ভাস্করের প্রয়াণ
‘অপরাজেয় বাংলার জন্য বেঁচে থাকবেন আজীবন’
‘অপরাজেয় বাংলা’র ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ মারা যান গতকাল শনিবার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। স্ত্রী উম্মে কুলসুম, দুই ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ মহি ও সৈয়দ আবদুল্লাহ জহীর এবং মেয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ নাহিদসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের মরদেহ আনা হয়, তখন এনটিভি অনলাইনের কাছে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী, সন্তান ও ঘনিষ্ঠজন।
উম্মে কুলসুম
শিল্পীর সহধর্মিণী
তিনি একজন প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন। ছেলেমেয়েদের বলতেন, প্রকৃতি দেখে পড়াশোনা শিখো। মানুষ হিসেবে তিনি অনেক সহজ ও সরল প্রকৃতির ছিলেন। মানুষ এ জন্য অনেক সুবিধা নিয়েছে, আবার কখনো কখনো এ কারণে তিনিও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। তিনি যখন ঢাকার বাইরে যেতেন, আমাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে বলতেন, আমি যদি মারা যাই, তুমি টাকা তুলতে পারবে। আমার মনে হয়, তিনি পুত্রশোকে মারা গিয়েছেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আমাদের এক ছেলে মারা গিয়েছিল। ঢাকায় তাঁর প্রিয় জায়গা ছিল মিরপুর ও গাউছিয়া মার্কেট। আমাকে প্রায় তিনি এ মার্কেট থেকে শাড়ি কিনে উপহার দিতেন।
আবদুল্লাহ জহীর
শিল্পীর ছোট ছেলে
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই অপরাজেয় বাংলার সৃষ্টি। শুধু অপরাজেয় বাংলা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি ভাস্কর্য তৈরি করে গেছেন। উনি সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন।
ম. হামিদ
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের সঙ্গে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অপরাজেয় বাংলা নিয়ে আমার পরিকল্পনা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের মার্চে আমরা এর মডেল তৈরি করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ভাস্কর্যটির কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকে। এরপর ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিকে এই ভাস্কর্যটির নাম ‘অপরাজেয় বাংলা’ ছিল না।
রফিকুন নবী
চিত্রশিল্পী
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ অসম্ভব সাহসী মানুষ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার মধ্যে ছিল বিরাজমান। সে আমার প্রিয়ভাজন ছাত্র ছিল। আমি যখন চারুকলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি, তখন প্রথম বর্ষেই ছাত্র হিসেবে খালিদকে আমি পেয়েছি। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আমি তার শিক্ষক ছিলাম। খালিদের পড়াশোনার বিষয় পেইটিং হলেও তার ভাস্কর্যের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল। সিরামিক বিভাগে গিয়ে সে ভাস্কর্য গড়া শিখত। যা হোক, অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সে ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। সে সময়ে এই ভাস্কর্যের জন্য তিনটা লে-আউট চাওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, সেটার কাজ হতে হবে সিমেন্ট দিয়ে। খালিদ সেটা করতে পেরেছিল। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনেও খালিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতীক ‘অপরাজেয় বাংলা’। খালিদ একুশে পদক তো পেয়েছে। ‘অপরাজেয় বাংলা’র জন্য এ জাতি তাকে যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে।
হামিদুজ্জামান খান
ভাস্কর
খালিদ অনেক জেদি প্রকৃতির ও সাহসী একজন মানুষ ছিলেন। সাহসিকতার সঙ্গে তিনি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। ‘অপরাজেয় বাংলা’র কারণে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন।