পোশাকশ্রমিক স্ত্রীর চোখ উৎপাটনের চেষ্টা
পোশাক কারখানার শ্রমিক ফাতেমা বেগমকে (২৫) নির্যাতন করে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বামী হাফিজুর রহমান গত সোমবার তাঁকে নির্যাতনের একপর্যায়ে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন ফাতেমা।
ফাতেমা ও হাফিজুর দম্পতি রাজধানী ঢাকায় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। উভয়েই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাসিন্দা। ঘটনার চারদিন পর বিষয়টি জানতে পেরে ফাতেমার বাবা ও মা তাঁকে বাগেরহাটে নিয়ে আসেন। গতকাল শনিবার ফাতেমাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফাতেমা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সিংড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ফাতেমার বাবা আইউব আলী জানান, আট বছর আগে রামপাল উপজেলা সদরের গাববুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমানের সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় ফাতেমার ওপর নির্যাতন করতেন স্বামী।
আইউব আলী আরো জানান, দুই বছর আগে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে ফাতেমা ও হাফিজুর ঢাকায় চলে যান। তখন থেকেই স্ত্রীর বেতনের পুরো টাকা হাফিজুর রহমান নিয়ে নিতেন। এতে বাধা দিলে তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করতেন হাফিজুর।
ফাতেমার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার পোশাক কারখানা থেকে বের হয়ে বাজার করে বাসায় ফেরার পর বেতনের টাকা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফাতেমার ওপর হাফিজুর শারীরিক নির্যাতন চালান এবং তাঁর দুটি চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। ঘটনার তিনদিন পর বিষয়টি পরিবারকে জানান ফাতেমা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা বলেন, ‘বেতনের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় হাফিজুর আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমি এখন চোখে দেখতে পারছি না। আর যেন কোনো মেয়ের জীবনে এমন না হয়। আমি তার বিচার চাই।’
ফাতেমার নানী আছিয়া খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় হাফিজুর অমানবিক নির্যাতন করতেন ফাতেমাকে।
ফাতেমার স্বামী হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে স্ত্রীকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মাস খানেক আগে তিনি আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এ নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে আমি তাকে মারধর করি। সে আমার কোনো কথা শুনত না।’
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মঈনউদ্দিন মোল্লা জানান, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাঁর দুই চোখেই গুরুতর আঘাত আছে। চোখ দুটি কালো হয়ে গেছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি ফাতেমার বাবা ও মা। মেয়ে একটু সুস্থ হলে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।