আন্তর্জাতিক
শ্রীলঙ্কায় দিকভ্রান্ত নির্বাচন, দিশাহীন রাজাপক্ষ
যাঁরা আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলোর দিকে লক্ষ রাখেন, তাঁরা জানেন, সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা নির্বাচন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের নানা দেশে নির্বাচনের ফলাফল, প্রার্থিতা সম্পর্কিত জটিলতা ও কারচুপির বিষয় নির্বাচনান্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলেও শ্রীলঙ্কায় এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। এবারের নির্বাচন শেষ হতে সেখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, কী হতে পারে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের ভবিষ্যৎ। গতবারের নির্বাচনে করুণ পরাজয় তাঁকে যেমন এক দিকভ্রান্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল, এবারের নির্বাচন শেষে তিনি অনেকটাই দিশাহীন। কারণ, কোনো কোনো বিজয় পরাজয়ের চেয়েও বড় গ্লানিকর, আর কিছু পরাজয় হতে পারে সম্মানের। কিন্তু রাজাপক্ষে এখন এমন এক নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন, যেখানে জয়-পরাজয় কোনোটিই মুখ্য নয় তাঁর কাছে; বরং বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, আগামী সরকারে তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে—তিনি সরকারে থাকছেন, নাকি যাচ্ছেন বিরোধীদের সঙ্গে। আর বিরোধীদের সঙ্গে গেলেও বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও স্বৈরশাসক এরশাদের মতো কোনো অবস্থায় পড়তে যাচ্ছেন কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। সব প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদের হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটা মাস।
আমরা জানি, অভ্যন্তরীণ নানা কারণের চেয়ে বহিঃশক্তির স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা মুখ্য হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার এবারের নির্বাচনে নানা অনিশ্চয়তা, আবেগ, উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে বহির্দেশীয় পরাশক্তির একটি ল্যান্ডিং স্টেশন হিসেবে শ্রীলঙ্কার গুরুত্ব আছে। আর সেদিক থেকে ধরলে রাজাপক্ষের সময় চীনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের অগ্রগতি ভারত ভালো চোখে দেখেনি। বিশেষ করে পাশের পরাশক্তি ভারতকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে নামসর্বস্ব কিছু চীনা প্রতিষ্ঠান শ্রীলঙ্কায় অনেক কাজ করার সুযোগ পায়। বলে রাখা ভালো, চীনের ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’ পরিকল্পনায় শ্রীলঙ্কা এক গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডিং স্টেশন বৈকি। এশিয়ার সঙ্গে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি বাণিজ্য বিস্তারে এ পথের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আর যা-ই হোক, অন্ধ ব্যক্তিও বুঝবেন, চীনের এই অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের বিষয়টি অন্তত ভারতের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তারই সরাসরি জবাব নয়তো এই রাজাপক্ষের চালচুলোহীন অবস্থায় পরাজয়বরণ? আর নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার ফল জন্ম দিয়েছে নয়া বিতর্ক। সে বিতর্কের আগুন অনেকটা উসকে দিয়েছেন রাজাপক্ষ স্বয়ং।
এবারের শ্রীলঙ্কা নির্বাচনের সুরতহাল প্রতিবেদন করতে গেলে খেয়ালে আসে কিছু বিষয়। প্রথমত, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় থেকেও নির্লজ্জের মতো সংবিধান সংশোধন করে আরো একবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার খায়েশ দেখানো রাজাপক্ষ পুরোপুরি ব্যর্থ। জানুয়ারি (২০১৫) নির্বাচনে তিনি হেরে যান শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির সাধারণ সম্পাদক মিথ্রিলা সিরিসেনার কাছে। তবু ক্ষমতালোভী রাজাপক্ষে হাল না ছেড়ে ১৭ আগস্ট সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন দলগতভাবে। কিন্তু সময় বদলালেও ফলাফলটা পাল্টে শুভদিন আসেনি; বরং জুটেছে শতছিন্ন বহুবর্ষী পাদুকার নির্মম প্রহার। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলেও (২২৫ আসনের সংসদে ১০৬ আসন) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আর রাজাপক্ষের ইউনাইটেড ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) ৯৪ আসনের বিপরীতে ১৬ আসনে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে বিপ্লবী তামিলদের। এখন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ছোট দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করলেও রাজাপক্ষের ভাগ্যে কী হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। আমি মনে করি, তিনি এত দিন শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে টিকে ছিলেন, সে মর্যাদা এখন ভূলুণ্ঠিত।
আলোচনা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেছিলেন ‘প্রিমাকভ ডকট্রিনের’ কথা। তাঁর হিসেবে ‘২০০৭ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কা, চীন, ইরান ও রাশিয়ার সমন্বয়ে এ অঞ্চলে ‘ঐক্য’ গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থবিরোধী প্রিমাকভ ডকট্রিন (Primakov Doctrine)। চীনের এ অঞ্চল ঘিরে যে ‘মুক্তার মালা’ নীতি, তা ভারত মহাসাগরে তার কর্তৃত্বকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছিল।
এদিকে, ভারত মহাসাগরে চীনের শক্তি বৃদ্ধিকে ভারত মেনে নিতে পারেনি। ফলে শ্রীলঙ্কায় একটা পরিবর্তন তাদের জন্যও জরুরি হয়ে দেখা দেয়। তখন বেলুচিস্তানের গাওদার বন্দর তৈরির শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে হাত দেয় চীন। আর এসব কারণে চরম অসন্তুষ্ট ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা শ্রীলঙ্কায় তখনকার সরকার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে কেউ কেউ দাবি করেন। অন্তত হাম্বানটোটায় চৈনিক সাবমেরিনের উপস্থিতি মেনে নেওয়াটা ভারতের সমরবিদদের জন্য অসহ্য হয়ে দেখা দেয়। এটা একাধারে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং মানহানিকরও বটে। তাই সহজ সমীকরণ, দলে ভাঙন সৃষ্টি করে সিরিসেনাকে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় এবং গত জানুয়ারি নির্বাচন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কফিনে ঠুকে দেয় শেষ পেরেক।
দীর্ঘদিন স্বৈরতান্ত্রিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় থাকা রাজাপক্ষ আসলে ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর দুর্বলতাগুলো। তিনি যেসব মানুষকে একান্ত আপন জ্ঞান করে নিরীহ জনগণের ওপর চালিয়েছিলেন অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার, একদিন তাঁরা বিদ্রোহ করে বসলে সে অবস্থান থেকে বেঁচে থাকার পথ কী হতে পারে, তা নিয়ে অনেকটাই অজ্ঞ ছিলেন রাজাপক্ষ। তিনি বুঝে উঠতে পারেননি, হঠাৎ করে ক্ষমতা থেকে পড়ে গেলে কী করতে হবে তাঁকে। এমনকি তিনি বিরোধী দলে থাকতে চাইলে সেখানকার করণীয় নিয়েও পুরো অজ্ঞাত তাঁর দল। একদিকে তাঁর কিছু ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার জনগণ তাঁর ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার জন্য উপকারী অনেক সিদ্ধান্ত নিলেও তা তাঁর নিজের ও দলের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেননি। অন্তত জনগণের কাছে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনেক দুর্বল ও অদক্ষ।
দেশ শাসনে রাজাপক্ষের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদর্শন ও স্বেচ্ছাচারী আচরণকে দায়ী করা যায়। তিনি সব ক্ষেত্রে নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে শাসনকাজ চালাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের দুর্বলতা ও খুঁতগুলো ধরে শুধরে নেওয়ার অবকাশ পাননি। তার এত দিনের সব ক্ষমতা সহজেই ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায় তাঁরই এককালের স্নেহধন্য সহকর্মী সিরিসেনার সামনে। আর এখন অনেকের হিসেবে তিনি পরাজিত আহত ও ভীতু সিংহ, একটা পর্দার অন্তরালে গিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে গুনতে শুরু করেছেন জীবনের শেষ দিন। আবার কেউ কেউ বলতে চাইছেন, শ্রীলঙ্কার মসনদ থেকে সরলেও রাজনীতির ময়দান থেকে পুরোপুরি সরে যাননি রাজাপক্ষ। এ প্রশ্নের অনেক বিতর্কিত উত্তরটিকে একটা সহজ সমাধানে পৌঁছানোর জন্য দিতে হবে অন্তত কয়েকটা মাস সময়। আর তার মধ্যে বদলে যাবে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট, অনেকটা বদলাবে শ্রীলঙ্কাও।
একটু ফ্লাশব্যাকে গেলে আমরা প্রত্যেকেই অনুমান করতে পারি, একটা বিষয় চীননির্ভর পররাষ্ট্রনীতি রাজাপক্ষের ওপর বীতশ্রদ্ধ করে তোলে ভারতকে। এটা সত্য যে, দাম্ভিক স্বৈরশাসক হলেও রাজাপক্ষের সময় শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। তবে চীনের অর্থে ঘটা ব্যাপক উন্নয়ন ম্লান হয়ে যায় ভারতকে ‘উপেক্ষা’ করার রাজনীতিতে। সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলমানদের ওপর জঘন্য নির্যাতনমূলক নীতি এবং পাশাবিক কিছু আচরণ রাজাপক্ষকে ঘৃণার বস্তুতে পরিণত করে। আর এমন পুঞ্জীভূত অনেক সমস্যা পুরোপুরি তাঁর বিপরীতে দাঁড় বাইতে থাকে; বলতে গেলে ত্বরান্বিত করে তার পতন।
পারিবারিক দুর্নীতির লাগামহীন প্রসার ও ক্ষমতা করায়ত্ত করার নোংরামির পাশাপাশি নির্লজ্জ মৌলবাদী আচরণ করে মুসলিম-তামিল সংখ্যালঘু দমনের অপরাজনীতি উচিত শিক্ষা দিয়েছে রাজাপক্ষকে। এক-একটা অসহায় তামিল বিপ্লবীর রক্তের ঋণ, এক-একটা গৃহহারা মুসলিম পরিবারের বিনিদ্র রাত আর অশ্রুর মূল্য কতটুকু কিংবা পাশবিক নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু শ্রীলঙ্কার নারীদের অভিশাপ কতটা ভয়াবহ, এখন তা হাড়ে হাড়ে অনুভব করার সময় রাজাপক্ষের জন্য। তবে শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কালো মেঘ এখনো কাটেনি; আমি বলব, সে মেঘেরও অনেক রং। অন্তত প্রথম রং খুঁজে নেওয়া যেতে পারে, এ ক্ষেত্রে যে নির্বাচনে বিজয়ী রনিল বিক্রমাসিংহেও পারছেন না এককভাবে সরকার গঠন করতে। কারণ একটাই, সংসদে সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় ১১৩ সদস্য নেই তাঁর দলে।
রাজাপক্ষের জাতশত্রু আহত বাঘ তামিলরা ১৬টি আসন পেয়ে সংসদে একটি শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবার। তাই আমার চিন্তা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য হয়তো সম্ভাবনার দুয়ার দুটি। প্রথমত, তামিলদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা অথবা রাজাপক্ষের দলের সমর্থন নিয়ে একটা ঐকমত্যের সরকার গঠন করা। আর সে ক্ষেত্রে কোথায় যাবেন রাজাপক্ষ। নির্বাচনে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতি গঠনে কাজ করার কথা বলেছেন। তাই যদি হয়, সেখানে রাজাপক্ষের কাজটা কী হবে? তিনিও কি হবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত? নাকি সবেধন নীলমণি নামমাত্র কোনো পদ! আর যদি তিনি নেহাত ইগোর কারণে সে প্রস্তাবে রাজি না হন, তবে সেখানে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে পোড়খাওয়া তামিলরা। আর যদি ঘুণাক্ষরেও তাদের ভাতৃ-মাতৃ-পিতৃ-ভগ্নি হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠে! আমি মনে করি, তা আর কিছু না হোক, অন্তত পক্ষাঘাতগ্রস্ত রাজাপক্ষেকে বালিশ ছাড়া শুইয়ে দিতে তামিলদের একটু আগ্রহই যথেষ্ট হবে।
আমার চিন্তা রাজাপক্ষের জন্য দুশ্চিন্তার মেঘ এত সহজে কাটবে না। কারণ একটাই, মোট ২২টি জেলার মধ্যে তামিলদের জন্য নির্ধারিত তিনটি জেলায় প্রতিটি আসনে তামিল সমর্থিত সংগঠনগুলোর নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছেন। অর্থ পরিষ্কার যে, শ্রীলঙ্কার মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো তামিলদের এখনো আস্থায় নিতে পারেনি, পারবেও না। আর তাদের একেবারে সহ্য করতে না পারা তামিলরাও চায় পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। সেদিক থেকে চিন্তা করে নিজ পায়ে কুড়াল মারার মতো প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে তামিলদের স্বায়ত্তশাসন দিতে রাজি হবেন, এটা চিন্তায় আনাও অসম্ভব। আর সেখানেও অনেকটা অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে রাজাপক্ষের ভবিষ্যৎ। আমরা সবাই জানি, শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বরাবরই দুটি রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করছে—ফ্রিডম পার্টি ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি। আর এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় যে দলের পক্ষে যাক না কেন, তাঁরা যে আবার ক্ষমতার কেন্দ্রে তা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যেতেই পারে।
নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু সে পরাজয় যদি একজন অত্যাচারী শাসকের পতন এবং আস্তাকুঁড়-যাত্রাকে নিশ্চিত করে দেয়, তবে তা হবে ভিন্ন প্রসঙ্গ। আর এবারের শ্রীলঙ্কা নির্বাচন তেমনি আভাস দিচ্ছে নানা দিক থেকে। শক্ত হাতে তামিল বিদ্রোহ দমন করার নামে যে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিলেন রাজাপক্ষ, তা আন্তর্জাতিক আসরে শ্রীলঙ্কার ভাবমূর্তিতে ক্ষুণ্ণ করেছে। তামিল সমাজে লঙ্কার কসাই হিসেবে পরিচিত রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে দেদার। এ ক্ষেত্রে ৪০-৫০ হাজার নিরীহ তামিল সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু মুসলিম হত্যায় অভিযোগের তীর রাজাপক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে। তখন জাতিসংঘ একটি তদন্ত দল পাঠাতে চাইলেও তৎকালীন সরকার তার অনুমতি দেয়নি। এখন নির্বাচিত সরকার কী করে সেটা হবে, দেখার বিষয়। এখন জাতিসংঘ তাদের যা ইচ্ছা করুক, তামিলরা যদি সরকার গঠন করতে সমর্থন দেয়, তাহলে সরকার নিশ্চিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যাচাই করে দেখবে। আর সেটা যদি নাও হয়, তবে সাধারণ তামিলদের রোষ থেকে রাজাপক্ষেকে রক্ষা করবে কে? আর কটুকথা বলতে চাইলে সহজ প্রশ্ন, দেশ থেকে পলায়ন নাকি তামিল আক্রমণে অক্কা পাওয়া—কী অপেক্ষা করছে দিশাহীন সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য? আর এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন। তবে সবচেয়ে বড় দিক, ভাগ্যদেবী সহসা সহায় হচ্ছেন না রাজাপক্ষের পক্ষে, এটা নিশ্চিত করে বলা যেতেই পারে।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।