কী ঘটতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর দীর্ঘ দুই দশকের আগ্রাসন শেষে নিজেদের জিম্মায় যাচ্ছে আফগানিস্তান। কিন্তু, যুদ্ধের শেষ মানে শান্তির পথে যাত্রা—এ কথা হয়তো আফগানদের বেলায় খাটছে না। আফগান সরকারকে টেক্কা দিয়ে একের পর এক অঞ্চল দখলে নিচ্ছে তালেবান। অনেকে এরই মধ্যে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সাফাই গেয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন সেনাদের আর আফগানিস্তানে পাঠাতে চান না তিনি।
তবে বাইডেন স্বীকার করেছেন, আফগান সরকারের পক্ষে পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রাখার সম্ভাবনা ‘একেবারেই ক্ষীণ’।
যুক্তরাজ্যের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল স্যার নিক কার্টার বিবিসিকে বলেছেন, আফগানিস্তানে সম্ভাব্য তিনটি পরিস্থিতির যেকোনো একটি দেখা দিতে পারে। প্রথমত, ‘বর্তমানে সবগুলো প্রাদেশিক রাজধানী শহর যেভাবে আফগান সরকারের দখলে রয়েছে, এটা হয়তো তারা ধরে রাখতে পারবে।’
নিক কার্টার বলেন, ‘দ্বিতীয়টি ঘটলে তা হবে খুবই দুঃখজনক। সরকার ভেঙে পড়বে। ১৯৯০ সালে আমরা যেমন আফগানিস্তান দেখেছিলাম—তালেবান দেশের একাংশ শাসন করবে। আর, বাকি জায়গাগুলোর যে যে স্থানীয় জাতি গোষ্ঠী, তারা সেসব এলাকা শাসন করবে।’
কার্টার বলেন, ‘তৃতীয়টি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাজনৈতিক জায়গা থেকে ছাড় দিতে দেখা যেতে পারে। যে আলোচনা চলমান রয়েছে। ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। কিন্তু বিদেশি বাহিনীর বিপুল সেনা এখনও সেখানে রয়ে গেছে।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়ন্দা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ছয় মাসের মধ্যে গোটা আফগানিস্তানের দখল নেবে তালেবান। যদিও আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দাবি করেছেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালেবানকে উপত্যকাগুলোতেই সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম এবং এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গা সরকারি বাহিনী নতুন করে দখলেও নিয়েছে।
আফগান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সরকারি বাহিনী পশ্চিমাঞ্চলীয় কালা-ই-নাও শহরের সরকারি ভবনগুলো পুনর্দখল নিতে পেরেছে। সম্প্রতি তালেবান শহরটিতে ঢুকে এর দখল নিয়েছিল।
এদিকে, আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যকার শান্তি আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে যথারীতি তা ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই শান্তি আলোচনায়।
সম্প্রতি বাগরাম সামরিক ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ২০০১ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ যুদ্ধের ইতি টেনেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ন্যাটো জোটের সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। এবার আফগান সামরিক বাহিনী আর তালেবানের মধ্যকার শক্তি-সামর্থ্যের প্রদর্শনীতে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে আগামী দিনের আফগানিস্তানের ভাগ্য।