এমপি পাপুলকাণ্ডে কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের নামও আসতে পারে
মানবপাচার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেপ্তার করেছে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ঘটনায় ‘নেপথ্যের সহযোগী’ হিসেবে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস. এম আবুল কালামের নামও আসতে পারে বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
আজ শনিবার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের গ্রেপ্তারের যেসব বিস্তারিত তথ্য আসতে শুরু করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু পাপুল একা নন তাঁর এই অপরাধকর্মে পারস্য উপসাগরীয় দেশটিতে নিযুক্ত ঢাকার রাষ্ট্রদূতও জড়িত থাকতে পারেন।
পাপুলের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রাষ্ট্রদূত আবুল কালামের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি করতে বাধ্য হন বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।
যদিও এ ব্যাপারে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এখন খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
গত ৬ জুন পাপুলকে গ্রেপ্তার করে কুয়েতের পুলিশ। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে উঠে আসে কীভাবে বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য মানুষকে প্রতারিত করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং এই কাজে তাঁকে কুয়েতের প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তারাও ঘুষ, উপহার ও অন্যান্য সুযোগের বিনিময়ে সহায়তা করেছেন। তিনি এখন কুয়েতের কারাগারেই আছেন।
এ ঘটনার এক মাস পর গত মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় সংসদ সদস্য পাপুলের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রদূতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তিনি গণমাধ্যমে দেখেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে ড. মোমেন বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
তবে এ ব্যাপারে এখনো কুয়েত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানায়নি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত এস. এম আবুল কালামের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসবেন।
‘সেখানকার পরবর্তী রাষ্ট্রদূত কে হবেন সেটিও আমরা চূড়ান্ত করে ফেলেছি’, যোগ করেন ড. মোমেন।
এখন পর্যন্ত তদন্তে বের হয়ে এসেছে, পাপুল প্রতি বছর বিভিন্ন ঘুষ, উপহার ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মুনাফা করতেন। এ ছাড়া পাপুল ও তাঁর কোম্পানির প্রায় ৫০ লাখ দিনার (প্রায় ১৪০ কোটি টাকা) জব্দ (ফ্রিজ) করার জন্য ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর।
এরই মধ্যে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের কাছে ১২ জন বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী সাক্ষ্য দিয়েছেন।