দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুত হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী
আশঙ্কাজনক অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৮১২ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৬০০ জন। দক্ষিণ কোরিয়ার রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (কেসিডিসি) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ আজ মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই দেগু শহরের বাসিন্দা। সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১৯ জন। এ ছাড়া দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগই দেগু শহরের বাসিন্দা।
তবে করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে ধীরে ধীরে কমছে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। সেখানে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। এ ছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৫ জন। চীনা স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১২৫ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯১ হাজার বলে জানা গেছে। সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
চীনে সংক্রমণ কমে এলেও, অন্যান্য দেশে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। ইরানে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতেও সংক্রমণ বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। ফ্রান্সে করোনা আতঙ্কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লুভর মিউজিয়াম।
এখন চীন নয়, বরং বিশ্বের কাছেই ভয়ানক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ। কারণ চীনের হুবেই থেকে প্রায় বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস প্রতিনিয়তই কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ।
চীনের বাইরে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইরানে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক বলা হলেও বাস্তবে তা অনেক বেশি বলেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ধারণা করছে। করোনার কারণে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকটি দেশ। সচল এলাকাগুলোতে আতঙ্কিত মানুষ মাস্ক পরে চলাফেরা করছেন।
ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ সেখানে ৪৮ ঘণ্টায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গির্জা।
ফ্রান্সে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ বাড়ায় স্টাফদের অনুরোধের কারণে প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম বন্ধ রাখা হয়েছে। চেক প্রজাতন্ত্র, স্কটল্যান্ড ও ডমিনিক রিপাবলিকেও প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ১০০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার ঘটনায় ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, নেওয়া হয়েছে জরুরি ব্যবস্থা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৫ জন ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামের একটি প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনজন মার্কিন নাগরিক, যাঁরা করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর থেকে ফিরে এসেছেন। আরো ১৭ জন ভ্রমণের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৩৭ জন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে এমন রোগীও আছেন যাঁরা কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি কিংবা করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো দেশ ভ্রমণ করেননি। এসব ব্যক্তি কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
বিশ্বব্যাপী যখন এমন পরিস্থিতি, তখন করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের অবস্থা উন্নতির দিকে। সেখানে ধীরে ধীরে কমে আসছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে ভাইরাস থেকে নিস্তার নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ঘটনাও।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং বলেন, বিগত কয়েক সপ্তাহের চেয়ে এখন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থতার হার বেড়েছে। চীনে আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ শতাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এতে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ভাইরাস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। আমাদের চিকিৎসাও ভাইরাস নির্মূলে কাজে দিচ্ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল বলছে, রোগীদের আলাদা পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিলে চীনের মতো অন্য দেশগুলো প্রাণঘাতি ভাইরাসটি নির্মূলে সক্ষম হবে।