আন্তর্জাতিক
জিম্বাবুয়ের নতুন নেতৃত্ব এবং গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ
জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন এমারসন নানগাগওয়া। তিনি রবার্ট মুগাবের স্থলাভিষিক্ত হলেন। এর আগে তিনি মুগাবে সরকারের ভাইস প্রেসিডন্ট ছিলেন। এ মাসের প্রথম দিকে মুগাবে তাঁকে বরখাস্ত করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেসকে ক্ষমতাসীন করার পরিকল্পনা এঁটেছিলেন মুগাবে। তা নিয়ে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সেনাপ্রাধানের সঙ্গে মতবিরোধ ঘটে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফকে যেমন বিদেশ সফর থেকে ফিরে আসার পর গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, তেমনি সেনাপ্রধান কনস্টাতিনো চিয়েংগাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুগাবে। উল্টো ক্ষমতাচ্যুত হলেন মুগাবে। সাধারণ জ্ঞান দ্বারা বোঝা যায় যে, সেনাবাহিনী সেনাপ্রধানের আদেশকে শিরধার্য করে রাজনীতিকদের সিদ্ধান্তকে নয়।
সেনাবাহিনী গতানুগতিক কায়দায় অভ্যুত্থান না ঘটালেও দেশের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। নতুন রাষ্ট্রপ্রধান নানগাগওয়া দেশে ফিরে রাজধানী হারারেতে উৎফুল্ল হাজারো মানুষের সামনে দেওয়া বক্তব্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তাঁর ভাষায়, ‘গণতন্ত্রের নতুন যুগে প্রবেশ করল জিম্বাবুয়ে’। নানগাগওয়া আরো বলেন, ‘আপনাদের সেবক হওয়ার অঙ্গীকার করছি আমি। জিম্বাবুয়ের সব দেশপ্রেমিক নাগরিককে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। এখানে কেউই কারো চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের পরিচয় আমরা জিম্বাবুয়ের নাগরিক।’
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি ভালো ভালো কথা বললেও এটি একটি অপ্রিয় সত্য যে, নানগাগওয়া মুগাবে স্বৈরাচারের সাথী ছিলেন। তাঁর শাসন রেকর্ডও গণতান্ত্রিক নয়। মন মানসিকতায় তিনি মুগাবের চেয়ে কম যান না। সাধারণ মানুষের ধারণা, ‘যে যায় লঙ্কা সেই হয় হনুমান’। এখন নানগাগওয়া হনুমান হবেন কি না তা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। ২০১৮ সালে প্রস্তাবিত জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। বহুগোত্র, বহুভাষাভাষী এবং সতত আফ্রিকান অস্থির চরিত্রধারী জিম্বাবুয়ের জনগণের জন্য সত্যিকার গণতন্ত্র অর্জনে পঙ্কিল পথে পা বাড়াতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
নতুন সরকার গঠনের আগে সাত ঘাটের পানি ঘোলা করার পর পদত্যাগ করেছিলেন জিম্বাবুয়ের স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবে। ফলে দেশটিতে ৩৭ বছরের ‘মুগাবে যুগের’ অবসান হয়। আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলের এ নেতা জিম্বাবুয়ে তথা রোডেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি ‘জাতির পিতা’ ধরনের পদবাচ্যে ভূষিত হন।
১৯৮০ সালে শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসানের পর থেকে তিনি প্রথমত প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির একক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ‘জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন’ (জানু) গঠন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এর নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি অন্য আরেকজন প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী নেতা জোসুয়া নকামু প্রতিষ্ঠিত ‘জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপলস্ ইউনিয়ন’-জাপুর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ‘প্যাট্রিয়াটিক ফ্রন্ট’ গঠন করেন। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ‘জানু’ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৮২ সালে তিনি জসুয়া নকামুকে বিতাড়ন করে নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে ‘জানু’ এবং ‘জাপু’ একক দলে পরিণত হয়। সেই থেকে মুগাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর ভালো কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে জাতিগত বিদ্বেষের অবসানে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ। কালোদের নেতা মুগাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘থিংকিং ম্যানস গেরিলা’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
তবে স্বদেশে তিনি শাসক হিসেবে ব্যর্থ হন। এই জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী নেতার অপশাসনে মানুষ ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। কিন্তু তিনি দমন পীড়নের মাধ্যমে সমস্ত বিরোধী আন্দোলন দমন করেন। ‘দেশনায়ক’ থেকে তিনি ‘খলনায়ক’-এ পরিণত হন বলে তাঁর পদত্যাগের পর পশ্চিমা সংবাদ ভাষ্যে বলা হয়।
মুগাবের চার দশকের শাসনামলে একসময় সমৃদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। তাঁর কুশাসনের একটি নমুনা হচ্ছে দেশের সব কৃষিজমি জাতীয়করণ। পত্রিকায় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব জমির মালিকদের সরকারের হাতে জমি সমর্পণের আদেশ দেওয়া হয়। দৃশ্যত মুখে মার্কসবাদের খই ফুটলেও বস্তুত তাঁর প্রয়োগিক শিক্ষা, দীক্ষা ও অভিজ্ঞতা কোনোটাই মুগাবের ছিল না। দেশটির অর্থনীতিবিদরা একে কুখ্যাত ‘সামন্ততান্ত্রিক যুগের শুরু’ বলে সমালোচনা করেন। এর আগে থেকেই মুগাবের সরকার ভূমির সংস্কার কর্মসূচির আওতায় সকল শ্বেতাঙ্গ মালিকের জমি জব্দ করে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। তখন কৃষ্ণাঙ্গরা খুশি হয়েছিল। সকল জমি জাতীয়করণের ফলে মুগাবে উভয় সম্প্রদায়ের আস্থা হারান। হীরার খনির মতো অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জিম্বাবুয়ে ক্রমশ নিঃস্ব হতে থাকে। ২০০৮ থেকে ২০১৬- এই সময়ে অর্থনীতিতে হীরাসহ ব্যাপক লুটপাট লক্ষ করা যায়। মুগাবে একপর্যায়ে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে সেখান থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব আসছে না। দৃশ্যত জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি ভেঙে পড়।
গত বছরের শেষ দিকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০ কোটি ডলার মূল্যের নতুন মুদ্রা বাজারে ছেড়েছে। অর্থনীতিবিদ প্যাট্রিক বন্ড মনে করেন এর কারণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ও দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা ‘র্যান্ড’ আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে গৃহীত হলেও বাজারে এই নোটের সরবরাহ হ্রাস পায়। ফলে অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সেখানে অতি উচ্চমাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে। উল্লেখ্য, যে জিম্বাবুয়েতে প্রায়ই আমলাতান্ত্রিক লুটপাটের সামনে অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৮ সালে সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। যে কারণে তখন তাদের মুদ্রা বাতিল করতে হয়েছিল। তার ওপর রয়েছে ৯০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ। এখন তাঁরা বিদেশি কোম্পানিগুলোকে মুনাফা বাবদ তাদের ন্যায্যপ্রাপ্য রেমিটেন্সও পরিশোধ করতে পারছে না। সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে রাজধানী হারারের স্টক মার্কেটের মূল্য ১৮ শতাং হ্রাস পায়। সব শেয়ারের মূল্য এক হাজার ৫০০ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে নেমে এক হাজার ২০০ কোটি ৪০ লাখে নেমে যায়। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা অস্থিশীলতার কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। মুগাবে সরকারের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির নমুনা স্থাপন করেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস। ১৯৯৬ সালে মুগাবে ৪১ বছরের ছোট গ্রেসকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালে তিনি স্ত্রীকে ক্ষমতাসীন দলের নারী শাখার প্রধান নিযুক্ত করেন। তিনি পদাধিকারবলে দলের প্রেসিডিয়ামেও স্থান পান। অসম্ভব ক্ষমতালোভী এই মহিলা স্বামীকে ব্যবহার করে শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার ষড়যন্ত্র করেন বলে বার্তা সংস্থার বিশ্লেষণে বলা হয়।
২০১৪ সালে মুগাবে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাতীয়তাবাদী যোদ্ধা জয়েস মুজুরুকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। সর্বশেষ ঘটনায় পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে তিনি ক্ষমতাচ্যুত করেন। সর্বত্র গুজব রটে যায় যে মুগাবে তাঁর স্ত্রী গ্রেসকে প্রেসিডেন্ট করার পরিকল্পনা করছেন। এতে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে শামিল হয় নিপীড়ন-নির্যাতন এবং দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। দেশের সেনাবাহিনী এই নেতার জনবিচ্ছিন্নতাকে কাজে লাগায়। অদ্ভুত ধরনের এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর চূড়ান্ত পদত্যাগের ক্ষেত্র তৈরি হয়। জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিলেও সামরিক আইন জারি করেনি। সংবিধান স্থগিত কিংবা প্রেসিডেন্টকেও পদচ্যুত করেনি। সেনাবাহিনী শুরু থেকে পরবর্তী ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত তাদের ভাষায় ‘নিয়মতান্ত্রিকই থেকেছে- এই পদক্ষেপ কোনোভাবেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নয়’।
জিম্বাবুয়ের নগর-শহরে লাখ লাখ লোক আনন্দ-উৎফুল্ল সেনাবাহিনীর সমর্থনে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি সেনা অভ্যুত্থানের প্রশংসাও করে সাধারণ মানুষ। মুগাবের নিজস্ব দল তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। দেশের পতাকা হাতে মিছিলে যোগ দেয় লোকজন। অনেকের হাতে ছিল মুগাবেবিরোধী প্লাকার্ড। জনগণ চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমাদের জেনারেল-এগিয়ে চলো এগিয়ে চলো’, ‘মুগাবের শাসন আর না’। একটি দায়িত্বশীল নাগরিক মহল মনে করে ‘গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য এটি নতুন যুগের সূচনা’।
শ্বেতাঙ্গ শাসন অবসানে মুগাবের ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনে বিকল্প নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব হয়নি। ফলে মুগাবের পতনের পর কার্যত সেখানে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। সেনাশাসনকে সর্বত্র ‘আপৎকালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে মেনে নিলেও দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা হিসেবে নাগরিক সাধারণ তাঁকে মেনে নিতে চায় না। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণে ‘সামরিক শাসন’ এখন আর গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয় না। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে সামরিক শাসনের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এস পি হান্টিংটনের মতে সর্বত্র গণতন্ত্রের তৃতীয় তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। ফলে জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ নয় বলতে বাধ্য হয়। অথচ তাঁরা সামরিক অভ্যুত্থানের গতিপ্রকৃতি মোতাবেক পরিবর্তন ও পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। সামরিক বাহিনী বৈশ্বিক অবস্থানের কারণে সরাসরি নেতৃত্বে আসতে সক্ষম নয়। তাই তাঁরা মুগাবের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট, আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের নেতা এমারসন নানগাগওয়ার কাঁধে সাওয়ার হয়েছে। নানগাগওয়া জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে অবদান আছে। কিন্তু দীর্ঘকাল মুগাবে অপশাসনের অংশীদার হওয়ার কারণে তাঁকে নিয়েও বিতর্ক আছে।
দেশের একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এনদেবেল জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘সুকুরা হুনদি’ নামক গণহত্যায় তাঁর দায় আছে বলে তাঁকে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। এ ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অন্তর্ঘাত করেছিলেন বলে কথিত আছে। হীরা লুটপাটের ঘটনায়ও তিনি জড়িত। সুতরাং তাঁর ওপর নির্ভর করার বিপদ আছে। সেনাবাহিনী তার প্রতি আস্থাশীল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিকল্প না থাকায় মন্দের ভালো হিসেবে তিনি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সমর্থন পাবেন বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাই প্রস্তাব আসছে জাতীয় সরকার গঠনের। জিম্বাবুয়ের সকল মত-পথ তথা গোত্রসমূহের প্রতিনিধি এবং ‘সিভিল সোসাইটি’র সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন জাতীয় ঐক্যের সূচনা করতে পারে।
নির্দিষ্ট সময়কালের পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জিম্বাবুয়ের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মিত হতে পারে। পদত্যাগী নেতা রবার্ট মুগাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক চলছে। কট্টরপন্থীরা তাঁর অন্যায় এবং অনাচারের জন্য বিচার করতে চাইছে। তিনি অবশেষে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুবিধাজনক শর্তে পদত্যাগে রাজি হয়েছেন, এ রকম উপসংহার সহজেই টানা যায়। অপরদিকে পার্লামেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘অভিশংসন প্রক্রিয়া’ স্থগিত করেছে। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করে। দেশটির অনেক মন্ত্রী-এমপিও জনতার সঙ্গে উল্লাসে যোগ দেন। তাঁরা বলেন, একটা ‘দমবন্ধ শাসন’ থেকে বেড়িয়ে এলো জিম্বাবুয়ে। তবে মুগাবে দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পাবেন। পদত্যাগের চুক্তি অনুযায়ী তিনি দায়মুক্তি পাবেন। তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। ৯৩ বছর বয়স্ক এই জাতীয়তাবাদী নেতা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেছেন, জিম্বাবুয়ের মাটিতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি। নির্বাসনে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর। তবে তাঁর স্ত্রী গ্রেসের ওপর সেনাবাহিনী ও জনগণের ক্ষোভ সমধিক। তাঁকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হয়ে এযাবৎ যত দুর্নীতি করেছেন, তার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জনগণের দাবি রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন যে, স্ত্রীর ক্ষমতার মোহ মুগাবের পতনকে অনিবার্য করে তুলেছিল। মুগাবে তাঁর স্বর্ণযুগে বিশ্বনন্দিত হলেও এখন তার নিন্দা সর্বত্র। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ‘এবার জিম্বাবুয়ে নির্যাতনমূলক শাসন থেকে বের হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল’। মার্কিন প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, এটা জিম্বাবুয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়। ঘরে-বাইরে এককালের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী রবার্ট মুগাবে যে পরিণতির সম্মুখীন হলেন তা কারো কাম্য হতে পারে না। মুগাবের পরিণতি দেখে রবার্ট ব্রাউনিং-এর সেই বিখ্যাত ‘প্যাট্রিয়ট’ কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে।
There’s nobody on the house-tops now
Just a palsied few at the windows set
For the best of the sight as, all allow,
At the Shambles gat---or, better yet
By the very scaffold`s foot, I throw.”
ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত নতুন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া মুগাবের শেষ পরিণতি যদি মনে রাখেন, তাহলে এ কবিতার উদ্ধৃতি তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে না। রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার কারণে লোকেরা তাঁকে ‘ক্রোকোডাইল’ বা কুমির বলে জানে। তাঁর বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতা জিম্বাবুয়ের গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করুক এই কামনা সবার।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়