‘ওরা ধর্ষণ করেছে, আমরা হত্যা করব’
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রীতিমতো সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছেন একদল নারী। আইএসের হাতে বন্দী হয়ে দীর্ঘদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বা আইএসের হাতে নিজেদের স্বজন হারিয়েছেন এমন নারীরা একজোট হয়ে গঠন করেছেন এই দল। সংগঠিত এই নারীর দলের নাম ‘সান গার্লস’। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সূর্য বালিকা’। ইরাকে আইএসের সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নিতে নিজেদের প্রস্তুত করছেন তাঁরা।
ইরাকের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইয়াজিদি বা এজিদ সম্প্রদায়ের সংগীতশিল্পী ঝাটে শিনগালি এই ‘সান গার্লস’ দলের প্রতিষ্ঠাতা। এর সদস্যরা সবাই ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে উত্তর ইরাকের সিনজার প্রদেশের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের গ্রামের হাজারো নারী ও তরুণীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা। এরপর যৌনদাসী বানিয়ে রাখা হয় তাদের। করা হয় অমানুষিক নির্যাতন।
আইএসের সেই বন্দিশালা থেকে যেসব ইয়াজিদি নারীরা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন বন্দিদশায় কী পরিমাণ যৌন নির্যাতন তাদের সইতে হয়েছে। দিনে চার-পাঁচবার করে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। এমনকি জোর করে অনেক আইএস যোদ্ধার সাথে বিয়েও দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
স্বায়ত্ত্বশাসিত ইরাকি কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এই ‘সান গার্লস’ দল গঠনের বিশেষ অনুমতি নিয়েছেন উত্তর ইরাকের লোকসংগীতশিল্পী ঝাটে শিনগালি (৩০)। গত ২ জুলাই নারী যোদ্ধাদের এই ব্রিগেড তৈরি করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ১৭ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১২৩ জন নারী যোদ্ধা যুক্ত হয়েছেন তাঁর দলে।
পুরুষ কুর্দিশ যোদ্ধারা এই নারীদের প্রশিক্ষণ দেন বলে ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন ঝাটে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শুধু মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা আরো বেশি শিখতে চাই। তবে এটাও ঠিক, যেকোনো সময় আইএসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত আমরা।’
সান গার্লস দলের কনিষ্ঠ যোদ্ধা জেন ফারস (১৭)। শিনজার পাহাড়ে থাকা আইএসের ক্যাম্প থেকে নিজের ভাইসহ পালিয়ে আসেন। সম্প্রতি তিনি এই দলে যোগ দিয়েছেন। মৃদুভাষী এই তরুণী জানালেন, সান গার্লসে যোগ দেওয়ায় তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিবার গর্বিত।
গত মে মাসে জেন এর বয়সী আরেকজন ইয়াজিদি তরুণী জানিয়েছিলেন কীভাবে তিনি এবং তাঁর বোনকে প্রতিদিন এক আইএস যোদ্ধা ধর্ষণ করত। এরপর তাঁদের দুজনকেই দাস নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বাহার নামে ১৪ বছরের এক কিশোরী জানায় তার বন্দিদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। আইএসের এক নিলামে বিক্রি হওয়ার আগে তাকে কুমারিত্বের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
কারো কারো বাবা-ভাই কিংবা স্বামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে আইএস জঙ্গিরা।
এমন সব বীভৎস স্মৃতি নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে বেঁচে আসা ইয়াজিদি নারীরা এবার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তাই যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আইএস যোদ্ধাদের হত্যা করতে চান তাঁরা। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ঝাটে তাই বললেন, ‘ওরা আমাদের ধর্ষণ করেছে, বদলা নিতে আমরা ওদের হত্যা করব।’