আপনার জিজ্ঞাসা
দাজ্জাল কি পৃথিবীতে আসবে?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭৫৩তম পর্বে চিঠির মাধ্যমে রাজধানীর লালবাগ থেকে মো. জাহিদুল হাসান দাজ্জালের পৃথিবীতে আগমন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অনুলিখনে ছিলেন মনিরুজ্জামান মনু।
প্রশ্ন : দাজ্জাল কী? দাজ্জাল কি এই পৃথিবীতে কখনো আসবে?
উত্তর : কোন সন্দেহ নেই, ইসলামী মৌলিক আকিদার মধ্যে একটি আকিদা হচ্ছে দাজ্জালের বিষয়টি। দাজ্জাল শব্দটি বের হয়েছে ‘দাজালা’ শব্দ থেকে। আল দাজিল থেকে আল দাজালা। এটি একটি নদীর নাম। এই নদীর পানিগুলো নিকষ কালো ছিল এবং খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। এ জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছে দাজালা। দাজাল শব্দটা অন্ধকারকে বোঝায়। এ অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বোঝানোর জন্য মিথ্যাচারকারীকে দাজ্জাল বলা হয়ে থাকে। মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে থাকে, মিথ্যাবাদী অথবা মিথ্যাচারী যে আছে, তাকে বোঝানোর জন্য দাজ্জাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দাজ্জাল সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী হবে।
আরবি ভাষায় মিথ্যাবাদী বোঝানোর জন্য আরো শব্দ রয়েছে। তার মধ্যে শুধু একটি শব্দ রয়েছে আল গাদ্দাব, মানে সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। যে ব্যক্তি সরাসরি মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলে থাকে। কিন্তু এ দাজ্জাল ব্যক্তি নিজের পরিচয়কে গোপন করে মানুষের সঙ্গে মিথ্যা প্রতারণা করছে, এ জন্য তাকে দাজ্জাল বলা হয়েছে। তো দাজ্জাল একজন ব্যক্তি হবে।
দাজ্জাল একজন মানুষ হবে এবং আদম সন্তান হবে। তার পরিচয় কী হবে, রাসুল (সা.) তা একাধিক হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সহিহ বুখারি হাদিসে দাজ্জালের পরিচয় হবে যে তার কপালের ওপর লেখা থাকবে কা-ফা-রা অর্থাৎ কাফের লেখা থাকবে এবং এটি মানুষ দেখতে পারবে। তারপর একটা চোখ অন্ধ হবে, আরেকটা চোখ হবে মানে ফোলা বেশে আছে, অস্বাভাবিক হবে। এ ধরনের অস্বাভাবিক এ ব্যক্তিটির আগমন হবে কিয়ামতের আগে। কিয়ামতের আগে রাসুল্লাহ (সা.) যে ১০টি বড় বড় চিহ্নের কথা উল্লেখ করেছেন, এগুলো কিয়ামতের একেবারে বড় চিহ্ন। মানে সুস্পষ্ট নিদর্শন। এর পরই সরাসরি কিয়ামত হয়ে যাবে। এরপর কিয়ামত আর অপেক্ষা করার থাকবে না। ঠিক কিয়ামতের আগে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের এই ১০টি চিহ্ন মানে যে চিহ্নগুলো শুরু হবে, তার মধ্যে দাজ্জাল, খুরুযে দাজ্জাল হচ্ছে মূলত একেবারে প্রথম পর্যায়ের উপসর্গ। যেখানে খুরুযে দাজ্জালের আগমনের কথা সবাই জানবে। তখন ইমানদার ব্যক্তিরাও জানবে এবং বেইমান কাফেররাও জানবে। এ দাজ্জাল ৪০ দিন অবস্থান করবে পৃথিবীতে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাঁর আত্মপ্রকাশের পর ৪০ দিন থাকবে এবং এই ৪০ দিনে সে সারা পৃথিবী সফর করবে। সমগ্র পৃথিবী চষে বেড়াবে, মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে, বিভ্রান্ত করবে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, ইস্পাহান (বর্তমানে ইরানে অবস্থিত) থেকে সেগুলো আসবে এবং তার একদল অনুসারী সেখানে তৈরি করবে অনেক বড় ধরনের। তাদের নিয়ে সে সারা পৃথিবীতে মানে তার ডান হাতে এবং বাম হাতে জান্নাত এ জাহান্নাম থাকবে। মিথ্যা জাহান্নাম-জান্নাত মানুষকে দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন করবে তাঁর প্রতি ইমান আনার জন্য এবং এই ফেতনাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ফেতনা হিসেবে হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাতের মধ্যে যে চারটি বিষয় থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আশ্রয় কামনা করতে বলেছেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘হে আল্লাহ আমি দাজ্জালের ফেতনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ সুতরাং আমাদের আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আশ্রয় চাইতে হবে দাজ্জালের ফেতনা থেকে। কারণ এটি এত ভয়াবহ ফেতনা যে, ইমানদার ব্যক্তি ইমানের ওপর অবিচল রাখতে বা টিকে থাকতে পারবে না।