চড় মারার প্রতিশোধ নিতে ফারুককে হত্যা!
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার কালাডেবা এলাকার চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস ওমর ফারুক হত্যা মামলার রহস্য অবশেষে উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঘটনার ২০ দিন পর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে থানা পুলিশ এ রহস্য উদঘাটন করে। চড় মারার প্রতিশোধ নিতেই একই এলাকার মৃদুলকান্তি ত্রিপুরা ওরফে আকাশ (১৮) নামের এক তরুণ হত্যা করে ফারুককে।
পুলিশ হত্যাকারী মৃদুলকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁর কাছ থেকে নিহত ওমর ফারুকের ফোনসেটটি জব্দ করেছে। এরই মধ্যে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মৃদুল ত্রিপুরা ওমর ফারুককে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার খাগড়াছড়ি আমলী আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি মৃদুল ত্রিপুরা। তিনি রামগড় পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালাডোবার উপেন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে।
নিহত ফারুক উপজেলার কালাডেবার বাসিন্দা আলী নেওয়াজের ছেলে। তিনি পেশায় একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।
গত ১১ জুলাই ফারুককে হত্যা করা হয়। এর পরের দিনে ১২ জুলাই ফারুকের বাবা আলী নেওয়াজ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রামগড় থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান জানান, খুন করার পর নিয়ে যাওয়া ফারুকের ফোনসেট অনুসরণ করেই খুনিকে গ্রেপ্তার এবং হত্যার ক্লু উদঘাটন করা হয়।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি মৃদুল ত্রিপুরা জানান, গত রমজান মাসে একদিন তিনি সন্ধ্যার পর কালাডেবার একটি রাস্তার পাশে পা মেলে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ওমর ফারুক ওই পথ দিয়ে বাজারে আসার সময় বেখেয়ালে হঠাৎ মৃদুলের পায়ের সঙ্গে লেগে হোচট খেয়ে পড়ে যান। এতে ফারুক রেগে গিয়ে মৃদুলকে গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাঁর গালে সজোরে চড় মারেন ফারুক। এ ঘটনায় মৃদুলের মনে ক্ষোভ জন্মায়। ১১ জুলাই রাতে ফারুককে কালডেবার বাজারে দেখার পর মৃদুল চড় মারার প্রতিশোধ নিতে ফারুকের বাড়ির রাস্তার একটি স্থানে শক্ত কাঠের চেলা নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে মোবাইলে হেডফোন দিয়ে কথা বলতে বলতে ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ফারুক। এ সময় পেছন দিক থেকে এসে ফারুকের মাথায় সজোরে আঘাত করেন মৃদুল। এতে ফারুকের মাথা ফেটে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃদুল তাঁর স্মার্টফোনটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।
ওসি আরো জানান, ফারুককে হত্যা করে তাঁর স্মার্টফোনটি নিয়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোনের সুইচ অফ করে রাখেন মৃদুল। ওইদিন রাত ৪টা ৫৫ মিনিটে সুইচ অন করা হয়। কিছুক্ষণ পর আবার বন্ধ করা হয়। ১৩ জুলাই ওই সেটে নতুন সিমকার্ড লাগিয়ে ব্যবহার শুরু করেন মৃদুল। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়মিত অনুসরণ করতে থাকে। পুলিশ ফোনের ব্যবহারকারীর অবস্থানও নিশ্চিত হয়। গত ৩১ জুলাই গভীর রাতে ওসি শামছুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযানে নামে পুলিশ। কালাডেবা বাজার থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে মৃদুল ত্রিপুরাকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নিহত ফারুকের স্মার্টফোনটি। চতুর মৃদৃল ত্রিপুরা স্থানীয় একটি পুকুরে ফোন পেয়েছে দাবি করে প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ যে দোকানে মোবাইলটি মেরামত করা হয়েছিল সেই দোকানের মালিক শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয় যে ফোনে পানির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের সবকিছু স্বীকার করেন মৃদুল।