গ্রামের বাড়িতে নিলয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন
পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের চলিশা গ্রামে পারিবারিক শ্মশানে ব্লগার নিলয় নীল ওরফে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করে। স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
এদিন রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা থেকে পুলিশের পাহারায় মরদেহ নেওয়া হয় মায়ের কাছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিরোজপুর সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
নীলাদ্রির মরদেহ পৌঁছানোর পর চলিশার গ্রামে মাতম শুরু হয়। গ্রামে সবাই তাঁকে চিনত নান্টু নামে। পরিচিতজনরা এককথায় জানালেন, খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল নান্টু। চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। এর পর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে পিরোজপুরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি যে নিলয় নীল নামে ব্লগে লিখতেন, তা গ্রামের মানুষের কাছে অজানা ছিল। তবে অনেকেই জানতেন, তিনি ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন।
গত শুক্রবার দিনদুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় ব্লগার নীলাদ্রিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর শরীরে ১৪টি কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
নিহত নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ব্লগে লিখতেন নিলয় নীল নামে। ফেসবুকেও তিনি ওই নামেই ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ উগ্রপন্থীদের সন্দেহ করছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর এক ই-মেইল বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠন।
এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আশামণি বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
চলতি বছরের সাত মাসে এ নিয়ে চারজন লেখক ও ব্লগার খুন হলেন। এর আগে ২০১৩ সালে খুন করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশের পর সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়।