স্মরণ
তরিকুল ইসলাম একজন ক্ষণজন্মা জননেতা
সময়টা তখন ১৯৮১ সাল। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে হাটিয়ে ক্ষমতা নিয়েছেন হুসাইন মো. এরশাদ সামরিক শাসক হিসেবে। সেই সময় বয়রা সার্কিট হাউসে থাকতেন ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল হক, তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক আসাফুদোলা রেজার জামাতা। বয়রা সার্কিট হাউসটিতে তৎকালীন সেনা শাসকের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পও ছিল। দৈনিক ইত্তেফাকের খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে যাতায়াত ছিল মরহুম আইয়ুব হোসেনের। আইয়ুব ভাইকে মোটরসাইকেলে বহন করে আমাকে মাঝেমধ্যে সেখানে নিয়ে যেতে হতো। একদিন বয়রা সার্কিট হাউসে থাকা অবস্থায় পাশের রুমে মানুষের আর্তনাদ শব্দ শুনতে পেলাম। পরে ম্যাজিস্ট্রেট শামছুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাশের রুমে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামকে ধরে এনে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারণ তাঁকে বিএনপি ছেড়ে এরশাদ সরকারে যোগদানের জন্য এবং পূর্ণ মন্ত্রীর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তরিকুল ইসলাম রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর এই নির্যাতন। নির্যাতন বর্ণনা শুনে আৎকে উঠেছিলাম কারণ তৎকালীন সামরিক জান্তা প্লাস [যন্ত্রাংশ খোলার যন্ত্র ] দিয়ে তার দাঁত উপড়ে ফেলেছে, পাড়িয়েছে গলা ও বুকের ওপর। তবে তরিকুল ইসলাম কোনো অবস্থায়ই বিএনপি ত্যাগ করতে রাজি নন।
কোনো প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ না করায় সেদিন থেকে তরিকুল ইসলামের ওপর আমার ভক্তি শ্রদ্ধা্ বেড়ে যায় । পরে মরহুম আইয়ুব ভাইয়ের কাছে শুনেছি তরিকুল ভাইয়ের বাম রাজনীতিতে ত্যাগ তীতিক্ষার কথা। কলেজ জীবনে ছাত্রনেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন তরিকুল ভাই। এম এম কলেজে ছাত্র রাজনীতি করে ভিপি হয়ে ছিলেন। তরিকুল ভাই, খালেদুর রহমান টিটো ঘনিষ্ট সহকর্মী ছিলেন ইত্তেফাকের মরহুম আইয়ুব ভাই। মরহুম আইযুব ভাই কাছে তরিকুল ভাই রাজনীতি গল্প শুনে তরিকুল ভাই আমার হৃদয়ে শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়ে ছিল।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা কভার করার জন্য আমি আর আইয়ুব ভাই মিলে কুষ্টিয়া্ থেকে বরিশাল পযর্ন্ত সফর সঙ্গী ছিলাম। এই সময় খুলনা ইত্তেফাক অফিসে প্রথম ফ্যাক্স মেশিন স্থাপন করা হয়। তৎকালীন সময় দৈনিক ইত্তেফাক ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাই এই প্রত্রিকায় সব সাংবাদিকদের কদর ছিল। এই সময় তরিকুল ভাই সাথে প্রথম পরিচয় হয়। আইয়ুব ভাই কাছে আমার আদি বাড়ি যশোরের মনিরামপুর শুনে তরিকুল ভাই খুশি হন। ফলে ঘনিষ্টতা দিন দিন বাড়তে থাকে।
তরিকুল ভাইয়ের সঙ্গে কত স্মৃতি তার কোনটা রেখে কোনটা লিখব তার হিসাব করতে খেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় বহু চেষ্টা করে কিছু লিখতে পারিনি ।
ছোট একটা ঘটনাদিয়ে স্মৃতিচারণ শুরু ,যশোর ৫ অথাৎ মনিরামপুরে এমপি তখন টিপু সুলতান। তিনি মনিরামপুর যাওয়ার পথে তার গাড়ি চাপায় এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। এই ঘটনায় এলাকার লোকজন ফুসে উঠে, তারা মনিরামপুর থেকে ফেরার পথে টিপু সুলতান এমপির গাড়ি আটকানোর প্রস্তুতি নিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে ছিল। এই সময় কেশবপুর থেকে তরিকুল ইসলাম যশোর ফিরছিলেন। ঘটনা শুনে তিনি মনিরামপুরে অবস্থান রত টিপু সুলতানকে নিজ গাড়িতে করে যশোর নিয়ে আসেন। বিপদে পড়লে সে যে দলের হোক তার পাশে দাঁড়ানো ছিল তরিকুল ভাই একটি ধর্ম।
১৯৯৬ সালে ডিসেম্বরে বসুন্দিয়াই সড়ক দুর্ঘটনায় আমার ছোট ভাই আবু সালে নিহত হয়। ভোররাতে আমি যখন খবরটি পাই প্রথম টেলিফোন করে শামছুর রহমান কেবল ভাইকে জানায়। তারপর সড়ক পথে খুলনা থেকে যশোর গিয়ে দেখি সেখানে তরিকুল ইসলাম যশোর হাসপাতালে নিজে উপস্থিত। আমাকে শামছুর রহমান কেবল ভাই তার অফিসে বসিয়ে শান্তনা দিয়ে ভাই মৃত্যুর খবরটি জানান। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে কি করবো তা ভাবতেই পারছিলাম না। তখন তরিকুল ভাই আমার ছোট ভাই মৃত দেহর ময়না তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে গাড়ীর ব্যবস্থা করে লোক দিয়ে আমাকে খুলনা পাঠানো ব্যবস্থা করে । পরে কেবল ভাই বলে ছিল শুধু আমার ভাই না ঐ দিনের দুঘটনায় সকল নিহতদের তরিকুল ভাই বিশেষ ব্যবস্থা ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে লাশ গন্তব্য স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ছিলেন তার নিজ খরচ । ঢাকার দৈনিক খবরের পত্রিকার এক সাংবাদিক [নামটা এই মুহূর্তে মনে আসছে না] যশোরে ব্যক্তিগত কাজে এসে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। তখনো তরিকুল ভাই নিজ খরচে সেই সাংবাদিকের লাশ ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
এখানে আর একটি কথা না বললেই নয় যশোরে উদীচী অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর তরিকুল ভাই খুলনায় আমাকে টেলিফোন করে বলেছিলেন, খুলনা থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো ব্যবস্থা করতে । আর যাদের তিনি যশোর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তাদের চিকিৎসার খোজ খবর নিতে । রাত ভোর তিনি টেলিফান করে খোজ নেন খুলনায় পাঠানো রোগীদের কী অবস্থা । আমার প্রতি নির্দেশ ছিল চিকিৎসার জন্য যা দরকার আমি যেন তাই করি। এমনকি শেষ রাতে তিনি খুলনা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করতেও বলেছিলেন।
এ ছাড়া তরিকুল ভাই সঙ্গে ঘুরে দেখেছি বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নাম বলতে পারতেন। কোনোদিন শুনি নাই কাউকে বলছেন তোমার নাম যেন কী?
দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকা বের হওয়ার আগে হতেই তিনি পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ফকির শওকাতকে আমার কথা বলে রেখে ছিলেন। তরিকুল ভাই দল-মত নির্বিশেষে একটি নিরপেক্ষ পত্রিকা তার মতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর মতন করতে চেয়েছিলেন। যাত্রা শুরু হয়ে ছিল সেভাবে ,কিন্তু ২০০৮ সালের পর তার ছন্দ পতন ঘটে। পত্রিকাটি তার পুরানা ঐতিহ্য আর ধরে রাখতে পারেনি। ফকির শওকাত সম্পাদক পদ ছেড়ে দেওয়ার পর তরিকুল ভাই আমকে কয়েকবার বলেছেন ‘তুই যশোরের ছেলে ,বাপের জমি-জমা আছে- তাই যশোরে চলে আয়। রাজনীতি কর আর দৈনিক লোকসমাজটা চালা।’ কিন্তু আমি জন্মস্থান খুলনা ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি হইনি। দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার শুরু থেকেই আমি তার সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। এই সুযোগে তার সাথে ঘনিষ্ট এবং একপর্যায়ে তিনি আমার অভিভাবক হয়ে পড়েন।
দৈনিক লোকসমাজের খুলনা ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব নিতে তরিকুল ভাইর সাথে আমার কথা ছিল আমার সব সংবাদই ছাপাতে হবে । বস্তুনিষ্ট সংবাদ হলে তার দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও লেখার অনুমতি ছিল আমার। শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের অপরাধ জগতের খবর প্রথম ধারাবাহিক ভাবে ছাপা হয় দৈনিক লোক সমাজে । এই সিরিজ বন্ধ করার জন্য এরশাদ শিকদার নানাভাবে চেষ্টা করেই সফল হতে পারেনি। দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে আমি সাহসী সাংবাদিকতা করতে পেরেছি। এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে । আর তার পিছনে নেপথ্যের অবদান তরিকুল ইসলামের। তিনি বলতেন সত্য সব থেকে বেশি শক্তিশালী, তাই সংবাদ বস্তুনিষ্ট হলে তার ভীত নড়বড়ে হয়ে যাবে। তরিকুল ভাই নিজেই খুব সাহসী এবং সাহসী মনোবল নিয়ে চলতেন ,অন্যায়ের সাথে কোনোদিন আপস করেননি। প্রতিমন্ত্রী, পূর্ণ মন্ত্রী এবং বিএনপির শীর্ষ নেতা হওর পরও তার আচার আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি মানুষকে খুব অল্প সময় আপন করে নিতে পারতেন।
এখানে একটা কথা না বললে নয়, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একটি অংশের সভাপতি মরহুম গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং মহাসচিব মরহুম মঞ্জুরুল আলম আর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। আমি তখন বিএফইউজের সিনিয়র সহসভাপতি। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এবং চরমপন্থী আর সন্ত্রাসী দমনের জন্য দেশে তখন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন ক্লিন হার্ট অপারেশন চলছে। তরিকুল ইসলাম তখন তথ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক নেতা জহিরুল হকের নেতৃত্বে আমরা বিএফইউজের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করতে যাই। তরিকুল ভাইসহ সেখানে তখন তৎকালীন অন্য কয়েকজন মন্ত্রীও ছিলেন। সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা পুনঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী কিছুটা রাজি হলেও বাগড়া দেন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি আর্থিক লোকসান থাকা পত্রিকাটি আর চালু করতে চান না। এই সময় তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আর্থিক লোকসানের কারণে পত্রিকাটি আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধ করেনি। পত্রিকাটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিয়ে বন্ধ হয়েছে, সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চালু করতে হবে ।
কারণ সেখানে আমাদের মনা সাংবাদিক বেশি কর্মরত ছিল। একপর্যায়ে অপারেশন ক্নিন হার্ট যশোরে বন্ধ করার জোর দাবি জানান তরিকুল ইসলাম, তিনি বলেন যশোর জেলায় কোনো হত্যাকাণ্ড নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন এই অপারেশনের কারণে প্রকৃত সন্ত্রাসী আর চরমপন্থী এলাকা ছাড়া। এখন বিএনপি, যুবদলের যে মাঠের দুর্দান্ত কর্মীরা মাঠে রয়েছে তারা এই অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে কথা গুলি শুনলেন, কিন্তু কোনো মন্তব্য করলেন না। পরে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান রুম থেকে বের হয়ে তরিকুল ভাইকে বললেন ‘আপনার তো ভালো সাহস ম্যাডামের সামনে এভাবে কথা বলতে পারলেন, বলেন ম্যাডাম যদি রিয়্যাক্ট করত তাহলে কী হতো? তরিকুল ভাই সাইফুর রহমানকে বলেছিলেন প্রকৃত চিত্র আপনারা ম্যাডামকে দেন না বলেই তো আজ এই অবস্থা।
আজ বিএনপির অনেক নেতাই আক্ষেপ করে বলেন অপারেশন ক্লিন হার্টে বিএনপি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দলের মারদাঙ্গা কর্মীদের হারিয়ে। তরিকুল ইসলাম অপাদমস্তক ছিলেন স্পষ্টবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তি, কোনো ছলচাতুরি ছিল না তার ভিতর। তিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। কী বললে কে খুশি বা কে অখুশি হবে তা তিনি ভাবতেন না। একজন মানুষ হিসেবে সবসময় অন্য একজন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
চারদলীয় জোট সরকারের সময় তরিকুল ভাই বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। খুলনায় এবং রাত্রীযাপন করছেন। সন্ধ্যার পর তার সাথে সার্কিট হাউসে দেখা করতে গেলেই তিনি আমাকে ডেকে বলেন ,রাতে তার সাথে খাবার খেতে । রাতে খাবার টেবিলে বসা,তখন সুন্দরবনের ডিএফও, খুলনা সার্কেল রেঞ্জারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। খাবার টেবিলে আমাকে দেখিয়ে তরিকুল ভাই ডিএফও/রেঞ্জারকে বললেন একে চেনেন –বড় সাংবাদিক? ক্ষুরধার লেখনি তার। আমি তরিকুল ভাইকে বিনীতভাবে জানালাম যেদিন আপনি বন ও পরিবেশমন্ত্রী হয়েছেন সেদিন থেকে আমি সুন্দরবন বিভাগের কোনো অফিসে যাই না ।
তরিকুল ভাই বলেন, আমি জানি বলেই তো সবাইকে তোকে চিনিয়ে দিলাম। এমন প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন তিনি, যারা তার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছে একমাত্র তারাই বলতে পারে তরিকুল ইসলামের হৃদয়ে বিশালতা। তিনি মন্ত্রী হওয়ার আগে যাদের সাথে যেভাবে মিশতেন, মন্ত্রী হওয়ার পরও তাদের সাথে সেই সব স্থানে গিয়ে সময় কাটাতেন। অনেক সময় তিনি কোনো প্রটোকল না নিয়ে একা একাই গ্রাম গঞ্জে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতেন। গ্রামের চায়ের টুলে বসে সবার খোজখবর নিতেন। মাঝে মাঝে বলতেন ‘তোদের খুলনার নেতাদের মতো আমার কোনো গানম্যান মাসেলম্যান লাগে না।’ আর যশোর শহরে কোথায় কী ঘটছে, কোন নেতা বা কোন সাংবাদিক কোথায় কোথায় যাচ্ছে তা সব খবর তিনি মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যেতেন। একদম তৃণমূল নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। যা আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতার এত সোর্স আছে বলে আমার জানা নাই। কারণ তরিকুল ইসলাম সবার মুঠো ফোন ধরতেন, যে যাই বলুক তিনি তা মনোযোগ সহকারে শুনতেন।
তরিকুল ইসলামের মরদেহ যশোর আসে ৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে। তাকে একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে এত সাধারণ মানুষ এসেছে যা অকল্পনীয়। সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে তরিকুল ভাই বাড়ি মুখো। জনস্রোত এত বেশি ছিল যা নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রুত বাড়ি থেকে পার্টি অফিসে না নিয়ে যশোর ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও ছিল জনতার উপচেপড়া ভিড়। যশোরের সাংবাদিকদের মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা হলেও এত মানুষ এখানে জমায়েত হয় না। তরিকুল ভাইকে একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে সব বয়সের সাধারণ মানুষ উন্মাদের মতন ছুটেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুল হাতে মানুষকে রাস্তার উপর অপেক্ষা করতে দেখেছি। রাজনৈতিক নেতার প্রতি সাধারণ মানুষের এত নীবিড় ভালোবাস বা ভক্তি শ্রদ্ধা তা তরিকুল ভাই জানাজায় যারা না এসেছে তার কোনো দিন বুঝবে না। যে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সাথে তরিকুল ইসলামের কত গভীর ছিল নাড়ির টান। অনেক বয়স্ক অচল মানুষকেও আমি জানাজায় উপস্থিত থেকে কাঁদতে দেখিছি। আমার সাংবাদিকতার বয়স সব মিলিয়ে ৩৫-৩৬ বছর পর হতে চলল, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল, ঠিক তেমনি যশোরের মতো ছোট শহরে সব বয়সের নারী-পুরুষ যে শদ্ধা জানাল জননেতা তরিকুল ইসলামকে তা ইতিহাস হয়ে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই আজ হৃদয় থেকে উচ্চারিত হচ্ছে তরিকুল ইসলাম তুমি ক্ষণজন্মা জননেতা, লিডার তোমায় স্যালুট জানাই।
লেখক : স্টাফ করেসপনডেন্ট, এনটিভি