রোহিঙ্গা সংকট
পৃথিবীব্যাপী প্রতিবাদ ও সমাধানের পথ
অবশেষে পৃথিবী উচ্চকিত মিয়ানমারের গণহত্যার প্রতিবাদে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ‘দ্রুত ও কার্যকর’ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদ ইতিমধ্যে রুদ্ধদার বৈঠক করেছে। বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্রিটেন জানিয়েছে যেসব সদস্য রাষ্ট্রই সহিংসতা বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলাকে ভয়াবহ বর্বরতা বলে বর্ণনা করেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর জাতিসংঘ বক্তৃতায় রোহিঙ্গা শব্দটি একবারও উচ্চারণ করেননি। রোহিঙ্গা প্রশ্নে ওআইসি দেশগুলো বৈঠকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় মানবিক বিপর্যয় আর কখনো ঘটেনি। ১৯৭১ সালে অবশ্য এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী ভারতে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও সে স্মৃতি বাংলাদেশের মানুষ ভোলেনি। কথায় বলে ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃতি ঘটে। এখন যে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আমরা মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলা করছি তার সঙ্গে ৭১-এর ঘটনাবলীর অনেক মিল রয়েছে। প্রথমত : এক বিপুল জনগোষ্ঠী শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয়ত : যে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করেছে তারা হায়েনার মতো ধেয়ে আসা মিয়ানমারের শক্তি মদমত্ততার শিকার হয়েছে। তৃতীয়ত : সেই ৭১-এর বাংলাদেশের মানুষদের মতো এদেরও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে।
পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে সেদিন এক রাউন্ড টেবিলে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতো তাদের অবিসংবাদিত নেতা নেই। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগ পেয়েছিল রোহিঙ্গাদের তাও নেই। তবে মনে রাখতে হবে যে রোহিঙ্গা সমস্যাটি শতাব্দী প্রাচীন। তাদের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং অবশেষে অনুন্যপায় হয়ে স্বশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অবতারণা যে হয়নি তা নয়। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস ভূগোল সম্পর্কে যারা খবর রাখে তারা নিশ্চয়ই জানে ভ্রাতৃপ্রতিম আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা নেতৃত্ব সেদিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সেদিন যদি কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তাহলে আরাকান হতে পারত আরেক বাংলাদেশ। এমনিতেই ‘পোকায় খাওয়া’ পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই সময়ে বাঙালি নেতৃত্বের ব্যর্থতা আর এক ইতিহাস।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে রোহিঙ্গা সংকট একটি বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। ১৯৭৮ সাল থেকে এমন কোনো বছর যায়নি যে রোহিঙ্গারা আশ্রয় প্রার্থী হয়নি। কিন্ত এটা অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সরকারের তরফ থেকে কোনো দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক সরকারই একটি পরিকল্পিত এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য চিন্তা করেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক এলিটরা সর্বদাই গদির চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। সুতরাং তাদের জাতীয় স্বার্থ ও সংকট নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়! সাম্প্রতিক সময়ে যে বিপর্যয় ঘটে গেল তা অনুধাবন করার এবং সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছিল এমন কথা আমাদের জানা নেই। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে ২০১২ সালে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন চেইন যখন সব রোহিঙ্গা বহিষ্কারের প্রকাশ্য ঘোষণা দেন তখনো আমাদের টনক নড়েনি। উল্লেখ্য, যে ঘটনার ধারাবাহিকতায় ওই বছর মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর স্থগিত রাখেন। আমরা জানি যে মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিডোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রয়েছে। প্রাদেশিক রাজধানীতেও আমাদের কনসুলেট রয়েছে। অথচ তারা এত বড় ধরনের বিপর্যয় সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলো সম্পর্কে অলসতা, অদক্ষতা ও অসর্তকতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আমরা কি সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি না যে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা ওখানে তাহলে কী করছিলেন?
প্রথম থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক ছিল না। এ কথা সত্য যে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে ৫৫ হাজার ১২৬ বর্গমাইলের মানচিত্রে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। কিন্তু আমরা তো অমানুষ হতে পারি না। ২০১৫ সাল থেকে প্রায় প্রতিদিন ভেসে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা বাঘের মুখে ফেরত দিয়েছি। নাফ নদীতে অথবা বঙ্গোপসাগরে অনেক রোহিঙ্গা মানুষের সলিল সমাধি হয়েছে।
২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকারের পরিচালিত ‘অপারেশন আনফিনিশড বিজনেস’ নামের জাতিগত নিধনযজ্ঞের পর ২৬ আগস্ট টেকনাফের নোয়াপাড়া ঝাউবাগান এলাকায় ৫৬ জন রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছিল বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী। এই ৫৬ জনের মধ্যে ২১ জন ছিলেন নারী ২৬ জন শিশু আর পুরুষ মাত্র ৯ জন। অবশ্য এরপর বানের পানির মতো অথবা ঘূর্ণিঝড়ের ঝঞ্জার মতো যখন লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করেছে তখন সরকারের বাধা ভেঙে পড়ে। তাহলে দেখা যায় যে আমরা মানবিকতায় করি না, বিশ্বাস করি বাধ্যবাধকতায়। তত দিনে গোটা বিশ্বে মিয়ানমারের পশুদের নির্মমতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল কারো রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের আগে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব আশ্রয় প্রার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।
বিষয়টির যখন স্পষ্টভাবেই আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটলো তখন আমরা দেখতে পেলাম আমাদের কথিত অকৃত্রিম বন্ধুরা আমাদের পাশে নেই। যে চীনের বন্ধুত্ব নাকি অনেক উচ্চতায় পৌঁছেছে তারা কোনো রকম রাখঢাক না করেই ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের নির্মমতাকে সমর্থন জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র ব্রিফিংয়ে বলেন ‘আমরা রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত হামলার নিন্দা জানাই। রাখাইনের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রাখতে মিয়ানমারের প্রয়াসের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। আমরা মনে করি, জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে স্থিতিশীলতা সুরক্ষায় মিয়ানমারের প্রচেষ্টার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকা উচিত।’ আর আমাদের মহান প্রতিবেশীও রোহিঙ্গা নিধনে সমর্থন ব্যক্ত করেছে। মিয়ানমারের নির্মমতায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা যখন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই দেশ সফর করছিলেন। ভারত কূটনৈতিক ভাষার মারপ্যাচে মিয়ানমারকে সমর্থন জানায়। পরে তারা ‘শরণার্থী আগমনে’ শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণও পাঠিয়েছে। এ যেন গরু মেরে জুতা দান। চীন ও ভারতের এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ভূমিকার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে যে তাদের উভয়েরই ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক স্বার্থ’ রয়েছে মিয়ানমারে। আন্তর্জাতিক পরিসরে চীন যেহেতু ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী, সেহেতু চীন যখন শক্তভাবে মিয়ানমারকে সমর্থন জানাবে তখন ভারত বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে। জাতীয় স্বার্থের সমীকরণে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক।
এখন এই ভয়াবহ সংকট থেকে কীভাবে সম্মানজনকভাবে সমাধানে যেতে পারি তাই একটি বিবেচ্য বিষয়। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মাঝে যে সহানুভূতির সাগর রচিত হয়েছে তা অভাবনীয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সম্ভবত এ রকম জাতীয় ঐক্য আর কখনোই অর্জিত হয়নি। সরকার যদি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয় তাহলে তারা এই অর্জিত জনগণের ঐক্যকে ‘সম্মিলিত শক্তি’ হিসেবে মিয়ানমারের সামনে প্রদর্শন করতে পারে। সারা দেশে যদি বিক্ষোভ হয় তাতে দোষ কী? তারা তো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে না।
যাহোক এই সংকট সমাধানের দুটি অংশ। ১. আগত আশ্রয় প্রার্থীদের বসবাস ব্যবস্থা করা সক্ষমতার সঙ্গে সম্পাদন। তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিতকরণ। বিদেশি ত্রাণ সাহায্য যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটি বাংলাদেশ সরকারের বোঝা হওয়ার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘বাংলাদেশের মানুষ একমুঠ খেলে রোহিঙ্গারাও আধামুঠ খাবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় মূলত জনগণের আবেগই প্রকাশ পেয়েছে। ২. রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের সম্পূর্ণ সম্মান ও নিরাপত্তা সহকারে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানো। অতীত বলে কাজটি খুব সহজ হবে না।
১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের শরণার্থী নিয়ে যে নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল- সেটাই হবে আমাদের মডেল। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী প্রথমত দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও কূটনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরৎ নিতে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত আঞ্চলিক প্রভাববলয়কে কাজে লাগানো। ইতিবাচক খবর হলো যে দুটি ফ্রন্ট লাইন মুসলিম এস্টেট- ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া ইতিমধ্যেই তাদের সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে নির্ভরশীল দীর্ঘ সীমান্তের বন্ধু, বিচ্ছিন্ন সময়ের সাথী চীনকে যদি রজিনৈতিক সমাধানে সম্মত করানো না যায় তাহলে সমস্যাটি প্রলম্বিত হতে বাধ্য। সুতরাং চীনকে বাগে আনার সব কলাকৌশল বাংলাদেশকে প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিন্ন সীমান্তের অধিকারী ভারত। ভারতের করপোরেট পুজির প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদি ‘গাছেরটাও খাবেন আর তলারটাও কুড়াবেন’ তা হবে না। বাংলাদেশ তাদের যেভাবে অকাতরে দিয়েছে এ দুঃসময়ে তাদেরকেও সেরকম দিতে হবে। বস্তুত পৃথিবীর এই অঞ্চলে ভারতের প্রভুত্ব এতটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে- মিয়ানমার তার কথা শুনতে বাধ্য। তৃতীয়ত : মুসলিম বিশ্ব এই সংকট নিরসনে নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশকে যথার্থ সহযোগিতা দিতে পারে। চতুর্থত : জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক পরিসরে বিষয়টির উপস্থাপনা এবং অব্যাহত চেষ্টার মধ্য দিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মিসেস গান্ধী বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার মহতি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ পাশ্চত্য বিশ্বকে আস্থায় নিতে পারে তাহলে অচিরেই সমাধান আশা করা যায়।
এরইমধ্যে এরা বাংলাদেশের প্রতি তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করেছে। মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের নানা কৌশল ইতিমধ্যেই তারা গ্রহণ করেছে। পঞ্চমত : শক্তি প্রয়োগের কৌশল নিরাপত্তা পরিষদ ইচ্ছে করলে ক. বসনিয়া- হারজেগোভিনা ও কসাভো স্টাইলে ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ সৃষ্টি করতে পারে। খ. জাতিসংঘ শান্তিরক্ষি বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। ষষ্ঠত : ইতিমধ্যে প্রকাশিত ‘কফি আনান কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকটের অবসান ঘটানো।
উল্লেখ্য, কফি আনান কমিশন রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে। কিন্তু খবর পাওয়া যাচ্ছে যে মিয়ানমার সরকার ইতিমধ্যে সুপারিশমালা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা করছে যে মিয়ানমার কফি আনান কমিশন প্রত্যাখ্যান করবে। সপ্তমতো : বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে মধ্যস্থতাকরণ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয় তাহলে তারা স্বশস্ত্র পথ পরিহার করবে- এই মর্মে মিয়ানমার সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায়। অষ্টমতো : যদি দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রয়াস ব্যর্থ হয় তাহলে জাতিসংঘের বিঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা প্রদান।
নবমতো: জাতিসংঘ ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা। জাতিসমূহের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য ইতিপূর্বে কুয়েত, ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্ব মোড়লদের সম্মিলিত বা কখনো স্বতন্ত্র ইচ্ছেয় এসব দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ রকম একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা জাতির সমর্থনে এ ধরনের হস্তক্ষেপ তখনই সম্ভব হতে পারে যখন বৈশ্বিক শক্তিগুলো একমত পোষণ করবে। তবে সে আশা দুরাশা মাত্র। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষকে স্বকীয় সত্ত্বায় বিশ্ব শক্তির সমর্থনে রোহিঙ্গা জাতির ভাগ্য নির্ধারণে নিরন্তর আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়