ঈদ দিবসে বিশ্ব নবীর নন্দিত আমল
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর আগমনের মধ্য দিয়ে নবুয়তের ধারাবাহিকতার উপসংহার টানা হয়। তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ ব্যতীত আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার কল্পনা করা যায় না।
আল্লাহর বাণীর মধ্যেও তার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, লোকদের বলে দিন—যদি তোমরা যথাযথই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো। (এতে) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ (সূরা আল ইমরান-৩১)
প্রিয় নবী (সা.) হলেন বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের সর্বোত্তম আদর্শ। যেমন সুমহান রাব্বুল আলামিন বলেন, অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সূরা-আযহাব : ২১)
একজন মুমিনের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করা। আর অনুসরণ করার পূর্বশর্ত হলো, তাঁর পবিত্র জীবনের আমল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করা। এ কথা ধ্রুব জ্যোতির ন্যায় স্পষ্ট যে, ইসলাম কোনো গতানুগতিক ধর্ম নয়; বরং ইসলাম হলো সর্বাঙ্গীণ জীবনব্যবস্থা। এর মধ্যে যেমন মহান আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ রয়েছে, তেমনি আনন্দ বিনোদন ব্যবস্থাও রয়েছে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) আমোদ-প্রমোদ ও খেল-তামাশার অনুমতি দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা হলো এর জলন্ত প্রমাণ।
যেমন—হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, তখন তিনি মদিনার স্থানীয় দুটি জাতীয় উৎসব দিবস সম্পর্কে অবগত হন। ওই দুই দিবসে তারা খেলাধুলা করে। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এ দিন দুটি কী রূপ? তাঁরা বললেন, জাহেলিয়াতের যুগে এই দুদিন আমরা খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূল (সা.) বললেন, এ দুদিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন আর তা হলো—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা (আবু দাউদ)।
মুসলিম উম্মাহ ঈদের দিন কীরূপ আমল (কর্মকাণ্ড) করবে, তা প্রিয় নবী (সা.) নিজে করে দেখিয়েছেন। আবার কখনো সাহাবিদের কর্মকাণ্ডে সম্মতি দিয়েছেন। ঈদের দিন প্রিয় নবীর আমলগুলোর মধ্যে কিছু আমল নিম্নে প্রদায়িত হলো :
যেমন—হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না। আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজ পড়ার আগে কিছু খেতেন না।
ঈদের দিন সর্বাগ্রে গোসল করা প্রিয় নবীর অন্যতম সুন্নত। তার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উত্তম কাপড়চোপড় পরিধান করে ঈদগাহের দিকে বের হতেন। হজরত জাবের (রা.)-এর কাছে রাসূলুল্লাহর (সা.) একটি জুব্বা ছিল। তিনি দুই ঈদ ও জুমাতে তা পরতেন। ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দিন নিজের সর্বাধিক সুন্দর পোশাক পরতেন। ঈদের দিন খুশবু ব্যবহার করা উত্তম।
ঈদের দিন নবী করিম (সা.) রাস্তা পরিবর্তন করে ঈদগাহে আসা-যাওয়া করতেন, অর্থাৎ এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন। আর ঈদগাহে গিয়ে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি)
ঈদের দিন রাসূল (সা.) প্রকাশ্যে নিম্নোক্ত তাকবির পড়তেন ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইলাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।
ঈদুল আজহার দিন প্রাণী কোরবানি করাছিল বিশ্ব নবীর একটি প্রিয় আমল। যেমন—হাদিস শরিফে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিন আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। (তিরমিযী) তাই তো প্রিয় রাসূল (সা.) ঈদুল আজহার দিন নিজ হাত মোবারক দিয়ে কোরবানি করতেন। জবাই করার পূর্বে পড়তেন ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’।
ঈদের দিন নৈতিকতার সীমা রক্ষা করে বিনোদনমূলক খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন—হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মহানবী (সা.)-কে আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সে সময়ে হাবশী যুবকরা মসজিদের সম্মুখে নেযা (বর্শা) নিয়ে খেলা করছিল। রাসূল (সা.) তাঁর চাদর দ্বারা (তখন) আমাকে আবৃত করে রেখেছিলেন, যাতে আমি তাঁর কান ও ঘাড়ের ফাঁক দিয়ে তাদের খেলা দেখতে পাই। অতঃপর তিনি আমার জন্য ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, যে পর্যন্ত না আমি নিজে সরে আসি। [হজরত আয়েশা (রা.) বলেন] সুতরাং তোমরা সে সময়কে একজন কচি বয়সের মেয়ের খেলা দেখার (সময়ের) সঙ্গে অনুমান করতে পারো, খেলা দেখার প্রতি যার স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে। (বুখারি ও মুসলিম)
লেখক : প্রভাষক, আরবি বিভাগ, উত্তর বাড্ডা ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা।