি সুন্দরবনে চালু করেছে সরকার। এদিকে প্রজননকেন্দ্রে প্যানে ২০২টি কুমিরের বাচ্চা অবমুক্তির জন্য লালন করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কুমির পিলপিলের ডিম থেকেও সমপরিমাণ বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
সুন্দরবন কুমির করমজল কেন্দ্রে সরকারিভাবে যা আছে তা যথেষ্ট, তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি হলে আরো বেশি করে বাচ্চা ফোটানো ও সংরক্ষণ সম্ভব হতো বলে জানান ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায়।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণপানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধুমাত্র লবণপানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।