প্রতিক্রিয়া
খাদিজার পর ঝুমা, এরপর কে?
এখনো তাঁর জীবন হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দি। আপনালয়ে ফেরার গভীর তাড়া থাকলেও তিনি অসহায়, বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র মিলছে না। সেই খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর বদরুলের বর্বরতার তিন মাসের মাথায় এবার বাহারের নৃশংসতার ছুরিতে বিদ্ধ হয়েছেন ঝুমা আক্তার সুমা। এরপর কার পালা? কোন বর্বরের চাপাতি কিংবা ছুরি আঘাত হানবে প্রজাপতির মতো উড়ে চলা কোনো মানবীর শরীরে?
সেদিন ছিল ৩ অক্টোবর। গত বছরের ওই দিনটাতে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরতে পা বাড়িয়েছিলেন খাদিজা বেগম নার্গিস; কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হয়নি। বদরুল আলম নামের এক পাষণ্ডের চাপাতির আঘাতে নিথর হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল খাদিজাকে। এর পর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়তে লড়তে বেঁচে ফেরেন তিনি। কিন্তু এখনো ফেরা হয়নি বাড়ি। ঢাকার সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন খাদিজা।
সেই আলোচিত ঘটনার তিন মাসের মাথায় এবার আরেক ‘বদের’ নৃশংসতার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঝুমা আক্তার সুমা। ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া সুমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বাহার উদ্দিন নামের এক বখাটে যুবক। দিচ্ছিল কুপ্রস্তাব। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রোববার (১৫ জানুয়ারি) সুমাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে বাহার।
নারীর প্রতি এই নৃশংসতার শেষ কোথায়? প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা, বর্বরতার খবর প্রকাশ পাচ্ছে। নারীকে পেটানো হচ্ছে, ছুরিকাঘাত করা হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী, অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে... কেন হচ্ছে এসব? সমস্যার মূলটা কোথায়?
ক্রমে যেন আমাদের সমাজ অসহিষ্ণু আর সহিংস হয়ে উঠছে। ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে সামাজিক অনুশাসন। জমাট বৃত্তে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে আমাদের বসবাস। অনিশ্চয়তার শিকলে বাঁধা আমাদের পথচলা। যার প্রভাব, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা সমাজব্যবস্থায়। বাড়ছে হানাহানি, বাড়ছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি নিষ্ঠুরতা। এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ না ঘটলে আজ খাদিজা, কাল ঝুমা, পরশু আরো কেউ নৃশংসতার শিকার হতেই থাকবেন।
লেখক : সাংবাদিক