কৃষি উদ্যোক্তা হতে চান?
কৃষির সাথে এ দেশের মানুষের প্রতি মুহূর্ত অটুট বন্ধনে আবদ্ধ। প্রতিটি খামারের একটি গল্প আছে আর এই গল্পের সাথে জুড়ে আছে খামারির জীবন। আপনিও হতে পারেন এমন একজন খামারি, যিনি স্বপ্ন বোনেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার।
আপনার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া, যেখানে আপনি এন্ড-টু-এন্ড শরিয়াসম্মত পদ্ধতিতে ব্লকচেইনভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে বিনিয়োগ করতে পারবেন খুব সহজে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া নিয়ে এসেছে মুদারাবাভিত্তিক প্রিসিশন এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম।
২০১৬ সালে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া-র যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের (বিএসএফএফ) সাথে পার্টনারশিপ গড়ে তোলার মাধ্যমে। এই পার্টনারশিপের আওতায় বাংলাদেশ মৎস্য মন্ত্রণালয়ের জন্য তৈরি হয় ই- ট্রেসিবিলিটি সফটওয়্যার, যার তহবিল আসে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সলিডারিডাড.এশিয়া নেটওয়ার্ক থেকে। এই সফটওয়্যার তৈরির লক্ষ্যে পরবর্তী তহবিল অনুমোদিত হয় উইনরক ইন্টারন্যাশনাল থেকে। ই-ট্রেসিবিলিটি হল এমন এক সফটওয়্যার যা ভ্যালু চেইনের ওপর স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা তৈরি করে। এর মাধ্যমে কৃষক ভাইদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যে অধিক লাভ অর্জন করা সম্ভব হয়। শুধু তা-ই নয়, ই-ট্রেসিবিলিটির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হয় এবং খাদ্য পণ্যের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে ফলে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত এসডিজি অর্জনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মূলত ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া আয় করে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে (সিড ও ফিড সরবরাহ এবং ফসলাদি বিক্রয়)। এই ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে প্রথম বারের মতো ২.৫% ফসল বিমা পৃথক রেখে মুনাফা নির্ধারিত হচ্ছে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, কৃষক ভাইদের সাথে কদমে কদম মিলিয়ে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া অভ্যন্তরীণ এবং ইন্টারন্যাশনালি এমন মার্কেট তৈরি করতে যাচ্ছে, যেখানে থাকবে না কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর রোষানল। সরাসরি ফার্ম টু ফোর্ক-এর মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে ভোক্তা উপভোগ করতে পারবেন নিরাপদ ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খাদ্যপণ্য।
এরই ধারাবাহিকতায় কোভিড-১৯ সময়কালীন প্রতিকূলতা ঠেকাতে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া তৈরি করেছে কম্পোসিট ফার্মিং প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে কৃষক যেমন সারা বছর চাষ করতে পারবেন, তেমনি নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে সব সময়। এর পাশাপাশি কৃষি সেক্টরে নতুন টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের গড়ে তোলা হবে মূল্যবান দক্ষ জনশক্তিতে।
এ প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া নিয়ে এসেছে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং যেখানে জমি নয় বরং তথ্যকেই রাখা হবে বন্ধক হিসেবে, যা পরবর্তীতে ব্যাংক, ইন্সুরেন্স এবং অন্যান্য সেক্টরে কৃষকের অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্সকে করবে আরও সহজ। এই ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং নিয়ে আসার মূল কারণ হলো, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এবং ব্লকচেইনের মাধ্যমে ভ্যালু চেইনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, বিশেষ করে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ।
ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া থেকে যখন কৃষকদের ডিজিটাল ফাইন্যান্স সরবরাহ করা হয়, তখন তাঁদের নির্দিষ্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হয়, যেখানে সুনির্দিষ্ট বারকোড থাকে এবং তৈরিকৃত সিস্টেম ড্যাশবোর্ডে সেই কৃষকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়। তাঁদের যে পরিমাণ ফাইন্যান্সিংয়ের প্রয়োজন হয় ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া তা অটোমেশনের মাধ্যমে প্রদান করে। অটোমেশনের ফলে মৎস্য খাদ্য (ফিড), শ্রম এবং কৃষকের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করে তারা। হার্ভেস্টিংয়ের পর যখন কাঙ্ক্ষিত খাদ্যপণ্য উৎপাদিত হয়, তখন ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া কৃষকদের কাছ থেকে তা পুনরায় ক্রয় করার প্রস্তাব জানায়। উল্লেখ্য, প্রস্তাবের চেয়েও যদি আরও উচ্চ প্রস্তাব কৃষকেরা পেয়ে থাকেন তবে তাঁরা তা গ্রহণ করতে পারবেন এবং ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া হতে প্রাপ্ত পূর্ববর্তী সব খরচাদি পরিশোধ করতে পারবেন।
ফার্মারসমার্কেট.এশিয়ার ই-ট্রেসিবিলিটির সফটওয়্যারের আওতায় ব্লকচেইন পদ্ধতির মাধ্যমে সাফল্যের সাথে উৎপাদিত হচ্ছে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বাগদা চিংড়ি। অ্যাকুয়াকালচার সেক্টরের পাশাপাশি ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া পোল্ট্রি, ক্যাটল এবং হর্টিকালচার সেক্টরেও এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে অনেক কৃষককে বাগদা চিংড়ি বিনিয়োগের আওতায় আনা হয়েছে। এই প্রজেক্টে কৃষক প্রতি বিনিয়োগ প্রায় ৪,৩৫,০০০ টাকা এবং মুনাফার হার প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ। কৃষকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স , ফার্মারসমার্কেট.এশিয়ার ই-ট্রেসিবিলিটির সফটওয়্যার সিস্টেম এবং সিপি ফিডের কম্পোসিট সলিউশন চিংড়ি চাষে যুক্ত করেছে এক নতুন মাত্রা এবং সাফল্য।
ফার্মারসমার্কেট.এশিয়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে ১,৭৬,০০০ কৃষকের এই ব্লকচেইন পরিচালিত বিনিয়োগের আওতায় নিয়ে আসা, যেখানে সর্বমোট বিনিয়োগ হবে ৭৬৫ কোটি টাকা (আনুমানিক) এবং উৎপন্ন হবে প্রায় ১,৭৬,০০০ টন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বাগদা চিংড়ি, যার বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। উৎপাদিত চিংড়ি বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতি হয়ে উঠবে আরও সম্ভাবনাময়। বর্তমানে প্রযুক্তি, গুণগত মান এবং কমপ্লায়েন্স না থাকার কারণে বাংলাদেশে উৎপন্ন বাগদা চিংড়িসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য বহির্বিশ্বের পাইকারি বাজারে চলে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যকে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচার করার জন্য ফার্মারসমার্কেট.এশিয়া কৃষকদের সাথে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফার্মারসমার্কেট.এশিয়ার এই যাত্রায় যুক্ত হয়ে এবং কৃষিশক্তিতে বিশ্বাস রেখে আপনিও নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন একজন গর্বিত ডিজিটাল চাষি হিসেবে।