মাটিরাঙ্গায় সংঘর্ষ : নিহত চারজনকে আসামি করে বিজিবির মামলা
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বিজিবি ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার মাটিরাঙ্গা থানায় মামলা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীর কাছে অভিযুক্ত বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার ইসহাক আলী নিজেই বাদী হয়ে নিহত চারজনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধাদান, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভূঁইয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিজিবির হাবিলদার ইসহাক আলী মৃত চারজনসহ ১৯ জন এবং অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনকালে বিজিবিকে বাধা দেওয়া হয়েছে, তাদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে, মারধর ও জখমসহ গুলি করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় দুই পরিবারের যাঁরাই উপস্থিত ছিলেন, সবাইকে হত্যা করা হলেও গ্রামবাসীকে হয়রানি করার জন্য ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করেছে বিজিবি।
বিজিবির অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে এটিকে দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে মনে করছে গ্রামবাসী। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে হাবিলদার ইসহাকের ফাঁসি দাবি করে তারা।
এদিকে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার রেজাউল করিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। এ কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন আহমদ আলী (২৫), আলী আকবর (২৭) ও তাদের বাবা সাহাব মিয়া (৫৫), মফিজ মিয়া (৫০) এবং বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের সদস্য সিপাহি মো. শাওন খান (৩০)।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানানো হয়েছিল, গত ৩ মার্চ মঙ্গলবার সকালে একটি ট্রলিতে করে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিজিবির গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আহমদ আলী, আলী আকবর ও তাঁদের বাবা সাহাব মিয়া। পরে চট্টগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে মারা যান মফিজ মিয়া। সংঘর্ষের সময় পাল্টা হামলায় নিহত হন বিজিবি সদস্য শাওন।
পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, বিনা উসকানিতে বিজিবি সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছেন। অন্যদিকে, বিজিবির দাবি, ৬০ থেকে ৭০ জন নারী-পুরুষ তাদের অবরুদ্ধ করে দুটি রাইফেল ছিনিয়ে নিলে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন।
এর মধ্যে বিজিবি সদস্য মো. শাওন খানের লাশ গুইমারা বিজিবি সেক্টরে জানাজা শেষে তাঁর গ্রামের বাড়ি বড়গুনার বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ বাসণ্ডা গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল সকালে চারটি লাশ একে একে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলার মুসলিমপাড়া ও গাজীনগর পৌঁছালে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই পরিবারের সদস্যরা। লাশ দেখতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, আত্মীয়স্বজন জড়ো হন নিহতদের বাড়িতে। সর্বত্রই নেমে আসে শোকের ছায়া।
প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টায় আলুটিলা বটতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চারজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বটতলী কবরস্থানে মো. মফিজ মিয়াকে এবং ইসলামপুর কবরস্থানে সাহাব মিয়া, তাঁর দুই ছেলে আকবর আলী ও আহাম্মদ আলীকে দাফন করা হয়।
জানাজার আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ধৈর্য ধারণের জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। দাফন অনুষ্ঠানে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল।
এদিকে জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেককে দাফন করার জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছেন।