চীন-ভারত
শি জিনপিং-মোদি বৈঠকের হিসাব-নিকাশ
বৈঠকটি ছিল অনানুষ্ঠানিক ও নজিরবিহীন। একরকম বেড়াতে যাওয়ার মেজাজে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি বৈঠক ও প্রটোকলের চেয়ে দুই নেতা ব্যস্ত ছিলেন আনন্দ আমেজে। এভাবেই অনুষ্ঠিত হয় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে হালকা মেজাজের ছয়টি বৈঠক। মধ্যচীনের উহান শহরে দুই নেতা দুদিনের জন্য একত্র হন। তাঁরা একসঙ্গে উহান লেক এলাকায় প্রাতঃভ্রমণ করেন। এরপর লেকের পানিতে নৌকায় চড়ে অনেকক্ষণ একসঙ্গে কাটান। দুই নেতা এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। দুপুরে উহান নগরীতে তাঁরা মধ্যাহ্নভোজ সারেন। তবে সেটি রাষ্ট্রীয় ভোজসভা ছিল না। কোনো রকম তোপধ্বনিও ছিল না।
কূটনীতির ভাষায় এ ধরনের বৈঠক তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বৈঠক শেষে কোনো যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। তবে তারা এই সেদিনের দোকলাম উপত্যকাকে কেন্দ্র করে যে পারস্পরিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা ভুলে গিয়ে ‘ভালো সম্পর্ক’ গড়ে তোলার ওপরে জোর দেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের পর প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, দুই নেতা চীন-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন ও সীমান্তে উত্তেজনা নিরসনের জন্য আরো কার্যকর কৌশল অবলম্বনের ওপর দুই নেতা জোর দেন। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিকতা ও উষ্ণতা কোনোটাই ছিল না। তাঁদের ভাষায়, দুই নেতার সাক্ষাতের পর্বটি ছিল অনানুষ্ঠানিক আড্ডা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের। এ সময়ে উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে বার্তা সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়।
চীন-ভারত বৈঠকটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মোদি সরকার অভ্যন্তরীণ সংকট, আঞ্চলিক প্রাধান্য হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক দ্বৈধতা কাটিয়ে উঠে ব্যক্তি ও শাসক দলের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকটি করে থাকবে। রাজনীতির যাঁরা খবর রাখেন, তাঁরা নিশ্চয় জানেন যে সাম্প্রতিক সময়ে মোদি সরকার অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছে। কয়েকটি রাজ্যে আঞ্চলিক দল তাদের ওপর থেকে আস্থা প্রত্যাহার করেছে। অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে তারা পরাজিত হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে। দুর্নীতির কবলে সরকার বিব্রত অবস্থায় রয়েছে। এ সময়ে চীনের মতো সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির সঙ্গে বৈঠক করে যদি ইমেজ বৃদ্ধি করা যায়, সে চেষ্টাই করছেন নরেন্দ্র মোদি। অপরপক্ষে শি জিনপিংয়ের গদি এতটাই শক্ত হয়েছে যে তিনি যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম। সে কারণে মোদি সরকার যখন বৈঠকের প্রস্তাব করেছে, তখন চীন দায়সারা গোছের সাড়া দিয়েছে।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের দাপটে ভারত একরকম কোণঠাসা। শ্রীলঙ্কায় একটি বন্দর ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে চীন। চীনের নৈকট্য ঠেকাতে সেখানে সরকার বদলে সহায়তা করেছে ভারত। কিন্তু চীনকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়নি। মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিল ভারত। চীনের এক হুমকিতে তা থেমে গেছে। বছর দশেক আগে মালদ্বীপ সরকারের অনুরোধে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ছিল ভারত। সে স্বাচ্ছ্যন্দকর প্রভাববলয় এখন আর নেই। মহাসাগরে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে আনাগোনা বেড়েছে চীনের। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে তথা গোটা আফ্রিকায় চীনের এখন একাধিপত্য। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ভালো অবস্থান থাকলেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে টেক্কা দিতে গিয়ে ক্রমহ্রাসমান হয়েছে ভারতীয় প্রভাব। তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কাশ্মীর নিয়ে চরম উত্তেজনাকর অবস্থায় আছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে চিরস্থায়ী শত্রুতা তো আছেই। মিয়ানমারের সঙ্গে চীন ও ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সেখানে অনাহারিত বিপুল সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চীন ও ভারতের রয়েছে প্রতিযোগিতা। চীন সে ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে অনেক গুণে। মিয়ানমারের দ্বার এই সেদিন খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববাণিজ্যের জন্য। এর আগে সর্বতোভাবে চীনের সহায়তায় চলছিল মিয়ানমার। এখনো আমদানি-রপ্তানি ও সামরিক সহায়তার জন্য তারা চীনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
চীন-ভারতের সম্পর্কের সবচেয়ে নাজুক দিক হলো বৈশ্বিক সমীকরণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান পরাশক্তি চীনকে পরাভূত করার জন্য ভারতকে বেছে নিয়েছে। পাশ্চাত্যের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য এখন অবারিত দ্বার ভারতে। এখন তারা যৌথ সামরিক মহড়া প্রদর্শন করছে। সমরাস্ত্র ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করছে পাশ্চাত্য। মুসলিম দেশগুলোর বৈরিতা অতিক্রম করে ইসরায়েলকে ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত করেছে ভারত। যে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল কৌশলগত বন্ধুত্বের, এখন তা শীতলতম স্তরে অবস্থান করছে। যে পাকিস্তান ছিল চিরকাল মার্কিনিদের মিত্র, এখন তারা হচ্ছে একরকম কৌশলগত শত্রু। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করেছে। এ রকম আন্তর্জাতিক সমীকরণে চীন-ভারত মৈত্রী অযাচিত এবং অপ্রত্যাশিত। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে ভারতের রয়েছে প্রাধান্যের প্রতিযোগিতা। দুটো দেশই প্রবলভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার কর্তৃত্ব নিয়ে স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে তাদের। পৃথিবীর এক বিপুল ২০০ কোটি মানুষের আবাসস্থল এই দুটি দেশ। আয়তনেও এশিয়ার প্রায় অর্ধেক দখল করে আছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ভারতের সঙ্গে সমীকরণ করছে, ঠিক তেমনি চীন আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছে। আর পাকিস্তান তো চীনের বিশ্বস্ত মিত্রই। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই যখন পরিস্থিতি তখন চীন-ভারত শীর্ষ বৈঠক দৃশ্যমানভাবে উপভোগ্য হলেও চূড়ান্ত বিবেচনায় উপকারী নয় ।
এসব অতিক্রম করেও চীন-ভারত ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বার্থ-সুবিধার সংযোগ একান্তই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। যেমন—রুশ-মার্কিন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বাণিজ্যিক আদান-প্রদান। কখনো কখনো অতীতে যেমন স্নায়ুযুদ্ধের মাঝেও স্বার্থের ভাগাভাগি বা প্রভাব বলয়ের ঐক্য লক্ষ করা গেছে, তেমন কিছু অসম্ভব নয় চীন-ভারত সম্পর্কে। চীন যেমন ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান ওয়ে’র মাধ্যমে তার বাণিজ্য সুবিধা নিরঙ্কুশ করতে চায়, ঠিক তেমনি ভারত চায় তার সমান সুবিধা। এ জন্য সদ্যসমাপ্ত শীর্ষ বৈঠকে এসব আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা সরকারি বা বেসরকারিভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ঘোষিত বিবৃতির বাইরে এ কথাও বলা হয়েছে যে চীন ও ভারত নিজেদের সমান্তরাল অর্থনৈতিক উত্থান ও কৌশলগত গুরুত্বকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এ জন্য দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় সম্মত হয়েছে, যাতে এ অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায় এবং এশীয় শতাব্দীর পথ তৈরি হয়। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, এশীয় শতাব্দীর কথা বলে তারা মূলত এশীয় নেতৃত্বের কথাই বোঝাতে চায়।
বার্তা সংস্থার বরাতে বলা হয়, শি জিনপিং নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বলেছেন, চীন ও ভারতের উন্নয়ন বর্তমান সময়ের প্রয়োজন। এটা দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। চীন ও ভারত উভয়েরই উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। চীনা নেতা আরো বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই দেশ উদীয়মান অর্থনৈতিক কাতারেও সবচেয়ে বড় শক্তি। এ দুটি দেশের সম্পর্ক ভালো হলে তা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে। সর্বশেষ বৈঠকের পর আলোচনার সারসংক্ষেপে বলা হয় যে, চীন ও ভারত পরস্পরের জন্য লাভজনক ও টেকসই উন্নয়নে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে একমত হয়েছে, যাতে দুই দেশের আধুনিকায়ন ও জনগণের সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। একই সঙ্গে দুই দেশ পরস্পরের অর্থনীতির সুবিধাজনক দিকগুলো কাজে লাগাতে মতৈক্যে পৌঁছেছে। দুই দেশের নেতারা সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও জনগণের মধ্যকার যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায় নিয়েও আলোচনা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি শি জিনপিংকে আগামী বছর একই রকম অনানুষ্ঠানিক সফরের জন্য ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শি-মোদির পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে আস্থার সঞ্চার করবে বলে সম্মেলন শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও চীন শান্তি রক্ষায় দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে। তারা সীমান্ত বিরোধের ন্যায্য,যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের প্রয়াসে সমর্থন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, চীন ও ভারতের নেতারা এই মর্মে একমত হয়েছেন যে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ ও মতপার্থক্য নিরসনের জন্য দুই দেশ যথেষ্ট পরিণত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ। দুই দেশ নিজেদের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ও জাতীয় সমর্থন নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাতে সম্মত হয়েছে। বাণিজ্য, সন্ত্রাস দমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং মানবজাতির জন্য রোগ, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবিলায় দুই দেশ অভিনব সমাধান উপস্থাপনে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সম্পদ একসঙ্গে এনে কাজ করবে।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই বৈঠকে চীন ও ভারত আফগানিস্তানে যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা এ জন্য সম্ভাব্য প্রকল্প চিহ্নিত করবে, আলোচনায় এগিয়ে নেবে এবং খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল চীন ভারতের এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পটভূমি হিসেবে দোকলাম সীমান্ত সংকটের কথা উল্লেখ করেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৭ সালে চীন-ভুটান-ভারতের ত্রিসীমায় অবস্থিত উপত্যকা বা চারণভূমির মালিকানা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ১৬ জুন দোকলাম সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনী একটি রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করে। ১৮ জুন ২৭০ জন ভারতীয় সৈন্য অস্ত্রশস্ত্রসহ চীনাদের নির্মাণকাজে বাধা দেয়। এ নিয়ে চীন ভারত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। চীন ভারতের সীমান্ত সমস্যা বড় জায়গাটি হচ্ছে, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ। চীন এই প্রদেশের ব্যাপক অঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করে। ভারতও ‘পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশ’ নামে একে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল ম্যাকমোহন যে সীমান্ত রেখা ‘ম্যাকমোহন লাইন’ নির্ধারণ করেছিলেন তা মেনে নিতে চীন বরবরই অস্বীকার করে আসছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৬২ সালে চীন-ভারতের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
চীন ওই সময়ে আসামের সমতলভূমি পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে বিপুল এলাকা দখল করে নেয়। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হস্তক্ষেপে অধিকৃত এলাকা ফেরত পেলেও এখনো অরুণাচল প্রদেশের এক বিরাট অঞ্চল দখল করে আছে চীন। এলাকাটি আকসাই চীন নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক সমীকরণ, আঞ্চলিক প্রভাবকে অতিক্রম করে চীন-ভারত সম্পর্কের বড় সমস্যা হচ্ছে ওই দখলকৃত ভূভাগ। এই ভূ-অংশের ক্ষেত্রে দুটো দেশ এতটাই সংবেদনশীল যে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অরুণাচল প্রদেশ সফর করলে চীন তার প্রতিবাদ জানায়। চীন-ভারত বিরোধের আরেকটি ঘটনা হলো, তিব্বতের শাসক এবং ধর্মীয় নেতা দালাইলামার ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ। ১৯৫১ সালে চীন জোরপূর্বক তিব্বত দখল করে নিলে শাসক দালাইলামা ১৯৫৯ সালে ভারতে আশ্রয় নেন। দালাইলামা মাঝেমধ্যেই বিরোধী বক্তব্য দিয়ে চীন-ভারত সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটান।
ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম দিকে এ বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না। ভারতের নেতা জওহরলাল নেহরু ১৯৪৯ সালের সমাজতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানান। চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারত সফর করেন। এ সময় চীন-ভারত ভাই ভাই আওয়াজ শোনা যায়। অনেক অনেক বছর পরে আবার যখন অনানুষ্ঠানিক হলেও চীন-ভারত সম্পর্কের সূচনা হয়েছে, তখন একে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক ভাবেই দেখতে হবে। বিশ্ব শান্তি, বিশেষত এশিয়ার শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুস্থিতির জন্য চীন-ভারত মৈত্রী অপরিহার্য।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।