আলুর উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না মুন্সীগঞ্জের চাষিরা
আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলা। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়েছে আলু উত্তোলন। গত বছর আলুর দাম নিয়ে কৃষকরা খুশি থাকলেও এবার দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। কেননা এবার প্রতিকেজিতে আলুর উৎপাদন খরচ ১৫ থেকে ১৬ টাকা আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকায়। হিমাগারে সংরক্ষণ ও পরিবহণ খরচ মিলয়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা লাগছে। এতে করে দাম নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় দেখা দিয়েছে। আলুর দাম সরকারকে নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ৩৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ২৬৫ হেক্টর জমিতে বেশি আলু আবাদ হয়। গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল। চার দফা বন্যার পানি দেরিতে নামার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও জমিগুলোতে টিএসপি সারের পরিবর্তে ডিএফপি সারের ব্যবহারের কারণে আলু গাছ পরিপক্ক হয়েছে।
সদর উপজেলা আলু ব্যবসায়ী ফয়সাল মৃধা বলেন, ‘ সদরে আট হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমান বাজারে কেজিপ্রতি ১১ থেকে ১২ টাকা। তবে বন্যার কারণে ফসল ফলাতে বেশি সময় লেগেছে ও ফলন খুব কম। সেজন্য উৎপাদন খরচ ১৫ থেকে ১৬ টাকা। প্রতি কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকার মতো ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। এসব আলু হিমাগারে সংরক্ষণ ও পরিবহণ খরচ মিলয়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা পড়বে। সাধারণ কৃষক হতাশায় রয়েছে। এবার আলুর বাজারের অবস্থা খারাপ।’
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, ’আলুর ফলন কম হয়েছে। এর কারণ বৃষ্টি আসেনি এবং আলুর গাছে রোগ দেখা দেয়। ১৪ থেকে ১৫ টাকা আলু লাগাতে খরচ হয়েছে। এখন বাজারে দাম আছে ১০ থেকে ১১ টাকা। সরকার যদি দাম নির্ধারণ করে দেয় তাহলে ভালো হবে।’
জেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘বর্তমানে যারা জমি থেকে আলু উত্তোলন করছে তারা বিঘাপ্রতি ১৪০ মণ আলু পাচ্ছে। এতে করে হেক্টর প্রতি ৩৭ টন ফলন আসে। আমরাও বিস্মিত এতো অল্প সময়ের মধ্যে ভালো ফলন হয়েছে। এবার পোকা মাকড়ের আক্রমণও তেমন ছিল না। এখনো গাছ তাজা রয়েছে। গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল, এ বছর দাম কিছুটা কম। প্রত্যাশা হচ্ছে উৎপাদনকৃত আলুগুলোকে যদি সরকার সংরক্ষণ করে যেমনটি মৌসুমে ধান-চাল করে সেরকম। এটি করা হলে সারা বছর আলুর দাম হাতের নাগালে থাকাবে।’
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এছাড়া আলুভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি গড়ে তোলে যদি বহুমাত্রিক ব্যবহার যদি বৃদ্ধি করা যায় তাহলে আলুর দাম কখনো কমবে না। বৃষ্টির আগে যারা আলু লাগিয়েছে তাদের ফলন হয়েছে কম। পরে যারা করেছে যাদের বয়স ১১০ থেকে ১২০ দিন ।এসবের কিন্তু ফলন কমেনি। আলুর উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১ টাকা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ১১ টাকার নিচে যদি বিক্রি করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। যদি ১৫ টাকার উপরে ২০ টাকার মধ্যে যদি দাম থাকে তাহলে কারো পক্ষে সমস্যা হবে না।’