আপনার জিজ্ঞাসা
স্ত্রীদের প্রহার বিষয়ে আয়াতের ব্যাখ্যা কী?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭৪৫তম পর্বে মো. জাহিদুল হাসান, লালবাগ, ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে স্ত্রীদের প্রহার করার ক্ষেত্রে ইসলামের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। অনুলিখন করেছেন সজীব খান।
প্রশ্ন : আল-কোরআনের সূরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে স্ত্রীদের প্রহার করার কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : এটি একটি স্পষ্ট আয়াত। এখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোনো বিষয় নেই। এ আয়াতে একেবারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, শুধু একটি ক্ষেত্রে ইসলাম একটি ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। আর সেটা প্রাথমিক পর্যায়েও নয়।
ইচ্ছা হলেই যে স্ত্রীকে আঘাত করা যাবে, বিষয়টি এমন নয়। আয়াতের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। একেবারে সর্বশেষ পর্যায়ে গিয়ে এ ট্রিটমেন্ট।
যখন কোনো স্ত্রী অবাধ্য হয়ে যায় বা অবাধ্যতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় বা স্বামী তার যে হক রয়েছে, তা আর স্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না বা কোনোভাবেই আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে স্বামীর হক বিনষ্টকারী স্ত্রীকে কোরআনে করিমে নাসেজা বলা হয়েছে। নাসেজা হচ্ছে সেই নারী, যে স্বামীর অবাধ্য হচ্ছে বা স্বামীর হক নষ্ট করছে।
এ ধরনের কাজ যদি কোনো নারী করে থাকে, ইসলামে তাকে সর্বশেষ পর্যায়ের ট্রিটমেন্টের আগে বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা পর্যন্ত বলেছে। তার পরও যদি দেখা যায় যে তাকে বোঝানো যাচ্ছে না বা তার সীমা লঙ্ঘন বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে যদি তাকে সংশোধন করার কোনো সুযোগ থাকে, তাকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য প্রহার করার অনুমোদন ইসলাম দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন পিতা যখন সন্তানকে আঘাত করে বা প্রহার করে, সেটা করে তাকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য, হত্যা করার জন্য নয়। এটা জিঘাংসাবৃত্তি নয়। শিক্ষকও এভাবে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য বা শিক্ষাদানের জন্য প্রহার করেন। এটা কোনো শাস্তি নয়।
মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা আছে, তা হলো মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম করার চেষ্টা করে বা অবাধ্য হতে চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে নফসের একটা দাবি আছে। নফসের কারণে মানুষ অবাধ্য হতে চায়। এই দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সন্তান অবাধ্য হয়ে যাবে। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে। এবং সে ক্ষেত্রে প্রহার করা বাধ্যতামূলক।
তাই ইসলাম এই প্রহারের বিষয়টিকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছে। তাও আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা স্পষ্ট করেছেন, সেটা কোন ধরনের হবে। কোরআনে কারিমের মধ্যে অনেক বড় বড় বিষয়, যেমন—সালাতের মতো বিষয়ে এত বিশ্লেষণ করা হয়নি। কিন্তু এই মাসআলাটি অনুমোদন দেওয়ার পরও আল্লাহতায়ালা এর কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে কীভাবে হবে। এর পদ্ধতিটা কোরআনে কারিমের মধ্যে বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে কথিত বুদ্ধিজীবী যাঁরা আছেন, তাঁরা যেন এটাকে ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ না করেন। এ জন্যই মূলত আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা কোরআনের মধ্যে বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
কিন্তু এর পরও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ইসলাম সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি দিয়েছে, তালাকের মাধ্যমে এই সম্পর্ক না টেকানোর মাধ্যমে। এর জন্যই ইসলাম তালাকের পদ্ধতি দিয়েছে। তালাক হচ্ছে ইসলামের যে সৌন্দর্য রয়েছে, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে কোনো সংসার টিকতে পারে না।
নির্যাতনের বিষয়টি ইসলামে হারাম। যারা ইসলাম সম্পর্কে জানে না, তারা প্রহার করে থাকে। তবে নারী নির্যাতন হারাম। আর যারা নারী নির্যাতন করে, তারা মূর্খ ছাড়া কিছু নয়। মূর্খরাই এ কাজ করতে পারে।
স্ত্রীকে ভালোবেসেই সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। সংশোধনের বিভিন্ন পর্যায়ে যাওয়ার পরও যদি তা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে মৃদু প্রহারের কথা বলা হয়েছে। এবং এটা কোনো শাস্তি নয়। এটা নারী নির্যাতনও নয়। এর পরও না হলে তো তালাকের ব্যবস্থা রয়েছে। আর নারী নির্যাতনের যে বিষয়টি আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্যাতন ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়। সেটা কোনো প্রশ্রয় ইসলামে পেতে পারে না।