সিরিয়ায় প্রাচীন মন্দির ধ্বংসের খবর নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ
সিরিয়ার পালমিরার আরেকটি প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। স্যাটেলাইট থেকে ছবিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পালমিরার টেম্পল অব বেল নামে মন্দিরটি পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। গতকাল সোমবার স্যাটেলাইট ছবি দেখে জাতিসংঘও এই খবর জানায়। এর আগে পালমিরার বল শামিন মন্দির ধ্বংস করে আইএস।
পালমিরার টেম্পল অব বেল সিরিয়ার সংস্কৃতি ও ঐহিত্যের একটি অনন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতো। রোমের যুগের এই স্থাপনা দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩২ অব্দে মন্দিরটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় দ্বিতীয় শতকে। পরে এটি চার্চ ও মসজিদ হিসেবেও ব্যবহার হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা যায় পালমিরার টেম্পল অব বেল পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে আইএস। এর আগেও জঙ্গি সংগঠনটি পালমিরাসহ সিরিয়ার বিভিন্ন অংশের মন্দিরসহ প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংস করেছে।
গার্ডিয়ান জানায়, রোববার টেম্বল অব বেলের বড় আকারের বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে ওই সময়ের বিস্ফোরণে স্থাপনাটির কতটা ক্ষতি হয়েছিল তা জানা যায়নি। পরবর্তীকালে স্যাটেলাইট ছবি থেকে ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সংস্থা (ইউনিটার) জানিয়েছে, রোববারের বিস্ফোরণে টেম্বল অব বেলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাদের স্যাটেলাইট ছবিতে ওই আশঙ্কাই সত্যি হলো। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, স্যাটেলাইট দিয়ে তোলা টেম্পল অব বেলের স্থানের পূর্বের ছবির সঙ্গে বিস্ফোরণের পরে তোলা ছবি মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, টেম্বল অব বেলের ভুল অংশটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একই সঙ্গে থামের সারিও বিস্ফোরণে পুরো ধ্বংস হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট তোলা স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, চতুর্ভুজ আকৃতির একটি স্থাপনা, যার চারপাশে সারিবদ্ধ থাম। তবে সোমবারের ছবিতে দেখা যায় স্থাপনার মূল অংশ ও এর চারপাশের থামের কোনো অস্তিত্বই নেই। স্থাপনাটির একদম শেষ অংশে মাত্র কয়েকটি থাম দাঁড়িয়ে আছে।
চলতি মাসেই পালমিরার অপর একটি প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করেছে আইএস। গত সপ্তাহ জঙ্গি সংগঠনটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালমিরায় বল শামিন মন্দির ধ্বংস করে। গত শুক্রবার ইউনিটার স্যাটেলাইন ছবি দেখে মন্দিরটি ধ্বংসের খবর নিশ্চিত করে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো জানিয়েছে, সিরিয়ার ও বিশ্বের ইতিহাসের অংশ প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংস করে যুদ্ধাপরাধ করেছে আইএস। আইস এর নিয়ন্ত্রণাধীন ইরাক ও সিরিয়ায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করেছে।
সিরিয়ার প্রত্নতত্ত্ববিষয়ক প্রধান মামন আবদুল করিম বলেন, চলতি মাসেই পালমিরায় ৮২ বছর বয়স্ক সিরীয় এক প্রত্নতত্ত্ববিদকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে আইএস। ওই ব্যক্তি দীর্ঘ চার দশক পালমিরার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো দেখাশোনা করেছেন।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ২১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পালমিরা শহর মরুভূমির মুক্তা হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালে সিরিয়া গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ পর্যটক পালমিরা ঘুরতে আসতেন।