সিরিয়া সংকট
সিরিয়ায় মানবাধিকার বিপর্যয়
রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা বিধান সরকারের একটি অবশ্যকর্তব্য। নাগরিকরা দেশে কিংবা বিদেশে রাষ্ট্রের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু এমন যদি হয় যে সরকার তার নিজ নাগরিকদের সুরক্ষার বদলে তাদের নিধনে বছরের পর বছর নির্যাতন, নিপীড়ন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সিরিয়ার আসাদ সরকার ২০১১ থেকে সে কাজটিই করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের তৃতীয় তরঙ্গ নামে অভিহিত ‘আরব বসন্তের’ আবির্ভাব ঘটে সিরিয়ায়। ১৯৭০ সাল থেকে রাজতন্ত্রের মতো বংশানুক্রমিক শাসন চলছে সিরিয়ায়। বাথ সমাজতান্ত্রিক দলের আদর্শে মিসরের জামাল আবদুল নাসেরের স্টাইলে ১৯৬৩ সালে কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা ক্ষমতা দখল করেন। আরব বিশ্বের অব্যাহত অস্থিরতার বৈশিষ্ট্যগত ‘অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানে’ ১৯৬৬ সালে সালাহ জাদিদ ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। হাফিজ আল আসাদ ওই সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ‘শক্ত মানব’রূপে নিজেকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধে সিরিয়ার মারাত্মক বিপর্যয়কে সম্বল করে ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদ ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। ১৯৭৩ সালে আসাদ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে আবারও পরাজয় বরণ করেন।
১৯৭৫ সালে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে দখলকৃত ভূখণ্ডের বদলে শান্তি স্থাপনের প্রয়াস নেন। ১৯৭৬ সালে লেবাননে সেনা প্রেরণ করে আসাদ তার শক্তি বৃদ্ধি ও ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। ১৯৭৯ সালের ইরানি ইসলামী বিপ্লবের পর সিরিয়ায় অনুরূপ বিপ্লব দেখা দেয়। পরবর্তী বছরগুলোতেও অনুরূপ বিপ্লব সংঘটিত হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে এসব বিপ্লব দমন করা হয়। ২০০০ সালে হাফিজ আল আসাদ মৃত্যুবরণ করেন। বাশার আল আসাদ পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। প্রাথমিক অবস্থায় বাশার কিছু নমনীয় নীতি গ্রহণ করলেও শিগগিরই পিতার নির্মমতায় ফিরে যান। ২০১১ সালে বাশারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছে। এ ক্ষেত্রেও তিনি প্রাথমিকভাবে আপসি মনোভাব দেখালেও পরবর্তীকালে কঠিনতর নির্মমতার নীতি অব্যাহত রাখেন। আসাদবিরোধী আন্দোলন ওই নির্মমতার ফলে গৃহযুদ্ধের রূপ ধারণ করে। অধিকাংশ শহর ও গ্রাম বিরোধীদের দখলে চলে যায়। সেনাবাহিনীর একাংশ বিরোধীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে। সর্বত্র ফ্রি সিরিয়ান আর্মি অগ্রাভিযান লক্ষ করা যায়। সিরীয় প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ হিজাব বিদ্রোহীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য বাশার সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে। জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উত্থাপিত হয় বাশার সরকারের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা করেন জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র আবার ব্যবহৃত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে। এ সময় মার্কিনিদের চাপে সিরীয় বিদ্রোহী জোট থেকে ইসলামপন্থীদের বাদ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক এবং উপসাগরীয় দেশগুলো সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন কোয়ালিশনকে সিরীয় জনগণের আইনানুগ সরকার বলে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৩ সালের দিকে প্রাশ্চাত্য সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ইসলামী শক্তির বিরোধ বাধে। ২০১৪ সালে বাশার সরকারের একঘেয়েমির কারণে জাতিসংঘ আহূত শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালে বাশার সরকারের প্রতি ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সমর্থন পরিদৃষ্ট হয়। এ বছরের মাঝামাঝি সময় তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়ার এক বিরাট অংশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ইরানের সমর্থন, ইসলামিক স্টেটের পরিধি এবং ইসলামপন্থীদের প্রভাবের কারণে পাশ্চাত্যের রণকৌশলে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি আরব দেশ সিরিয়ার ইসলামী স্টেটের অবস্থানের ওপর বোমা বর্ষণ করে।
এদিকে সিরিয়ার কুর্দিরা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এতদসত্ত্বেও ইসলামী শক্তির অগ্রাভিযান অব্যাহত থাকে। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রাচীন নগরী পালমিরা দখল করে। জইস আল ফাতাহ নামে একটি ইসলামী গ্রুপ ইদলিব প্রদেশের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। এরকম একটি জটিল অবস্থায় পাশ্চাত্য যখন ইসলামী শক্তির বিজয় প্রতিহত করতে ব্যর্থ তখন বাশার আল-আসাদের পরাক্রমশালী প্রভু রাশিয়া ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিরিয়া যুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। পাশ্চাত্যকে রাশিয়া নিশ্চিত করে যে তার বোমারু বিমানগুলো শুধু ইসলামী রাষ্ট্রের অবস্থানগুলোর ওপর বোমা বর্ষণ করবে। কিন্তু পাশ্চাত্য দেখতে পায় যে তারা শুধু বাশারবিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বোমাবর্ষণ করছে। এভাবে রুশ সহযোগিতায় ক্রমশ বিদ্রোহীরা পিছু হটতে থাকে। ২০১৬ সালের আগস্টে তুর্কিরা সিরীয় বিদ্রোহীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যখন বাশার সরকারের বিজয় একরকম নিশ্চিত, তখন কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় ইসলামী শক্তিগুলো বাদে অন্যদের সঙ্গে একটি যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয় সিরীয় সরকার। মূলত এ যুদ্ধ বিরতি ছিল সরকারি বাহিনীর একটি বিভাজন কৌশল। পরে বিশেষত বর্তমান অবস্থা তা প্রমাণ করে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরীয় বাশার সরকারের বিরুদ্ধে কতিপয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু তত দিনে পর্যুদস্ত হয়েছে ফ্রি সিরিয়ান আর্মিসহ বাশারবিরোধী শক্তি। রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সহযোগিতায় প্রায় সমগ্র এলাকায় বাশার সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বিজয় অর্জনের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়া সফর করেন এবং মিশন সফল হওয়ার ঘোষণা দেন। সিরিয়ার উত্তরাংশের কুর্দিরা বাশার সরকারের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সেখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। যেহেতু এ কর্তৃত্ব তুর্কি স্বার্থের বিরোধী, সেহেতু ২০১৮ সালের প্রথম মাসেই তুরস্ক ওই কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ সিরীয় সংকটকে বহুমাত্রিকতা দিয়েছে।
সমগ্র সিরিয়ায় বাশার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর ও এমন কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকা ও অঞ্চল রয়েছে, যেখানে এখনো বিরোধীদের কর্তৃত্ব রয়েছে। এ রকম একটি এলাকার নাম হচ্ছে পূর্ব ঘৌতা। রবার্ট ফিস্কের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখানে বিরোধী শক্তির সামরিক অবস্থান নেই। রয়েছে বাশারবিরোধী জনগণের অবস্থান। পূর্ব ঘৌতা অবরোধ করে রেখেছে সরকারি বাহিনী। সেখানে জনগণের প্রতিরোধের মুখে সরকারী বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্র থেকে বোমাবর্ষণ—সবকিছুই করছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘৌতার দখলে ছিল আল নুসরা। আল নুসরাকে আল-কায়েদার অপভ্রংশ মনে করা হয়। কিন্তু ‘অবিশ্বাস্যভাবে সেখানে একজন সশস্ত্র মানুষকেও দেখা যাচ্ছে না। তথ্যপ্রমাণ এবং ছবি দেখে মনে হয় না সেখানে বাধা দেওয়ার মতো একজন সশস্ত্র লোক অবশিষ্ট আছে।’ হয়তো আল নুসরার অস্ত্রত্যাগীরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাই পাশ্চাত্য সেখানে প্রতিক্রিয়াহীন। সিরীয় বাহিনীর সঙ্গে রুশ বাহিনী একত্র হয়ে ঘৌতার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ঘৌতায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নিহত হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মার্ক লোকক বলেন, অবরুদ্ধ পূর্ব ঘৌতা এলাকায় তোনো ত্রাণের বহর যেতে পারেনি। আটকেপড়া লোকদের সরিয়ে নেওয়া কিংবা চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়াও সম্ভব হয়নি, বরং আরো বোমা বর্ষণ, আরো যুদ্ধ ও আরো মৃত্যু, আরো ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। আরো নারী ও শিশু হতাহত হচ্ছে। ক্ষুধা দুর্দশা সবই বাড়ছে। সাধারণ মানুষের সীমাহীন দুর্দশার কথা সবাই বুঝতে পারছে। কিন্তু কেউই আহা উহ! করছে না। ইসলামপন্থী আল নুসরার দোহাই দিয়ে তারা নিজ নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হতে কেউই রাজি নয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরত সেখানে নির্মম হওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিচ্ছেন। অন্যান্য শহর এভাবে মুক্ত হওয়ার পর বেসামরিক জনগণকে যেভাবে নিরাপদ স্থানে যেতে দেওয়া হয়েছিল ঘৌতার ক্ষেত্রে তা ঘটছে না। অবশ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ঘৌতায় ৩০ দিনের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার পর ১ মার্চ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি গৃহীত হলেও তা যথার্থভাবে কার্যকর হচ্ছে না। সিরিয়া এ প্রস্তাব মেনে নেয়নি। পরে বাশার সরকারের পক্ষে রাশিয়া দিনে পাঁচ ঘণ্টা যুদ্ধ বিরতি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপরও সরকারী বাহিনীর বোমাবর্ষণ যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে হাস্যকর করে তুলেছে। বিশ্বনেতারা তাঁদের ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেই তাঁদের দায়িত্ব সমাপন করছেন। জার্মান বিবৃতিতে খানিকটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। চ্যান্সেলর মেরকেলের কার্যালয় থেকে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পূর্ব ঘৌতায় হামলা ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মানবিক সংকটের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে জবাবদিহি করতে হবে। এই জবাবদিহি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ, বেসামরিক জনগণের উপর হামলা ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানে বাধা দেওয়া—সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর আলাপে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে সিরিয়ায় আর কোনো রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটলে আসাদকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে না। কোনোভাবেই এটা সহ্য করা হবে না। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পূর্ব ঘৌওতায় বিদ্রোহীরা দামেস্কে বোমাবর্ষণ করছে। আমরা কি তা সহ্য করেই যাব? অবশ্যই না।’ জেনেভাভিত্তিক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের মুখপাত্র রোনাল্ড গোমেজ এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব মেনে নিয়ে মানবাধিকার কাউন্সিল সিরিয়া সংকটের বিষয়ে জরুরি অধিবেশনে আলোচনায় সম্মত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে সম্মত হতে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ব্যর্থ হলে ভোটাভুটি মুলতবি রাখা হয়। বাশারের মিত্র রাশিয়া শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তবে বৈঠকে সিরীয় সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের নিন্দা করা হয়। বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন। সেখানে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘বিবেকের দূত’ নামের একটি এনজিওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ১৩ হাজার ৫৮১ জন নারীর পরিচয় খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। অনেকে কারাগারে নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘৌতায় গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৬০০ বেসামরিক লোক মৃত্যু বরণ করেছে। ঘৌতার বাসিন্দারা তাদের নিধনকারী সরকার, রুশ আক্রমণ এবং পাশ্চত্যের মৌনতায় একরকম ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও রাসায়নিক কর্মসূচিতে ব্যবহৃত সামগ্রীয় সিরিয়ায় পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
উপর্যুক্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে যে একজন স্বৈরশাসক কেবল নিজ ক্ষমতার জন্য দীর্ঘ সাত বছর ধরে নিজ জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ক্ষমতায় তিনি এতটাই মোহগ্রস্ত যে নিজ দেশকে বোমার আঘাতে আঘাতে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে অপর দেশের বিমানবাহিনীকে টেনে এনেছেন নিজ দেশের জনগণের ওপর বোমা বর্ষণের জন্য। অন্যদিকে বিশ্ব পরাশক্তি তাদের স্ব-স্ব স্বার্থে সিরিয়ায় পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির সহায়তা জুগিয়েছেন। মানবতা তথা গণতন্ত্র তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাদের স্বার্থ সুবিধে ও বিষয়আশয়। যুদ্ধ তা গৃহযুদ্ধ বা পরাশক্তির পরাক্রমের লড়াই—যা হোক না কেন, তা কখনো শান্তির সম্ভাবনা বহন করে না। সিরিয়ায় সরকার ও বিরোধী শক্তির সঙ্গে অবশেষে রুশ মার্কিন সমঝোতার প্রচ্ছন্ন উপসংহার এই ছিল যে, ‘সিরিয়া শাসিত হবে, সিরীয় জনগণের মতামতের দ্বারা।’ বলা হয়েছিল, গণতন্ত্রের অনুশীলন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা সিরীয় জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করবে। কিন্তু পরস্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত বাশারবিরোধী পক্ষ গণতন্ত্রের বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গণতন্ত্রের এবং শুধু গণতন্ত্রের অনুশীলনই সিরীয় জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ। মনীষী টি এইচ গ্রিনের ভাষায়, ‘ডেমোক্রাসি মে লুজ মেনি ব্যাটলস, বাট উইনস দি লাস্ট’।
অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়