স্বাধীন ভাবনা
অর্থনৈতিক সুফল যেন সবাই পায়
এখন জঙ্গিবাদ বিষয়টি চলমান। এটা শক্তি দিয়ে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কড়াকড়ি করে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল, সম্ভব নয়। এটার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর মানুষকে যেটা বোঝাতে হবে, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য। ধর্মে কোনো ধরনের হানাহানি গ্রহণযোগ্য নয়। এটা যদি মানুষকে বোঝানো যায়, তাহলে এটা অনেকখানি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। জঙ্গি ইস্যু বা জঙ্গিবাদে পরিবারগুলো থেকে সমর্থন নেই, সমাজ থেকেও সমর্থন নেই। এমনকি জঙ্গিদের লাশটাও পরিবার গ্রহণ করেনি, করতে চায় না। তা থেকে প্রমাণিত যে এই বিষয়টা প্রবলভাবে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত না।
আমি মনে করি, আগামীতে জঙ্গি তৎপরতা থাকবে না। কারণ উন্নয়ন যখন বাংলাদেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়বে, মানুষ কর্মব্যস্ত হলে এই বিষয়গুলো তখন মানুষের মাথায় আর থাকে না। আর শিক্ষার বিস্তার ঘটলে, বিশেষ করে সংস্কৃতির শিক্ষার বিকাশ যদি আমরা ঘটাতে পারি, তাহলে আর সমস্যা থাকার কথা নয়।
এটি আমাদের দেশে একেবারে তৃণমূল কোনো মতাদর্শ নয়। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ নিঃসন্দেহে, কিন্তু শান্তিপ্রিয়। তো, সেখানে এর অত বিস্তার ঘটা সম্ভব নয়। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষকদের, সমাজের যাঁরা চিন্তাবিদ আছেন, পরিবারগুলোর মধ্যে পিতামাতা সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। যাতে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে কাউকে যদি দেখা যায়, তাকে বোঝাতে হবে। আমি মনে করি, কথাবার্তা বললে কথাবার্তার মাধ্যমে অনেক কিছু সমাধান করা যায়। মানুষকে বোঝানো যায়। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে রোল মডেলের অভাব হয়ে গেছে। এত দুর্নীতি। কথাগুলো কাদের কে বলবেন, এটাই তো একটা সমস্যা হয়ে গেছে। তো, পিতা-মাতাকে বলতেই হবে, বাবা-মাকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
আর এই ২৬ মার্চ আমার বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশা হচ্ছে যে দেশ উন্নত হচ্ছে। আমাদের আগামীতে আরো উন্নতি হবে। সে তো আমরা ধরেই নিচ্ছি। কারণ, অর্থনীতির যাঁরা ছাত্র বা যাঁরা এই বিষয় নিয়ে ভাবেন, তাঁরা সবাই আমাদের বলছেন যে আমাদের আগামী ১০ থেকে ২০ বছর হচ্ছে সবচেয়ে বড় উন্নতির সময়। ডেমোগ্রাফিক ইভিডেন্ট, অর্থাৎ জনসংখ্যাগত বা জননীতিক যে সুফল, সেটি আমাদের আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর থাকবে। এই সময়ে তরুণরা সবচেয়ে বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে। আর এর পর থেকে এই বয়সটা বেড়ে যাবে। তখন বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে, তাঁদের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য তরুণদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। সেই পরিশ্রমটা দেশের কাজে না লেগে ওই বৃদ্ধদের ভরণপোষণে লাগবে। মানে পুরো দেশে জনসমষ্টির একটা বড় অংশ বার্ধক্যের দিকে চলে যাবে।
তো, আগামী ১৫ বছরে যেটা হবে, সেটা হচ্ছে এ দেশে অর্থনীতি মজবুত হবে। তো, সেই সুফলটা যেন সবাই পায়। আমি বলছি, এটি আমার একটা বড় স্বপ্ন যে বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নতি করবে। আমি তো চাই, বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হোক। আমি মনে করি, আমাদের দেশ ২০৩১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে যেকোনো সময়ে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। কিন্তু এই উন্নয়নের সুফলটা সবার ভেতরে সমানভাবে ভাগ হতে হবে। যেন সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত, দরিদ্র যারা আছে, তারাও যেন সেই সুফলের একটা ভাগ পায়।
যদি আমরা সুষম ও সামজিক সাম্য এবং অর্থনৈতিক সাম্য কোনোক্রমে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে আগামী স্বাধীনতার বছরগুলো আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দদায়ক হবে।
লেখক : অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাবি।