হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা : ঘটনাস্থল পরিদর্শনে র্যাবের ডিজি
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তি করা হয়েছে এমন দাবি করে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে গতকাল বুধবার হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার পর এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নোয়াপাড়া গ্রাম পরিদর্শন করেন তিনি।
এ সময় র্যাবের ডিজি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেউ রেহাই পাবে না। জড়িতদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এই গ্রামের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’ এ সময় সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করে সব ধর্মের প্রতি উদারতার আহ্বান জানান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এর আগে গতকাল বুধবার এই ঘটনার পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান।
শাল্লা উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা চালানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এরপরই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শানে রিসালাত সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের সামনে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেই সূত্র ধরে পাশের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের ঝুমন দাস আপন তাঁর ফেসবুকে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন বলে দাবি করা হয়। একপর্যায়ে ঝুমনকে খুঁজে বের করে গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশে দেয় লোকজন। এরপরও লোকজন শান্ত না হয়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নোয়াপাড়া গ্রাম ঘিরে রাখে। পরে তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে মঙ্গলবার ফেসবুকে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট দেন ওই গ্রামের যুবক ঝুমন দাস আপন। সে রাতেই এলাকাবাসী তাঁকে স্থানীয় শাঁসকাই বাজারে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন এবং হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতারা এ ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
‘এ অবস্থার মধ্যেই আজ সকালে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ হেফাজত সমর্থক বাসিন্দা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধ হন। তারপর তারা ওই যুবকের বাড়িসহ আশপাশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে হামলা চালান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে’, বলেন ওসি।
এসপি মিজানুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আর এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে।