বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থানে চলছে ম্যুরাল তৈরির কাজ
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে ভাষণকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়। বঙ্গবন্ধু যে স্থানে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানটি সংরক্ষণ ও বঙ্গবন্ধুর তর্জনি উঁচু করে রাখা ম্যুরালের কাজ এগিয়ে চলছে।
২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে স্থানটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
তবে কাজটি কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনবিই) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। এমনকি এ সম্পর্কে কোনো তথ্যও দিতে চাননি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু পার্কের সেই স্থানে গত ১ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, স্থাপনা তৈরির মূল গেটে আবদুর রহমান নামের একজন কাজটির তদারকি করছেন। প্রথমে বাধা দিলেও পরিচয় দেওয়ার পর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল বড় স্থানজুড়ে ওই ম্যুরাল তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে। এ ছাড়া ম্যুরালের নিচে বিশাল বড় একটি পার্কিংয়ের স্থান তৈরি করা হচ্ছে। উপরে আরও নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চলছিল।
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের (এনবিই) সুপারভাইজার দাবি করা আবদুর রহিমের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনারা কত দিন ধরে কাজ করছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুরু থেকে এ কাজের সুপারভাইজার হিসেবে আছি। কিন্তু এখনি বলতে পারছি না মূলত কবে থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। কাগজ দেখে বলতে হবে।’ কিন্তু তিনি আর এর সঠিক সময় বলেননি। পরে কয়েকবার তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি।
এখনও কত দিন লাগতে পারে কাজটি শেষ হতে- এমন প্রশ্নে আবদুর রহিম বলেন, ‘সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে আরও অন্তত দুই বছর লাগতে পারে সব কাজ শেষ হতে। এর বেশি তথ্য লাগলে পিডব্লিউডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
কিন্তু পিডব্লিউডির দুজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
তবে মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ- তৃতীয় পর্যায়’ নামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানগুলো সংরক্ষণ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করায় ভাষণ দেওয়ার স্থানটি সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধীন ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থানগুলোতে ভাস্কর্য নির্মাণ, স্বাধীনতা টাওয়ার প্লাজার রেনোভেশন, জনসভার মঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া, বসার বেঞ্চ, শিশু পার্কের দেয়ালে ম্যুরাল স্থাপন এবং বিভিন্ন ধরনের ১৩টি রাইড স্থাপন ও জলাধার নির্মাণ করা হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার স্থান সংরক্ষণ করা হবে।
জাতীয় মুক্তির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানটি সংরক্ষণের অন্যতম উদ্যোক্তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মুক্তির সনদ। ‘তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাক’- এ ভাষণ শুনেই বাঙালি জাতি সশস্ত্র সংগ্রামের ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। ৭ মার্চ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার মূলমন্ত্র ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ এখন শুধু বাংলাদেশের মানুষেরই সম্পদ নয়। গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের এক অনবদ্য দলিল এটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ কারণেই আমরা এ স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। এর কাজ এখন এগিয়ে চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।