অভিমত
আলো বেশি না উত্তাপ বেশি?
‘যে দেশ ভবিষ্যতের কথা ভাবিতে বসিয়া অতীতকে আমলে নেয় না, সে দেশের ভাবিবার মত কোনো ভবিষ্যৎ নাও থাকিতে পারে।’-প্রবাদ
সম্প্রতি মাদ্রাসা শিক্ষা—বিশেষ করিয়া দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসারী কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা—বিষয়ে দেশে নতুন করিয়া যে আলোচনার সূচনা হইয়াছে তাহা হইতে আমরা কতটুকু লাভবান হইতে পারিব বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না। এই আলোচনায় যতটা না আলো ঠিকরাইয়া পড়িতেছে তাহার তুলনায় তাপটাই মনে হয় বেশি ছড়াইতেছে। ইহাতে আখেরে কি ফায়দা হইবে বলা মুশকিল। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের সত্যিকার কোন ধারণাই নাই। সমবেদনা তো দূরের কথা। এই রকম একটা শিক্ষাব্যবস্থা এ দেশে কখন হইতে ও কেমন করিয়া গড়িয়া উঠিল, আর কিভাবেই বা ইহা আজও টিকিয়া আছে—তাহা জানিতে আমাদের ইংরেজি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কোন আগ্রহই দেখি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইবার আগে পর্যন্ত আমার নিজের ক্ষেত্রেও এই সত্য প্রযোজ্য ছিল।
কথাটা নিজের অভিজ্ঞতা হইতেই বলি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে আসিয়াছিলাম ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি। ঢাকা শহরে থাকার মত কোনো জায়গা অন্য অনেক ছাত্রছাত্রীর মত আমারও ছিল না। আমার প্রথম ঠাঁই হইয়াছিল মাস্টারদা সূর্যসেন হলে। পাকিস্তান আমলে এই হলটার নাম ছিল জিন্নাহ হল। সেখানে আমার নামে ভাগ্যবলে একটি বিছানা বরাদ্দ হইয়াছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর অপেক্ষার পরও শেষ পর্যন্ত দখল প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হইয়া আমাকে পাশের হলে বদলি হইতে হইয়াছিল। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের নামে দ্বিতীয় হলটির নাম রাখা হইয়াছিল। এই হলে থাকিয়াই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন শেষ করিয়াছিলাম।
আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়াছিলাম তখন জানিতাম ভারতবর্ষের প্রথম ইংরেজ গবর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস কলিকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। কিন্তু এই কলিকাতা মাদ্রাসা চালাইবার টাকাটা কোথা হইতে তিনি যোগাড় করিয়াছিলেন তাহা তখন জানিতাম না। বই পড়িয়া জানিয়াছি, ১৮১৩ সনের আগে সদাশয় ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য একটি পয়সাও বরাদ্দ করেন নাই। ১৮১৩ সালে প্রথম বারের মত শিক্ষার খাতে ইংরেজ সরকারের হাতে মোট এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হইয়াছিল।
অনেকদিন পরে আরেকটি বই পড়িয়া জানিতে পারি, কলিকাতা মাদ্রাসার টাকাটা আসিত হুগলি জেলার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হাজী মুহম্মদ মুহসীনের তহবিল হইতে। হাজী সাহেব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শতকরা বার্ষিক পাঁচ টাকা সুদে এক কোটি টাকা ধার দিয়াছিলেন। শর্ত ছিল: এই সুদের টাকাটা বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে শিক্ষাবিস্তারের কাজে— বিশেষ করিয়া যাঁহারা ইংরেজি লিখিতে পড়িতে উৎসাহী তাঁহাদিগের মধ্যে বৃত্তি বাঁটিয়া দিয়া— খরচ করা হইবে। কলিকাতা মাদ্রাসা— যাহা ‘আলিয়া মাদ্রাসা’ নামেই অধিক খ্যাত— এই তহবিল হইতে চলিত। বাংলাদেশের মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে সৈয়দ আমির আলি ও স্যার আবদুর রহিম প্রভৃতি মনীষী এই তহবিলের টাকায় পড়ালেখা করিয়াছিলেন। আমার পরলোকগত শিক্ষক মহাত্মা আহমদ ছফার জবানে শুনিয়াছি বিখ্যাত লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ও হাজী মুহসীন তহবিলের বৃত্তি লাভ করিয়াছিলেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীনের ঔরসে কোন ছেলেমেয়ে জন্মায় নাই। আর লোভে আতুর আত্মীয়-সাধারণও তাঁহাকে কাবু করিতে পারেন নাই বলিয়াই তিনি দেশের কাজে তাঁহার সঞ্চিত অর্থ, অঢেল ধনদৌলত, লাগাইতে পারিয়াছিলেন। ইতিহাস বইয়ের পাতায় পড়িয়াছি, হাজী সাহেবের হাতের লেখা বড়ই সুন্দর ছিল, তিনি সুন্দর সুন্দর নকশাদার কাপড় বুনিতে পারিতেন। বন্দুকের কারখানায় কারিগরও তিনি মন্দ ছিলেন না। তিনি নানান জাতের রান্নার প্রণালীও উদ্ভাবন করিয়াছিলেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীনের দান হইতে বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ অনেক উপকার পাইয়াছে— এই সত্যে সন্দেহ নাই। বিশেষ করিয়া শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁহার দান আজও ভুলিবার মতন নহে। শুদ্ধ একটা কথার ফোড়ন দিতেছি এখানে। এই শিক্ষাটা শুদ্ধমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা বা এলেমে কালামেই সীমাবদ্ধ করা ছিল না। যাহাকে বলে সেকুলার বা দুনিয়াদারি বিষয়ক শিক্ষা তাহাকেও তিনি বঞ্চিত করেন নাই। হুগলির মুহসীন কলেজই এই কীর্তির একমাত্র নিদর্শন নহে। আর বাংলাদেশই তাহার একমাত্র ঠিকানা ছিল— একথাও সত্য নহে।
ভারতের (অথবা প্রাচ্যজগতের) নানান ভাষা শিক্ষা দেওয়ার খাস উদ্দেশ্যে ১৭৯১ ইংরেজি সনে একটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছিল। নাম মাদ্রাসা গাজিউদ্দিন। এই মাদ্রাসাটাই ১৮২৪ সাল নাগাদ দিল্লি কলেজে রূপান্তরিত হইয়াছিল। এই কলেজে দুনিয়াবি শিক্ষাই দেওয়া হইত। হিন্দুস্তানের মুসলমান সমাজে যাঁহারা পরে নেতৃত্ব দিয়াছিলেন তাঁহাদের অনেকেই ছিলেন এই দিল্লি কলেজের ছাত্র। এই ছাত্রদের মধ্যেই কালক্রমে এমন একদল দেখা দিয়াছিলেন যাঁহারা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ধ্যানধারণা ও প্রত্যয়-বিশ্বাস কতখানি যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্নও তুলিয়াছিলেন।
আমার মনেও একদিন একটা প্রশ্ন উঠিয়াছিল। এই দেশের শিক্ষার ইতিহাস আলোচনা করিতে বসিয়া আলাদা করিয়া মুসলমান সমাজের কথা বলার যুক্তিটা কোথায়? বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম ফল দাঁড়াইয়াছিল উচ্চশ্রেণীর মুসলমানদের পতন। ১৭৯৩ সনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের লক্ষ্য ছিল এমন একশ্রেণীর ভূস্বামী তৈরি করা যাঁহারা ব্রিটিশ সরকারের অনুগত থাকিবেন এবং একই সাথে কৃষি ব্যবসায়ে ধনতন্ত্রের উন্নতিও নিশ্চিত করিবেন। আমরা জানি, শেষ পর্যন্ত এই দুই লক্ষ্যের কোনটাই পূর্ণ হয় নাই। তবে মুসলমান ভূম্যধিকারী শ্রেণীর পতন তাহাতে নিশ্চিত হইয়াছিল। যে শ্রেণী পতিত হইয়াছে তাহার বিদ্যাবুদ্ধি শিক্ষা-সংস্কৃতির পতনও স্বাভাবিক। পতিত শ্রেণীর সংস্কৃতিকে কেহ আর আদর্শজ্ঞানে ভজনা করে না।
বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে দ্বিতীয় এক শ্রেণীর লোকজন আরও পর্যুদস্ত হয় আরেকটি ঘটনায়। এই শ্রেণীর নাম— বেহতর কোন শব্দের অভাবে— রাখা যায় ‘ওলেমা’ শ্রেণী। ১৮২৮ হইতে ১৮৪৮ সালের মধ্যে এদেশের অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হইয়া গিয়াছিল ইংরেজ সরকারের আরেকটি হস্তক্ষেপের ফলে। এই হস্তক্ষেপের নাম লাখেরাজ বাজেয়াপ্তি। এইবার যে সকল মাদ্রাসা সরকারি জমি লাখেরাজ বা বিনারাজস্বে ভোগদখল করিয়া আসিতেছিল সেগুলি ধ্বংস হয়। কারণ সরকার এই সকল জমি ফিরাইয়া লয়। সেই সময় দেশের মোট জমিজমার শতকরা প্রায় বিশ ভাগ লাখেরাজ ছিল। ফলে মুসলমান সমাজ বড় বিপদে পড়িল। পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হইল, কিন্তু নতুন কোন প্রতিষ্ঠান গঠিবার তাকত বা হিম্মত কাঁহারও রহিল না।
বাংলাদেশের চৌহদ্দির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রথম দুনিয়াবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কলিকাতার হিন্দু কলেজ। এখানে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের নাম লওয়ার দরকার নাই। কেননা ঐ কলেজটা শুদ্ধমাত্র ইংরেজ কর্মচারীদের বিদ্যাসেবায় নিরত ছিল। হিন্দু কলেজটা বসিয়াছিল ১৮১৭ সন নাগাদ। তবে ১৮৫৩ সন পর্যন্ত ইহাতে কেবলমাত্র হিন্দু ছাত্রই ভর্তি হইতে পারিত। ১৮৫৩ সালের পর কলেজটির নাম দাঁড়ায় ‘প্রেসিডেন্সি’ কলেজ। রমেশচন্দ্র মজুমদারের লেখা পড়িয়া জানা গেল, ১৮৫৩ পর্যন্ত ‘ঐ কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সনন্দ অনুসারে হিন্দু পদবাচ্য নহে এমন কোন ছাত্রভর্তি করার অনুমতি ছিল না।’
ভুল বুঝাবুঝি এড়াইতে হইলে পরিষ্কার করিয়া বলিতে হইবে, এই রকম নাটকীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকিলেও বাংলাদেশের মুসলমান উচ্চশ্রেণীর পতন রোধ করা সম্ভব হইত না। উত্তর ভারতের— যাহাকে বলা হইত ‘সংযুক্ত প্রদেশ’ এখন বলা হয় ‘উত্তর প্রদেশ’— মুসলমান উচ্চশ্রেণীও বেকায়দায় পড়িয়াছিল কিন্তু বাংলাদেশের মত অতটা দ্রুতগতিতে নয়।
এই সময় ভারতের মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা সময়ের দাবি— অর্থাৎ অনিবার্য পরিবর্তনের প্রকৃতিটা— বুঝিয়া উঠিতে পারেন নাই। ইংরেজ শাসনের আগে বাংলায় এবং হিন্দুস্তানে হিন্দু ও মুসলমানের যুগপদ দানে যে জাতীয় সংস্কৃতি গড়িয়া উঠিয়াছিল তাহার প্রমাণ বাংলাদেশে বাংলার ও উত্তর ভারতে উর্দুর বিকাশ। কিন্তু অসম সাহসী ও অধ্যবসায়ী মুসলমান আলেমরা— এক কথায় বলিতে ‘ওলেমা’— এই সত্য উপলব্ধি করিতে পারেন নাই। হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া জাতীয় ভিত্তিতে প্রতিরোধ করিবার চিন্তা না করিয়া তাঁহারা ‘শরিয়া’ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হইলেন। ইহাতে আর কিছু হইল না, পরাজয়টা নিশ্চিত হইল। কোন কোন পরিস্থিতিতে নগ্নপদ সাহসে কাজ হয় না; বুদ্ধির প্রয়োগ করিতে হয়। ১৮৫৭-৫৮ সালের পর এই সত্য আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
১৮৫৮ সালের পরও উত্তর ভারতের মুসলমান ওলেমা শ্রেণীর একাংশ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সীমান্তে— ‘সিতানা’ নামক তীর্থে— ইংরেজ-বিরোধী সংগ্রামের একটি কেন্দ্র জিয়াইয়া রাখিয়াছিলেন। ইহার ফলে ইংরেজ সরকার অনেকদিন পর্যন্ত ভারতবর্ষের গোটা মুসলমান সমাজের সহিত শত্রুভাবাপন্ন ব্যবহারে কোন ব্যয়-পরিবর্তন করে নাই।
ভারতবর্ষ ইংরেজ অধিকারে তলাইয়া গিয়াছে। ভারত ‘দারুল হরব’ বা শত্রুকবলিত দেশ বিধায় এখানে জিহাদ বা সশস্ত্র সংগ্রাম অবশ্য করণীয়— এই ধারণা হইতে পিছু হটা সহজ কাজ ছিল না। প্রথমে ব্যক্তিবিশেষ— আরও পরে দল বাঁধিয়া আলেমদের একাংশ— এই অবস্থান হইতে সরিয়া আসেন। ১৮৭০ নাগাদ বেশির ভাগ মুসলমান আলেমও ইংরেজ শাসনের রূঢ় তিক্ত সত্য গলার নিচে ঠেলিয়া নিতে বাধ্য হইলেন। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত মুসলমান ওলেমার একাংশ সীমান্তে প্রতিরোধের কেন্দ্রটা বাঁচাইয়া রাখিয়াছিলেন। কিন্তু ভারতবর্ষে ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কর্তব্য নহে— এই সত্যের স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে প্রমাণিত হইল মুসলমান আলেম-ওলেমা এতদিন পর্যন্ত যে চিন্তা করিয়া আসিতেছিলেন সে চিন্তা সঠিক ছিল না। ১৯১৯— ১৯২৪ সালের খেলাফত আন্দোলনের সাময়িক সাফল্যও সেই পুরাতন ব্যর্থতাকে ঢাকিতে পারে নাই।
১৮৬৭ সনে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পিছনে এই পরাজয়ের ইতিহাসটা লুকাইয়া আছে। কিন্তু ইহাতে একটা ভবিষ্যৎ দৃষ্টিও প্রকাশিত— একথা অস্বীকার করার উপায় নাই। একদিন ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন শেষ হইয়া যাইবে। কিন্তু যত দিন না এই অভিশাপের অবসান না হয় তত দিন মুসলমানের ধর্মীয় সংস্কৃতি বা শরিয়াকে তো বাঁচাইয়া রাখিতে হইবে। এই বাঁচাইয়া রাখার সংগ্রামের অপর নাম রাখা হয় জিহাদ। এই সংগ্রামের মধ্যে একদিকে যেমন একটা আত্মোৎসর্গের ভাব দেখা যায়, তেমনি একই সাথে দেখা যায় ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো, একলা চলো রে’ মনোভাব।
তারপরও অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দেওবন্দ মাদ্রাসা, আহমদ ছফার ভাষায়, ‘একটি প্রণিধানযোগ্য ভূমিকা’ পালন করিয়াছে। বিশেষ করিয়া বলিতে দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেমদের একটা বড় অংশ ভারত বিভাগের বিরোধিতা করিয়াছিলেন। কিন্তু তারপর— বিশেষ করিয়া পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে— এই দেশে প্রতিষ্ঠিত দেওবন্দ ঘরানার মাদ্রাসাগুলি বড় কোন ভূমিকা পালন করিতে পারে নাই। এই কারণে কিনা জানি না, আজ ‘মাদ্রাসার প্রতি শিক্ষিত লোকেরা এক ধরনের অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি’ পোষণ করিয়া থাকে।
এই নিবন্ধটি এখানেই শেষ করিতে হইবে। শেষ করিবার আগে আমার পরলোকগত শিক্ষকের একটা কথা তুলিয়া দিলাম। ইহা আমারও মনের কথা বিশেষ। আহমদ ছফা লিখিয়াছিলেন, ‘আর মাদ্রাসার লোকদের অবস্থা দাঁড়াইয়াছে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের মত। বাইরের পৃথিবীতে যতই পরিবর্তনের ঝড় বয়ে যাক সেদিকে তাঁরা দৃষ্টিনিক্ষেপ করবেন না। তাঁরা মৃত অতীতকে আঁকড়ে থাকবেন। বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, হাজার চেষ্টা করেও একটা আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় তিনরকম শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসবোধ সমানে কাজ করে যাচ্ছে।’
২৫ এপ্রিল ২০১৭
দোহাই
১. আহমদ ছফা, ‘মাদ্রাসা শিক্ষার কথা,’ আহমদ ছফা রচনাবলি, ২য় খ-, নূরুল আনোয়ার সম্পাদিত (ঢাকা: খান ব্রাদার্স, ২০০৮), পৃ. ২৫২-২৫৮।
2. M. Mujeeb, The Indian Muslims (London: George Allen, 1967).
3. R. C. Majumdar, Glimpses of Bengal in the Nineteenth Century (Calcutta: Firma K. L. Mukhopadhyay, 1960).
লেখক : অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস