কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা আজ
কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা আজ মঙ্গলবার। শাস্ত্রমতে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধনসম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী তিনি। তাই দীপাবলি ও কোজাগরি পূর্ণিমার দিন তার বিশেষ পূজা হয়।
প্রতিবছর দুর্গোৎসবের পরের পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূর্ণিমাকে বলা হয় কোজাগরি। আর এই পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীর পূজা করা হয় বলেই এর নাম কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা।
লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। তিনি বিষ্ণুর সহধর্মিণী ও তাঁর শক্তির উৎস। এ ছাড়া বিষ্ণু যখন যে-রূপে পৃথিবীতে অবতার হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন, লক্ষ্মীও তখন ভিন্ন ভিন্ন নাম নিয়ে তাঁর সঙ্গী হন।
এই পূজায় সাধারণভাবে মৌসুমি ফলমূল, নানাবিধ মিষ্টিসামগ্রী ও নারকেলের নাড়ু দেওয়া হয়। ফুলের মধ্যে জলপদ্ম, স্থলপদ্ম, শিউলি ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া অনেকে আবার এ পূজায় খিচুড়ি, ইলিশ ভাজা এবং নারকেলের দুধ ও আখের গুড়ের পায়েসও করে থাকেন।
বাঙালি হিন্দুদের ঘরে ঘরে পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী। বার্ষিক এই পূজা ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতিবার বাঙালি হিন্দুদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজা হয়।
প্রচলিত আছে, এক দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ (ব্রহ্মার মানসপুত্র) বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখ-কষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এসব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন। কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন। অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামের এক ধনী বণিক বাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। লক্ষ্মী তাঁকে লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাঁদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল।
একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় শ্রীনগরের এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করলেন। ফলে লক্ষ্মী তার ওপর কুপিত হলেন। তিনিও সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তী নগরে ভিক্ষা করতে লাগলেন। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে ওই যুবক অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইলেন। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এইভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হলো।