প্রতিক্রিয়া
কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় শোকাহত বাংলাদেশ
আমাদের দেশে কয়েক দশকে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা বিমানে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বর্তমানে কোনো কোনো বেসরকারি বিমান সংস্থা আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করছে।
গতকাল সোমবার ইউএস-বাংলার এমনই একটি বিমান ৭১ আরোহী নিয়ে নেপাল যাচ্ছিল। যাত্রীরা একবারের জন্যও ভাবেননি, এই ফ্লাইটই তাঁদের নিয়ে যাচ্ছে জীবনের পরপারে। তাই তো বিমানে ওঠার সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তাঁরা। সেখানে তাঁরা প্রকাশ করেন বিমানযাত্রার উদ্দেশ্য ও অনুভূতি। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে কাঠমান্ডুতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপরই ঘটে অভাবনীয় সেই ঘটনা। অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় বিমানটি, কাছেই একটি ফুটবল মাঠে। আর চিরতরের জন্য পৃথিবী থেকে যান অর্ধশতাধিক যাত্রী।
বিমানের এ দুর্ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানাচ্ছিল। তবে রাতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ও নিহতদের নাম প্রকাশ করা হয়। আহতরা কে কোথায় চিকিৎসাধীন, তা-ও জানানো হয়।
বিমান দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিশ্বে ভয়াবহ অনেক বিমান দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি। বিভিন্ন কারণে ঘটে এ ধরনের দুর্ঘটনা। অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করা ছাড়া যেন কিছুই করার থাকে না। পাইলট-ক্রুরা হয়ে পড়েন নিরুপায়। বাংলাদেশের কয়েকটি বিমানের ভাগ্যেও জুটেছে এমন ঘটনা।
১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ ২৭-৬০০ বিমানটি বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি জলাভূমির মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত ঘরোয়া যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। এতে চারজন ক্রুসহ ৪৫ জনের সবাই নিহত হন।
এরপর ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ৮৫ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০৯ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় কুয়াশার কারণে রানওয়ের পাদদেশ থেকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁওয়ে একটি ধানক্ষেতে আছড়ে পড়ে। এতে ১৭ যাত্রী অহত হন।
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর আবারও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা ঘটে। এটিও ১৯৯৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানের মডেলের অনুরূপ ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেল। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০১ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। অবতরণের পর রানওয়ে ভেজা থাকার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে খাদে পড়ে যায়। এতে ৭৯ যাত্রী ও চার ক্রুর মধ্যে দুই যাত্রী আহত হন।
২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরেক দফা দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা উড়োজাহাজে ২২০ জন যাত্রী ছিলেন। ওই সময় বিজি-৫২ বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিনের ভেতর পাখি ঢুকে পড়ে। তখন চারটি ব্লেড ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেদিন সকাল ৭টায় রানওয়েতে অবতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
একই বছরের ৯ মার্চ কক্সবাজারে একটি কার্গো বিমান বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সে ঘটনায় পাইলটসহ তিনজন নিহত হন। উড্ডয়নের পাঁচ মিনিটের মাথায় সাগরে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
এ ধরনের দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে, সেটাই আমরা চাই। হতাহতদের পরিবার যেভাবে অসহায় হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার পর, সেটা যেন আর না ঘটে, সেটাই আমরা চাই। আমরা চাই নিরাপদ হোক মানুষের ভ্রমণ—আকাশে, জলে ও স্থলে।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন।