যে ৬ কারণে বাংলাদেশের কাছে মার্কিন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ
আর একদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান, সেই আলোচনা চলছে বাংলাদেশেও। রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট, ট্রাম্প না বাইডেন, কে জয়ী হলে কেমন প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ওপর? এমন আলোচনাই শোনা যাচ্ছে চারদিকে। এ নিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে একটি প্রতিবেদন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে সাধারণত তেমন পরিবর্তন আসে না। তবে এবারের নির্বাচনের পর দেশটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক। তাঁর মতে, যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচিত হন, দেশটির চীন-ভারত বিষয়ক সমীকরণে পরিবর্তন আসতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে।
শহীদুল হক বলেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে মুসলিম বিশ্ব নিয়ে তাঁর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। সেটিও বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। বাংলাদেশের প্রধান উদ্বেগ হলো তৈরি পোশাক রপ্তানি। ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে এ খাতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল জায়গাগুলো হলো :
১. করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন
২. শিক্ষার্থী ভিসা
৩. বৈধ অভিবাসন
৪. জিএসপি সুবিধা
৫. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
৬. বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান
এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক জোট।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে। গত মাসে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে। সফরে বিগান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান তাঁরা। এই ইস্যুতে তাঁরা বাংলাদেশের পাশে থাকবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তৃতির নীতি অনুসরণ করে আসছিল। তাতে পরিবর্তন আসছে। কারণ, ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক বেশ খারাপ। আর তাদের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।’
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মূল বিষয় হলো অর্থনীতি। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এটি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তাদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্রে কারা ক্ষমতায় এলো, তার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যা হচ্ছিল তা-ই হবে। আর বাইডেন এলে ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনীতি এবং ভাবমূর্তি তা কাটিয়ে উঠতেই ব্যস্ত থাকতে হবে। ফলে বহির্বিশ্ব নিয়ে ভাবার তেমন একটা সময় তাদের থাকবে না।’
অধ্যাপক ইমতিয়াজের মতে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সহনশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন অনেক পিছিয়ে গেছে। তাই অন্য দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তারা ভবিষ্যতে কবে, কতটুকু কথা বলতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমাদের (বাংলাদেশকে) শুধু মাথা ঠাণ্ডা রেখে উন্নয়নটা ধরে রাখতে হবে।’
আর শহীদুল হক বলেন, ‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়ন নিয়ে ভাববে। তবে সেটা সময় নিয়ে। তাঁর সেই ভাবনায় বাংলাদেশ লাভবানই হবে।’
রোহিঙ্গা সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশেই থাকবে বলে মনে করেন তাঁরা। আর অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাজারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে এরই মধ্যে দুই দেশের আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের একটি প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশের ওপরে।