চারুকলায় পড়ুয়া সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘চারুকলা অনুষদ’ পিছিয়ে থাকে। খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দে থাকে ‘চারুকলা’। তবে চারুকলা নিয়ে লেখাপড়া করে ভালো ক্যারিয়ার গড়া যেতে পারে। বর্তমান সময়ে চারুকলা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এমন চিন্তার জন্ম দিতেই চারুকলায় পড়ুয়া সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে ‘অপ্রাকৃত প্রকৃতি’ নামের একটি শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলার সংগ্রহশালায় তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান চারুকলার শিক্ষার্থীদের ১০০টির বেশি ছবি স্থান পেয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহশালায় তিন দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল আবেদীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, সমগ্র সুনামগঞ্জের মধ্যে চারুকলায় পড়ছে হাতেগোনা কয়েকজন। তবে যারা এই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন, তারা খুব আগ্রহ করেই নিয়েছেন। এবং স্বাচ্ছন্দ্যে লেখাপড়াও করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন শিক্ষার্থীরা। খুব একটা ছুটি পাওয়া যায় না। তাই চাইলেও এমন প্রদর্শনীর আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে, করোনাকালীন এই সময়টাকে শিক্ষার্থীরা কাজে লাগিয়েছে। সবার পরিশ্রমের ফলে এই প্রথম এমন আয়োজন করতে পেরেছে সুনামগঞ্জের চারুকলায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এখন থেকে নিয়মিত এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাফান্নুম কাগজী বলেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালে সবকিছু বন্ধ ছিল। ক্লাস বন্ধ থাকায় কোনো কিছুই করা যাচ্ছিল না। আমরা সুনামগঞ্জের যারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় লেখাপড়া করি তাদের সবাইকে নিয়ে কিছু করা যায় কিনা চিন্তা করি। আমরা সিদ্বান্ত নেই, তরুণ প্রজন্মের জন্য কিছু করার। যাতে, মানুষ চারুকলা সম্পর্কে বুঝতে পারে এবং আগ্রহ বাড়ে।’
একই অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইরতিজা কাগজী বলেন, ‘পৃথিবীতে ছবি দিয়ে অনেক কিছু বোঝানো সম্ভব। হাজার লাইন লেখা দিয়ে যেখানে আবেগ, অনুভূতি, কষ্ট, হাসি-কান্না বোঝানো যায়, সেখানে একটি ছবি সবকিছু একবারে বোঝাতে পারে।’
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) ড্রয়িং অ্যান্ড পেইনটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্র তালুকদার বলেন, ‘সুনামগঞ্জের মানুষ এখনো চারুকলা বিষয় নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তাই আমরা চেয়েছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই বিষয়ে জানাতে, যে এই বিষয় নিয়েও লেখাপড়া করা যায়।’
ঢাবির চারুকলার গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রুনা শাহীন আরা লেইস বলেন, ‘আমরা যখন এই বিষয়ে লেখাপড়া করেছি, তখন মানুষ খুব একটা এই বিষয় সম্পর্কে জানত না। তবে এখন সুনামগঞ্জের অনেকেই চারুকলা নিয়ে পড়ছে। এই বিষয় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই ভালো লেগেছে। এমন আয়োজন চারুকলার প্রতি আরো আগ্রহ বাড়াবে বলে মনে করি।’
প্রদর্শনীতে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী সুনীল শুক্লা, হেরল রশীদ, তারেক আমীন ও জয়ন্ত কুমার তালুকদারেরও ছবি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির চারুকলার প্রশিক্ষক দীপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী স্বপন, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী রুনা শাহিন আরা লেইস, শিক্ষার্থী শুভ্র রায়, তাফান্নুম কাগজী, ইরতিজা কাগজী ও ঋতুপর্ণা তালুকদার সাথী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃণাল বণিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরুণ দ্যুতি চক্রবর্তী ও জয় তালুকদার, ইউডার শিক্ষার্থী শুভ্র তালুকদার, শিক্ষার্থী কারিশমা দেবী মনি ও ইমরান হোসেন মাসুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌম্য রায় অমিত, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অয়ন চৌধুরী এবং ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থী প্রান্ত চন্দের ছবি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।