ছায়ানট নৃত্য উৎসবে মুগ্ধ দর্শক
শেষ হয়ে গেল ছায়ানট নৃত্য উৎসব। দুদিন আনন্দঘন, স্নিগ্ধ মুহূর্তকে সঙ্গী করে মেতেছিলেন দর্শক, শিল্পী আর ছায়ানটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দুদিনব্যাপী নৃত্য উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন আয়োজক সংগঠন ছায়ানটসহ বিভিন্ন নৃত্য সংগঠনের শিল্পীরা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। তার পর সন্ধ্যারাত পর্যন্ত শিল্পী আর বিভিন্ন নৃত্য সংগঠনের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে উৎসব।
প্রথম দিনের আয়োজনের সূচনা হয় মণিপুরী নৃত্যের মাধ্যমে। মণিপুরী সম্প্রদায়ের জীবনের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে মণিপুরী নৃত্যের উপলক্ষ। হোক তা বিবাহ, জন্ম কিংবা আর কোনো উৎসব। নৃত্য ও সংগীতের সঙ্গে যোগ নেই এমন মানুষ মণিপুরে দুর্লভ। উৎসব মণ্ডপে সাধারণের সঙ্গে এসে মিলিত হোন রাজসভাসদরা।
সেদিন মণিপুরী পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ, তামান্না রহমান, নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র, ওয়ার্দা রিহাব, ধৃতি নর্তনালয়। ধ্রুপদি নৃত্যকলায় ওড়িশি নৃত্যের উদ্ভব দ্বিতীয় শতকে উড়িষ্যায়। দেবদাসীরা ভগবানের সম্মুখে আচার হিসেবে যে নৃত্য পরিবেশন করতেন, তাই ওড়িশির আদিরূপ। নৃত্যের এ ঐতিহ্য তার উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছে ১২০০-১৬০০ শতাব্দীতে। ব্রিটিশদের উড়িষ্যা দখলের পর থেকেই এ উৎকর্ষের পতন শুরু হয়। পরবর্তীকালে একে পরিমার্জিত রূপ দেওয়া হয়।
ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করলেন বেনজির সালাম সুমি এবং নৃত্য ছন্দ। ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ, পূজা সেনগুপ্ত, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার, অমিত চৌধুরী ও শুভ্রা সেনগুপ্ত। ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন পুষ্পাঞ্জলি আলারিপু, পূজা সেনগুপ্ত করেন তোডিয়াম মাঙ্গালাম, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের উপস্থাপনা ছিল জতিস্মরম, অমিত চৌধুরী পরিবেশন করেন নরসিংহ কৌতুভম এবং শুভ্রা সেনগুপ্ত উপস্থাপন করেন তিল্লানা।
কত্থক নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন মনিরা পারভীন হ্যাপী, স্নাতা শাহরিন, মো মাসুম হোসাইন এবং নৃত্যাঞ্চল।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন প্রথম পর্বে মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন শান্তনা দেবী এবং দীপংকর সিংহ অনিক। শিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা উপস্থাপন করেন প্রবন্ধনর্তন। ফারহানা আহমেদ পরিবেশন করেন ব্রহ্মতাল কৃষ্ণ নর্তন এবং ভাবনা নৃত্য সংগঠন পরিবেশন করে রাধা অভিসার।
ওড়িশি নৃত্য পল্লবী উপস্থাপন করেন জসীমউদ্দিন। পল্লবী শব্দের অর্থ বিস্তার। নির্দিষ্ট রাগ অনুযায়ী এ নৃত্যের বিস্তার ঘটে। যে রাগ অনুযায়ী এর বিস্তার সে রাগ অনুযায়ীই পল্লবীর নামকরণ করা হয়। এরপর ওড়িশি নৃত্য মোক্ষ পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ। ওড়িশি নৃত্যের সর্বশেষ পর্বের নাম মোক্ষ। মোক্ষ শব্দের অর্থ মুক্তি বা নির্মাণ। এর শৈলী দুই ভঙ্গিতে বিভক্ত, চৌকোনো বা চৌকো, যা পুরুষ আঙ্গিক এবং ত্রিভঙ্গী, যা মূলত নারী ভঙ্গিমাকে বোঝায়।
গৌড়ীয় নৃত্য, সহস্র বছরের শাস্ত্রীয় বাংলা ঐতিহ্যের এক বিলুপ্তপ্রায় নৃত্য হল এই গৌড়ীয় নৃত্য। উৎসবে গৌড়ীয় নৃত্যের যে নিবেদন ছিল, তা হলো দশাবতার। পরিবেশন করেন র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস।
সুভ্রামানিয়াম কৌতুভব বা স্তুতি হলো ভরতনাট্যম নৃত্য। শিব-শক্তির পুত্র কার্তিকের গুণগান নিয়ে রচিত এই স্তুতি। তরুণ, বীর্যবান এবং অশুভ শক্তির নাশক দেবতা কার্তিক দেবতাগণের সেনাপতি। তাঁর দুই সঙ্গিনী ওয়াল্লী ও দেবযানীকে নিয়ে তিনি মহামহিমায় শুভ্রমানিয়ামরূপে পূজীত। এবং তিনিই পিতৃদেব শিবকে ১২ কোটি পদ্যের মাধ্যমে ওমকার ধ্বনির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সুভ্রামানিয়াম কৌতুভব পরিবেশন করেন জুয়েইরিয়াহ মৌলি, নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন অমিত চৌধুরী।
নৃত্যশিল্পী বেলায়েত হোসেন খান পরিবেশন করেন ভর্নম। ভরতনাট্যম পর্বে আরও ছিল জাগো আর্ট সেন্টারের উপস্থাপনা। এছাড়া কত্থক নৃত্য উপস্থাপনায় ছিলেন মুনমুন সেন, তাবাসসুম আহমেদ, তাহনীনা ইসলাম সুমি এবং কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়।