স্বাধীনতার ডাক
জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল সেই ভাষণ
৭ মার্চ বাঙালির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল বিস্ময়কর। শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাসেও এ ধরনের ঘটনা আমরা দেখি না। আমরা যদি আমেরিকার কথা ভাবি, তাহলেও এ রকম কোনো নজির পাব না।
বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণকে পৃথিবীর অনেক নেতার ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়, কিন্তু কোনো ভাষণই বঙ্গবন্ধুর মতো এতটা অসাধারণ দীপ্তিময় আর দেখি না। অন্য নেতারা ভাষণ দিয়েছিলেন সুরক্ষিত অবস্থায় থেকে। তাঁদের বিপর্যয়ের কোনোই সম্ভাবনা ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছেন চারদিকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিমান, কামানসহ বহু অস্ত্রশস্ত্রের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিরস্ত্র এবং তাঁর কথা সামান্য একটু হেরফের হলে যেকোনো সময় ওদের কামান গোলা অথবা ট্যাঙ্ক চলে আসত। সেই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন।
যেহেতু এমনিতেই তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান সুদৃঢ় ছিল, ফলে সেদিন অসাধারণ ভূমিকা আমরা লক্ষ করলাম। এই ভাষণ গোটা জাতিকে এতটাই ঐক্যবদ্ধ করেছে যে পৃথিবীর আর কোনো শক্তি এই বাঙালি জাতিকে অন্যভাবে সেই মুহূর্তে আর নমনীয় করতে পারত না এবং পারেও নাই। এর ফলে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। যুদ্ধে এ ভাষণটি অসম্ভব উদ্দীপনাপূর্ণ অবদান রেখেছে। অতএব, এই ভাষণটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে সেরা এবং এক নম্বর ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মানুষকে এতটাই অনুপ্রাণিত করেছিল যে গোটা বাঙালি জাতি মৃত্যুকে পরোয়া না করে এগিয়ে এসেছে। এই সংগ্রাম যে সমশক্তির মধ্যে হবে না, বরং বৈষম্যময় শক্তির মধ্যে হবে, সেই ক্ষেত্রে গেরিলা যুদ্ধটা যেকোনোভাবেই হোক প্রয়োজন ছিল, সেটা বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন। তাই তিনি বলেছেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, তোমাদের হাতে যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবা। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি আসলে দিকনির্দেশনা পেয়ে গিয়েছিল যে পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে। সেই ভাষণ এখনো প্রতিধ্বনিত হয়। এটি সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অসাধারণ ভাষণ।
লেখক : ফোকলর বিশেষজ্ঞ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।