অভিমত
কোটি হৃদয়ে একটাই নাম ‘মাশরাফি’
যদি বলা হয়- একাধারে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি, সফল অধিনায়ক, নেতা, দেশপ্রেমিক, অদম্য লড়াকুর কথা। কী হতে পারে সেই নাম। একটু ভাবুন তো। কী উত্তর পাচ্ছেন। নিশ্চয় মাশরাফি বিন মুর্তজা? কোনো বিশেষণ দিয়েই যার বর্ণনা সম্ভব নয়। ছয় কিংবা সাতবার পাঁয়ে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরও দমে না গিয়ে এ দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বীরোচিত ভূমিকা আর সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে মজবুত একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন। দেখিয়েছেন কেবল তীব্র ইচ্ছেশক্তি থাকলেই, দেশের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থাকলে- অনেক কিছুই সম্ভব। তাই তো ক্রিকেটে যতটা লড়াকু, ব্যক্তি হিসেবে ততটাই বিনয়ী। ভীষণ সাদামাটা।
৬ এপ্রিল। বৃহস্পতিবার। দিনটা তাই বাঙালিদের কাছে অন্যতম একটি বেদনার দিন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। হবেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের মধ্য দিয়েই পরিসমাপ্তি ঘটবে এই নক্ষত্রের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের। যদিও ওয়ানডে-তে যথারীতি খেলবেন তিনি।
পরিসংখ্যানটাই মুখ্য নয়। প্রিয় ম্যাশ দেশের মানুষের হৃদয়ে কতটা জায়গা করে নিয়েছেন, তা সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই সহজেই অনুমেয়। খেলোয়াড় মাশরাফির বাইরেও তাই মানুষ মাশরাফি নিয়েও জয়গান। অবসরের ঘোষণাতেই বিদায়ের মতো ব্যথিত কোটি জনগণ।
‘আমি মাশরাফিও যদি পারফর্ম না করি, তাহলে সরে যেতে হবে। দেশের হয়ে খেলতে নামলে, দেশের পতাকাকে প্রতিনিধিত্ব করলে জবাবদিহিতা থাকতেই হবে। ১৬ কোটি মানুষ খেলা দেখছে, ১৬ কোটি মানুষেরই জাজমেন্ট আছে। সেটাকে মূল্য দিতে হবেই।’- মাশরাফি বিন মুর্তজা। কোটি মানুষের কাছে সব সময়ই জবাবদিহি রাখতে চেয়েছেন মাশরাফি। তাই তো মাশরাফি হাসলে বাংলাদেশ হাসে, আর কাঁদলে বাংলাদেশও কাঁদে। হয়তো আজ হবে তার ব্যতিক্রম। মাশরাফি আজ জিতলেও কাঁদবে বাংলাদেশ।
আমরা ধোনিকে দেখেছি, বেশ কটা ট্রফি জেতার পরও ম্যাচ হারার জন্য যার বাড়িতে ছোড়া হয়েছিল ইট-পাটকেল। সঙ্গে জুতাও। সৌরভকে দেখেছি, ভারতের অন্যতম খেলোয়াড় হওয়ার পরও, তার বাড়ি পুলিশ প্রহরায় রাখতে হয়েছিল। শচীনকেও সহ্য করতে হয়েছিল ‘কুফা’ উপাধি। সাঙ্গাকারা, মাহেলা কিংবা জয়সুরিয়া খুব বেশি ভালোবাসা পায়নি দেশের মানুষের কাছে। পন্টিং বা ক্লার্কও যথেষ্ট অপছন্দনীয় ছিলেন তাঁদের দেশের লোকদের কাছে। ডি ভিলিয়ার্সকেও তার দেশের মানুষ বোধহয় এত ভালোবাসে না। ওরা সবাই ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। অথচ মাশরাফি? ওই সব সেরা খেলোয়াড়ের তুলনায় হয়তো নিষ্প্রভ। তবে বাঙালির হৃদয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবেন চিরদিন।
পৃথিবীতে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। আজ হোক কিংবা কাল, মাশরাফিকে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতেই হত। কিন্তু এটাও সত্য, কিছু মানুষকে হারাতে চাই না কেউ। বাংলাদেশের ক্রিকেট আর মাশরাফি অনেকটাই সমার্থক আমাদের কাছে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যে পথ দেখিয়েছেন তিনি, সে পথেই এদেশ এগিয়ে যাবে অনেক দূর। অতীতের সুখস্মৃতি আর ভবিষ্যতের প্রেরণা হিসেবে মাশরাফি থাকবেন সমুজ্জল। বাংলাদেশের ক্রিকেট-আকাশে থাকবেন নক্ষত্র হিসেবে।
লেখক : সাংবাদিক, নাগরিক টেলিভিশন