আপনার জিজ্ঞাসা
নামাজের সময় কোথায় হাত বাঁধব?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭১৯তম পর্বে ফেনী থেকে টেলিফোনে নামাজের সময় হাত বাঁধার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আনিক। প্রশ্নোত্তরে অনুলিখন করেছেন রেজাউল করিম।
প্রশ্ন : নামাজের সময় কোথায় হাত বাঁধব?
উত্তর : নামাজের হাত বাঁধার বিষয়টি আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বাঁধার দুটি মতই শুদ্ধ। অনেক এখতেলাফ (মতপার্থক্য) রয়েছে, একটি-দুটি নয়। প্রায় পাঁচটি এখতেলাফ রয়েছে এই মাসালার মধ্যে, অর্থাৎ পাঁচটি বক্তব্য রয়েছে। আমরা দুটির কথাই বলব। হানাফি মাজহাবের চিন্তাবিদদের বক্তব্য হচ্ছে, নাভির নিচে হাত বাঁধা। এ মর্মে তাঁরা আলী ইবনে মুতালিব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে থাকেন। যে হাদিসটি সনদের দিক থেকে একেবারেই দুর্বল বা গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এটি মুনখার বা সহিহ হাদিসের পরিপন্থী একটি বক্তব্য।
আরেকটি হাদিস, যেটি বুকের ওপর হাত বাঁধার ব্যাপারে এসেছে। এটি অধিকাংশ ওলামা কেরামের অভিমত। এবং ইমাম শাফি (রা.), ইমাম আহমদ (রা.) তাঁর মাজহাবের মধ্যে, ইমাম মালেক (র.)-এর একটি রেওয়াত পাওয়া যায় এ মাসালার মধ্যে। এ ছাড়া অধিকাংশ মোহাদ্দিসে কেরাম, তাবেয়িদের মধ্যে অনেকে এ বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন বুকের ওপরে হাত বাঁধার বিষয়ে। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুটি হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এ হাদিসগুলোকে ওলামা কেরামের একদল লোক এটাকে সহিহ বলেছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক-বিতণ্ডা রয়েছে।
এ ছাড়া আমরা যখন দেখব যে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের আমল এবং পরবর্তী লোকদের আমল, সব মিলিয়ে দেখা যাবে যে বুকের ওপর হাত বাঁধার বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ হাদিস বিষয়ে যাঁরা জ্ঞানী ছিলেন, তাঁরা প্রাধান্য দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে ইমাম তিরমিজি (র.) তাঁর সুন্নাহ তিরমিজির মধ্যে খুব সুন্দর কথা বলেছেন। তা হলো এই, এ বিষয়ে যদিও ওলামায়ে কেরাম ও সারফেস্সালেহিনদের মধ্যে যদিও দ্বিমত পাওয়া যায়, তবুও এ বিষয়ে উদারতা পাওয়া গেছে যে, তাঁরা কেউ হাত বুকের ওপরে বাঁধতেন, কেউ হাত পেটের ওপরে বাঁধতেন, কেউ হাত নাভির ওপরে বাঁধতেন। এ বিষয়ে কেউ কারো সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হতেন না বা কেউ কাউকে তিরস্কার করতেন না।