মুন্সীগঞ্জে নৌকার প্রার্থীর গণসংযোগে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি হুঁশিয়ারি
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আফছার উদ্দিন ভূঁইয়ার গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বাঘাইকান্দি গ্রামের এম এ খালেক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এ গণসংযোগের আয়োজন করে।
গণসংযোগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বক্তারা। এ ছাড়া দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার জন্য বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তা না হলে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের দল থেকে বহিষ্কারের দুই দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
গণসংযোগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বক্তব্যে চরকেওয়ার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফছার উদ্দিন ভূঁইয়ার নৌকা প্রতীকের বিজয়ের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এ ইউপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্তারউজ্জামান জীবনকে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রতি সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। না হলে তাঁকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতাদেরও বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ সময় মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকদের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন—চরেকওয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন গাজী ওরফে মোতা গাজী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গজনবী, ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আউয়াল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সুলতান কাজী বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়সাল মৃধা, চরকেওয়ার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তফা গাজী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল।
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী ও পৃষ্ঠপোষকদের বহিষ্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি হাতে পেয়েছি।’ তিনি ওই চিঠি গণসংযোগ মঞ্চে সবাইকে দেখিয়ে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারউজ্জামান জীবন আগামী দুই দিনের মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে তাঁকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। এ ছাড়া বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পৃষ্ঠপোষকেরা দলের মনোনীত প্রার্থীর প্রতি সমর্থন না জানালে তাঁদেরও বহিষ্কার করা হবে।’ এ জন্য তাঁদের দুই দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি।
চরকেওয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এবং জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমান উল্লাহর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন—জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেকান্দর সিকদার সেন্টু মেম্বার, এম এ খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম আকন্দ প্রমুখ।
এদিকে, গতকাল বিকেলে গণসংযোগ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে। ট্রলারে করেও গণসংযোগস্থলে ছুটে আসেন নৌকার কর্মীরা। চারপাশ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল গিয়ে মিলিত হয় এম এ খালেক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এ সময় ‘নৌকা নৌকা, শেখ হাসিনার নৌকা, বঙ্গবন্ধুর নৌকা, আফছু ভাইয়ের নৌকা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন কর্মী-সমর্থকেরা।
বক্তব্যে চরকেওয়ার ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আফছার উদ্দিন ভূঁইয়া তাঁর নির্বাচনি প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘গণসংযোগে আসার পথেও আমার সমর্থক ও কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন।’
আফছার উদ্দিন আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও চরকেওয়ার ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।’