আপনার জিজ্ঞাসা
ইমামতির মাপকাঠি কী?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭২৩তম পর্বে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে পোস্টকার্ডে ইমামতির মাপকাঠি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আলম। অনুলিখনে ছিলেন মুন্সী আবদুল কাদির ।
প্রশ্ন : ইমামতির মাপকাঠি কী?
উত্তর : ইমামতি বলতে আমরা মূলত বুঝি সালাতের ইমামতিকে। আসলে ইমামতি কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। ইমামতি মূলত হচ্ছে নেতৃত্ব বা লিডিং। ইমাম অর্থ নেতা। তবে মসজিদের ইমামতির ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) থেকে আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) বর্ণিত সহিহ হাদিসের মধ্যে এসেছে, ‘আকরউহুম লি কিতাবিল্লাহ,’ অর্থাৎ ইমামতির যোগ্যতার প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে, কোরআন সম্পর্কে পারদর্শিতা। আল্লাহর কোরআনের ব্যাপারে যার জ্ঞান আছে, কোরআন পড়া যার শুদ্ধ, যে কোরআন বেশি জানে, কোরআন বেশি মুখস্থ করেছে, সেই ব্যক্তি মূলত ইমামের মর্যাদা পাবে। এটাই মূল মাপকাঠি। কোরআনের কথাটি রাসুলুল্লাহ (স.) প্রথমে এ জন্যই উল্লেখ করেছেন, যেহেতু সালাতের মূল সম্পৃক্ততা কোরআনের সঙ্গে। কোরআন তেলাওয়াত, কোরআন হেফজ এবং কোরআনের যে জ্ঞান আছে, এ বিষয়ের ওপর সালাত বেশি নির্ভর করে থাকে। তাই সেখানে প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া হবে তাদের, কোরআনের ওপর যাদের জ্ঞান রয়েছে এবং আল্লাহর কিতাব যার বেশি মুখস্থ রয়েছে এবং সুন্দর পড়তে পারে। এখানে তিনটি ধাপ রয়েছে। তেলাওয়াতের দিক থেকে সৌন্দর্য, মুখস্থের দিক থেকে বেশি আর কোরআনে কারিমের জ্ঞান যার কাছে বেশি রয়েছে। সবটা মিলিয়ে মর্যাদার দিকটা নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ এ মাপকাঠিতে যিনি উত্তীর্ণ হবেন, তিনিই ইমামতির দায়িত্ব পাবেন।
কিন্তু সেখানে যদি দেখা যায়, সবাই কোরআনের মাপকাঠির দিক থেকে সমপর্যায়ের, সে ক্ষেত্রে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সুম্মা আলা মুহিবি সুন্নাহ,’ অর্থাৎ সুন্নাহর ব্যাপারে যার বেশি জ্ঞান আছে, সে প্রাধান্য পাবে। যদিও কোরআন ও সুন্নাহ—এ দুটিই আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত, তবুও কোরআনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, কারণ কোরআনটা সরাসরি সালাতের মধ্যে তেলাওয়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুন্নাহ সরাসরি তেলাওয়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তবে সালাতের বিধান যদি জানতে হয়, তাহলে অবশ্যই সুন্নাহ একজন ব্যক্তিকে জানতে হবে। এ জন্য দ্বিতীয় ধাপের যে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হলো সুন্নাহর ব্যাপারে যাদের কাছে বেশি জ্ঞান রয়েছে, তারা বেশি প্রাধান্য পাবে।
এর পরে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে যখন প্রশ্ন করা হলো, যদি সবাই এদিক থেকেও সমান হয়, তখন কে প্রাধান্য পবে? এ ব্যাপারে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আকবারুহুম সিন্নান,’ অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। কারণ, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির ভারসাম্য, উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা বেশি হয়ে থাকে।
রাসুলুল্লাহ (স.) এ নির্দিষ্ট মাপকাঠির আলোকে সালাতে ইমাম নির্ধারণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এরই আলোকে ইমামতির বিষয়টি নির্ধারিত হবে।